বগুড়া থেকে মাহফুজ মন্ডল : বগুড়ার যন্ত্র বিজ্ঞানী আমির হোসেন তার নিজস্ব আর্টি ফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সাইনটিস্ট টেকনোলজি ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিমভাবে মানুষের হাত ও পা তৈরীর কাজ শুরু করেছেন। শুক্রবার সকাল ১০টায় তিনি এক ব্যক্তির পা সংযোজনের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু করেন। তাঁর লক্ষ্য স্বল্প খরচে খুব সহজেই যেকোন বয়সী পুরুষ ও নারীর শরীরে তার হারানো হাত ও পায়ের স্থলে কৃত্রিমভাবে তৈরী হাত-পা সংযোজনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেয়া।
যন্ত্র বিজ্ঞানী আমির হোসেনের বাসা বগুড়া শহরের কাটনারপাড়ার টিকাদার লেনে। ১৮৮০ সালে দাদার কামারশালা থেকে বাবা আব্দুল জোব্বার ধলু ১৯৪০ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
আমির হোসেন শিক্ষা জীবনে ম্যাকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যালে ডিপ্লোমা এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃক রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ। লেখা পড়ার ফাঁকে ফাঁকে দুই ঘণ্টা করে কাজ শেখা বাধ্যতামূলক ছিল আমিরের। এভাবে বাবার ওয়ার্কসপে কাজ শিখেছেন আমির হোসেন। কাজ শেখার ব্যস্ততার কারনে লেখা পড়ায় আর এগুতে পারেননি তিনি। বাবার মৃত্যুর পর কারখানার দায়িত্ব পড়ে তার ওপর। তখন থেকে শুরু হয় গবেষণা। তাঁর এ গবেষণা কর্ম সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে সুনাম কুড়িয়ে নেন আমির হোসেন। তিনি তিন ডজন মেশিন উদ্ভাবন করেছেন। সর্বশেষ তিনি তার ল্যাবরেটরীতে কৃত্রিম পা ও হাত তৈরী করেছেন। তার উদ্দেশ্য অল্প খরচে কৃত্রিম হাত ও পা সংযোজনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেয়া।
আমির হোসেন শুক্রবার অসিত কুমার মন্ডল নামের এক ব্যক্তির হারানো পায়ের স্থলে কৃত্রিম পা সংযোজনের কাজ শুরু করেন। তিনি ২০০৩ সালে এক দুর্ঘটনায় তার ডান পা হারান। এরপর থেকে তিনি ক্র্যাসারের সাহায্যে চলাফেরা করছেন। আগামী দেড় থেকে দু’মাসের মধ্যে কৃত্রিম পা সংযোজনের কাজ শেষ হলে তিনি অনেকটা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবেন বলে জানান আমির হোসেন। তিনি আরো জানান, আমার মরহুম মাতা ও পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত মরিয়ম আব্দুল জব্বার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ১০ জন পা হারানো ব্যক্তির পায়ে কৃত্রিম পা ফ্রি সংযোজন করে দেয়া হবে। এ ছাড়া পরবর্তীতে স্বল্প খরচে এ কাজ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে তরুণ এই বিজ্ঞানী। টাকার অভাবে অনেক পঙ্গু মানুষ যারা বিদেশ থেকে আমদানিকৃত দামী কৃত্রিম পা ও হাত সংযোজন করতে পারেন না তাদের কে তিনি সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন।
তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় অনেকে হাত ও পা হারান। বিশেষ করে সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বহু মানুষ পঙ্গ হয়। তখন থেকে আমি এ কাজের চিন্তা করি। তাদের কথা চিন্তা করে গত তিন মাস আগে কাজ শুরু করেছি। এ পর্যন্ত কৃত্রিম পা সংযোজনের জন্য ১০টি ডাইস তৈরী করেছি। এ ছাড়া অন্যান্য যন্ত্রাংশ তৈরী করছি। আগামী দু’মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কৃত্রিম পা সংযোজন করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে দু’জনের মধ্যে পরীক্ষা চালিয়ে সফল হয়েছি। তাদের হাঁটুর উপরে কেটে ফেলা হয়েছে। এদের একজন দোকান কর্মচারী ও অন্যজন বগুড়া আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অফিসের কর্মকর্তা। আমির হোসেন তাদের পা সংযোজনের আশ্বাস দিলে তারা আনন্দে আত্মহারা।
এ খবরে পা হারানো অসিত কুমার বলেন, আমি অর্থাভাবে বিদেশে গিয়ে কৃত্রিম পা সংযোজন করতে পারছি না। যদি বগুড়াতেই এটা সম্ভব হয় তাহলে আমি অনেক উপকৃত হবো। এ ছাড়া অনেকেই এ সুযোগ পাবে।
তিনি জানান, শুধু বাংলাদেশে নয় ভারতেও এ ধরনের ল্যাবরেটরী নেই যেখানে কৃত্রিম পা ও হাত সংযোজন করা যায়। এ ব্যবস্থা রয়েছে চীন, জার্মান, আমেরিকাসহ উন্নত রাষ্ট্রে। কৃত্রিম পা ও হাত তৈরীর অন্যতম উপকরণ কার্বন ফাইবার প্লেট। আমি বিদেশ থেকে এ উপকরণ আমদানিতে শুল্ক মুক্ত সুবিধা চাই। তাহলে আরো সহজ হবে। তবে দেশীয় উপাদানে তৈরীতে খরচ বেশী হবে।
আমির হোসেন আরো জানান, সরকার আমাকে সহযোগিতা করলে একটি পূর্ণাঙ্গ ল্যাবরেটরী বা হাসপাতাল তৈরী করে দেশেই কৃত্রিম পা ও হাত সংযোজনের ব্যবস্থা করতে পারবো। এতে দেশের অসংখ্য মানুষ স্বল্প খরচে কৃত্রিম পা ও হাত সংযোজনের সুযোগ পাবেন। নইলে বিদেশে গিয়ে ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ করে অনেকের পক্ষে কৃত্রিম পা ও হাত সংযোজন সম্ভব হয় না। ফলে তারা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না।
যন্ত্র বিজ্ঞানীর হাত ও পা এর ফাংশনের কাজ শেষ হলে প্রতি মাসে ১০টি করে তৈরী করে বিনা মূল্যে তিনি সেটিং করে দিবেন এবং বিজ্ঞানীর ইচ্ছা এই ল্যাবটরির পার্শ্বে পূর্ণাঙ্গ কৃত্রিম হাত ও পা সংযোজন করতে চান। তিনি সেই সাথে প্রতিটি জেলার সরকারি হাসপাতালে ১টি করে শাখা বা বিভাগ খোলার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন