শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ঐতিহ্যের তীর্থভূমি কুমিল্লা

অনিন্দ্য সুন্দর সাগরকন্যা পড়–ন আগামী শুক্রবার

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম


হৈচৈ আনন্দ উল্লাস আর সবুজ নীলিমার মাখামাখি অরণ্যে ঘুরে বেড়ানোর প্রিয় ঋতু শীত। রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কাছাকাছি বা মধ্যভাগের পর্যটনের অপার সম্ভাবনার জেলা কুমিল্লা।

একটি অন্যরকম দিন কাটানোর জন্য গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের প্রাচীন জেলা কুমিল্লায় অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এক কথায় অসংখ্য প্রাকৃতিক ও প্রতœসম্পদ নিদর্শনসমৃদ্ধ নয়নাভিরাম অপরূপ দৃশ্যের সমাহারে বিস্তৃত কুমিল্লায় মাত্র একদিনেই ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ ভ্রমণপিপাসু ও ঐতিহ্যপ্রেমীদের এনে দেবে পরম প্রশান্তি। কেননা অল্প সময়ে অবসর যাপনের এমন চমৎকার জনপদ পাওয়া দুষ্কর।

খাদি কাপড় ও রসমালাইয়ের জন্য সারা বিশ্বে বিখ্যাত এই শহরটি। শিক্ষা ও সংস্কৃতির পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত কুমিল্লা জেলায় রয়েছে হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য এবং হাজারো ঐতিহাসিক নিদর্শন। ঢাকা থেকে কুমিল্লা যাওয়ার জন্য বাস এবং ট্রেন এই দুটিই ব্যবহার করা যায়। বাসের মধ্যে এশিয়া লাইন, রয়েলকোচ, প্রিন্স, তিশা এবং এশিয়া এয়ারকন রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকেও বাস-ট্রেনের আসার সুযোগ রয়েছে। বাসে আসলে মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ি রুটে নেমে সিএনজি, অটোরিকশাযোগে যাওয়া যাবে আনন্দবিহার, শালবন ও ময়নামতি জাদুঘরে।
আনন্দবিহারে দেখা যাবে সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতকের প্রাচীন বৌদ্ধ সংস্কৃতির অসাধারণ নিদর্শন। সাথেই ময়নামতি জাদুঘর। যেখানে রয়েছে বৌদ্ধ যুগের ব্রোঞ্জ ও পাথরের ছোট বড় অনেক মূর্তি। এছাড়া রয়েছে প্রাচীন শিলালিপি, পত্রলিপি, স্বর্ণ-রৌপ্যমুদ্রা, মধ্যযুগের তৈজসপত্র, ব্রোঞ্জ-তামা-পোড়ামাটির ফলক এবং প্রাচীন হস্তলিপির পান্ডলিপি। জাদুঘরের উল্টোদিকেই বনবিভাগের সবুজে গাছগাছালি ঘেরা শালবন। কাছেই রয়েছে পাহাড়ের চূড়ায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। আবার নয়নাভিরাম অপরূপ দৃশ্যের বার্ডে যাওয়ার পথে দেখা যাবে রূপবান মুড়া, চারপত্রমুড়া, কুটিলামুড়া, ইটাখোলা মুড়া। বিশাল এলাকা জুড়ে বার্ডে রয়েছে দুর্লভ গাছগাছালি। ভেতরে পাহাড়ের চূড়ায় নীলাচল। আবার কোটবাড়ি এলাকায় রয়েছে বেশকটি নান্দনিক পার্ক ও পিকনিক স্পট।

ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় গেলে ঘুরাঘুরি করা যাবে সেনানিবাসের ভেতরে রূপসাগর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাধিস্থল ওয়্যারসিমেট্রি, ময়নামতি ঢিবি, রানীর বাংলোতে। আবার অপূর্ব প্রাকৃতিক ঘেরা সবুজ বৃক্ষবেষ্টিত লালমাটির লালমাই পাহাড় ও ছোটবড় টিলা এবং পাহাড়ের চূড়ায় চন্ডিমূড়া মন্দির দেখা যাবে পদুয়ারবাজার বিশ্বরোডে নেমে বরুড়া রুটে গেলে।

সবশেষে শহরের ভেতরে মোগলটুলিতে মোগল আমলের ঐতিহাসিক শাহসুজা মসজিদ দেখা যাবে। শহরের উপকন্ঠে রয়েছে রাজা ধর্মপালের নামানুসারে বিশাল দীঘি ধর্মসাগর। পাশেই রয়েছে রানীরকুঠির। শহরের কান্দিরপাড়ে স্থাপিত ইংল্যান্ড রানী ভিক্টোরিয়ার নামানুসারে ১৮৯৯ সালে নির্মিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ও রাজা বীরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুর প্রতিষ্ঠিত টাউনহল ও পাঠাগার। কুমিল্লা নগরীর শিক্ষাবোর্ড সড়কের ঈশ্বর পাঠশালায় গেলে দেখা যাবে বিভিন্ন ধরণের ৩০ হাজার বই ও আট হাজার প্রাচীন পুঁথির রামমালা গ্রন্থাগার। শহরের চর্থায় রয়েছে উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ শচীনদেব বর্মনের ঐতিহাসিক রাজবাড়ি।

শহর পেরিয়ে পূর্বপ্রান্তে গেলে জগন্নাথ মন্দির ও ভারত সীমান্ত ঘেঁষে বিবিরবাজার স্থলবন্দর। এ স্থলবন্দর হয়ে বেড়ানো যাবে গোমতী নদীর পাড়ে। এসব ছাড়াও শহরে জাতীয় কবি নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো ঘুরে দেখা যাবে।

একদিনের ভ্রমণযাত্রায় কুমিল্লার এসব দর্শনীয় স্থানের সবকটিই অল্প অল্প সময় হাতে নিয়ে বেড়ানো যাবে। ব্যক্তিগত পরিবহন থাকলে সুবিধা মিলবে বেশি। ওইসব দর্শনীয় স্থানে সারাদিনের ঘুরাঘুরির পর শহরের মনোহরপুরে মাতৃভান্ডারে মিলবে কুমিল্লার বিখ্যাত রসমালাই। আর শহরের মনোহরপুর, কান্দিরপাড় ও রামঘাট এলাকায় পাওয়া যাবে খাদি কাপড়ের বিভিন্ন পণ্য। দূরের জেলা থেকে আসলে রাতযাপনের জন্য কুমিল্লা শহরেই রয়েছে উন্নতমানের আবাসিক হোটেল। কোটবাড়ি, ক্যান্টনমেন্টে রয়েছে উন্নতমানের বিভিন্ন খাবার হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট। তাছাড়া কুমিল্লা শহরেও অনেক ভালো ও উন্নতমানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে।

বছরের এ সময়টি ঘুরে আসলেই দেশি-বিদেশি পর্যটক, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাসফর এবং এলাকা বা সংগঠন কেন্দ্রীক ভ্রমণপিপাসু ও ঐতিহ্যপ্রেমীদের ঢল নামে কুমিল্লার দর্শনীয় স্থানগুলোতে। তাই শহর বা নগরের ক্লান্তিকর ও কোলাহলপূর্ণ জীবন থেকে কিছুটা অবসাদ পেতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের অদূরে অবস্থিত ইতিহাস ঐতিহ্যের জেলা কুমিল্লা হতে পারে অবসর বিনোদনের আরেক ঠিকানা। যেখানে বাস্তবতার নিষ্ঠুরতা থেকে একদ- আনন্দের প্রতিটি মুহূর্ত বন্দি থাকবে ক্যামেরার ফ্রেমে। যে ফ্রেমে ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমীদের ছবির পেছনে থাকবে কুমিল্লার ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানগুলো।

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন