স্টাফ রিপোর্টার : উৎপাদন মূল্য কমে এলেও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেন, সম্প্রতি দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাসের ফলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ৬ টাকা ২৭ পয়সা থেকে কমে ৫ টাকা ৬০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। কিন্তু প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বাল্ক বিষয়ক মূল্য ৪ টাকা ৯০ পয়সা। জ্বালানি খরচ কিছুটা হ্রাস পেলেও প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন মূল্য বিক্রয় মূল্য অপেক্ষা এখনো গড়ে ৭০ পয়সা বেশি। এই অর্থ সরকার সাধারণত বাজেটারি সাপোর্ট হিসেবে এ খাতে দেয়। যেহেতু বাল্ক বিক্রয় মূল্য বিদ্যুতে গড় উৎপাদন ব্যয় হতে কম সেহেতু সরকারের বিদ্যুতের মূল্য কমানোর বিষয়ে আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই।
গতকাল রোববার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বতন্ত্র সদস্য মো: রুস্তম আলী ফরাজীর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সরকারি দলের সদস্য গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলনের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিদ্যুৎ ঘাটতি রোধ করতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনার আওতায় ২০২১ সালে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালে ৪০ হাজার মেগাওয়াট ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়াও মোট সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২০২১ সালের মধ্যে ১৯ হাজার সার্কিট কিলোমিটারে উন্নীত করার পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সব অবিদ্যুতায়িত গ্রামগুলোয় পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছানোর লক্ষ্যে আরো ১ লাখ ৫০ হাজার কিলোমিটার নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণের মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
নসরুল হামিদ বলেন, জনসাধারণের মধ্যে বিদ্যুতের অপচয় রোধ অথবা বিদ্যুৎ চুরি সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা এবং লিফলেট বিতরণ, মোটিভেশনের মাধ্যমে গ্রাহক উদ্বুদ্ধকরণ সভা পরিচালনা করা, সতর্ক বার্তা প্রচার অব্যাহত রাখা, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধের ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করা, অপরাধ বিবেচনা করে আর্থিক জরিমানা অথবা ক্ষতিপূরণ আদায় করা হচ্ছে।
চাহিদার তুলনায় গ্যাসের উৎপাদন কম
জাতীয় পার্টির সালমা ইসলামের টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, বর্তমানে চাহিদার তুলনায় গ্যাসের উৎপাদন কিছুটা কম। বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্যাস নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করলে পরিস্থিতি আরো জটিল হবে। তাই বিদ্যমান অবস্থায় শিল্প খাতে সীমিত হারে গ্যাস সংযোগ প্রদান করা হচ্ছে। তবে চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে গ্যাসের উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পেলেও এখনো দেশে বিদ্যমান গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে দেশে গ্যাস চাহিদার পরিমাণ দৈনিক ৩ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। এর বিপরীতে দৈনিক গড়ে প্রায় ২ হাজার ৭৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। তাই গ্যাসের বিদ্যমান নতুন এলাকায় নেটওয়ার্ক বর্ধিত না করে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত কমিটির মাধ্যমে শিল্প খাতে সীমিত হারে গ্যাস সংযোগ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া শুধুমাত্র সরকার ঘোষিত বিশেষ ইকোনমিক জোনগুলো গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
মেডিটেশনের কর প্রত্যাহারে দাবি
মেডিটেশনের ওপর থেকে কর প্রত্যাহারের জন্য সমালোচনার ঝড় চলছে মিডিয়ার বিভিন্ন অঙ্গনে। এমনকি জাতীয় সংসদে বিভিন্ন এলাকার সংসদ সদস্যরা তাদের বক্তৃতায় মেডিটেশনের ওপর থেকে কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করছেন।
গতকাল এমপি মো: আবদুর রহমান বলেন, আজকে মেডিটেশনের ওপর কর আরোপ করা হয়েছে। এই মেডিটেশনের ওপর কর আরোপ প্রত্যাহারের জন্য আমি প্রস্তাব করছি।
মহিলা আসন-২২ এর বেগম ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরা বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে মেডিটেশনের ওপর ভ্যাট ধরা হয়নি। মেডিটেশন যেহেতু কোনো ভোগ্যপণ্য নয়, চিকিৎসারই পরিপূরক, তাই মেডিটেশনের ওপর কর সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহারের আমি সুপারিশ জানাচ্ছি।
সুনামগঞ্জ-৪ এর সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, সারা বিশ্বে মেডিটেশন একটি চিকিৎসাসেবার অংশ হিসেবে পরিগণিত হয় এবং এটি কোনো ভোগ্যপণ্য নয়, এটি চিকিৎসাসেবারও পরিপূরক এবং চিকিৎসায় কোনো ভ্যাট নেয়া হয় না। ২০১৪ অর্থবছরে মাননীয় অর্থমন্ত্রী এই মেডিডেশন সেবার ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব এই সংসদে করে পাস করিয়েছিলেন। কিন্তু এবার মেডিটেশনের ওপর আবার ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছেন। আমাদের অর্থমন্ত্রী যেভাবে পূর্বে এটি প্রত্যাহার করেছিলেন; এবারের বাজেটেও স্থায়ীভাবে সেটি প্রত্যাহার করবেন।
পঞ্চগড়-১ এর সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান বলেন, মেডিটেশনের মাধ্যমে মানুষের মনোরোগ থেকে শুরু করে শারীরিক রোগের চিকিৎসাও করা হয়। সেই মেডিটেশনের ওপর করারোপ করা হয়েছে। অল্প কিছু টাকা হয়তো গভর্নমেন্ট পাবে। গোটা ভারতে মেডিটেশন একটা শিল্প। সেখানেও কিন্তু কর নেই। সে কারণেই মেডিটেশনের কর আমি তুলে দেয়ার প্রস্তাব করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন