নূরুল ইসলাম : ঢাকা থেকে যাত্রা করে ঘড়ির কাঁটা ধরে ৫ ঘণ্টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম পৌঁছে বিলাসবহুল আন্তঃনগর ট্রেন সোনার বাংলা এক্সপ্রেস। বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের পরও প্রথম যাত্রায় ট্রেনটিতে যাত্রী ছিল মাত্র ১১৭ জন। ৭৪৬ আসনের মধ্যে ৬২৯টি আসনই ছিল খালি। রেলওয়ে কর্মকর্তাদের দাবি, নতুন বলে প্রথম দিন যাত্রী কম ছিল। শুধু অভিজ্ঞতা অর্জন এবং ইতিহাসের অংশ হওয়ার জন্য গতকাল রোববার বেশ কয়েকজন যাত্রী সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে ভ্রমণ করেছেন। তাদের কয়েকজন জানান, ট্রেনে পর্যটন কর্পোরেশন পরিবেশিত খাবার নিয়ে অভিযোগ ছিল বেশিরভাগ যাত্রীর।
তাদের অভিযোগ, টিকিটের সাথে খাবার বাবদ ১৯৫ টাকা নেয়া হলেও, যে খাবার পরিবেশন করা হয়েছে তার দাম ৬০ টাকারও বেশি হবে না। এ ছাড়া বিলাসবহুল ট্রেনের প্রথম ভ্রমণকালে বেশ কিছু অনিয়ম তাদের চোখে ধরা পড়েছে, যা কিনা ২-৪ মাস পরে হলেও মেনে নেয়া যেত। অন্তত প্রথম দিনের যাত্রায় এসব অনিয়ম মেনে নেয়া যায় না। প্রথম যাত্রায় সোনার বাংলা এক্সপ্রেস গতকাল সকাল ৭টায় ছেড়ে যায়। চালক (লোকোমাস্টার) আনোয়ার পাশা জানান, ট্রেনটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭২ কিলোমিটার। ইন্দোনেশিয়ার ইনকার কোচ নিয়ে নতুন এই ট্রেন নিয়ে চট্টগ্রাম যেতে পেরে ভালোই লাগছে বলে জানান তিনি। শুধু অভিজ্ঞতা ও ইতিহাসের অংশ হওয়ার আশায় সোনার বাংলার যাত্রী হয়েছিলেন ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের প্রভাষক রাসেল সুমন। তিনি জানান, পথিমধ্যে বিভিন্ন রেল স্টেশনে শত শত উৎসুক মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে ছিল নতুন এই ট্রেনটি দেখার জন্য। ট্রেনটি স্টেশন অতিক্রম করার সময় তারা হাত নেড়ে যাত্রীদের সম্ভাষণ জানান। আরেক যাত্রী জয় আরেফিন বলেন, ট্রেনটিতে ভ্রমণ আরামদায়ক, তবে টিকিটের দাম তুলনামূলক বেশি নেয়া হয়েছে। খাবারের বিল বাবদ টিকিটের সাথে ১৯৫ টাকা জোর করে নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে আরেক যাত্রী ইসমাইল হোসেন বলেন, এই টাকার বিনিময়ে দেয়া হয়েছে এক পিস কেক, দুটো ছোট্ট খেজুর, ১টা জুস ও একটা আপেল। সব মিলে এই খাবারের দাম ৬০ টাকা বেশি হবে না। খাবারের সাথে পানি না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আরেক যাত্রী বলেন, বিলাসবহুল ভ্রমণের নামে এই ট্রেনের রানিং টাইম বাড়িয়ে যাত্রীদের কাছে থেকে জোর করে বেশি ভাড়া নেয়া হয়েছে। সোহেল নামে আরেক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, নতুন কোচ হলেও এসি কোচে এসির বাতাস কোচকে ঠা-া করার মতো বলে মনে হয়নি। অত্যাধুনিক টয়লেটে হ্যান্ডওয়াশ জার থাকলেও সেখানে লিকুইড সাবান ভরা হয় নি। এ ছাড়া টয়লেটেও কোনো সাবানও ছিল না। এয়ার ফ্রেশনার থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে ছিল না। বেশিরভাগ টয়লেটে তোয়ালে ছিল না। টিস্যুও ছিল না। ওই যাত্রী বলেন, এতো ঘটা করে যে ট্রেনের উদ্বোধন হলো সেই ট্রেনের প্রথম যাত্রায় এতোটা অনিয়ম মেনে নেয়া যায় না। এটা ২-৪ মাস পরে হলে মেনে নেয়া যেত। সোহেলের সঙ্গী আরেক যাত্রী বলেন, মহানগর প্রভাতীর মতো ট্রেনের টয়লেটে টিস্যু থাকে সেখানে সোনার বাংলার টয়লেটে টিস্যু না থাকা দুঃখজনক।
গতকাল ট্রেনে পরিবেশিত খাবার ও বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে রেলওয়ের ফেসবুকগুলোতে ব্যাপক সমালোচনা লক্ষ করা গেছে। সোনার বাংলার রানিং টাইম নিয়ে সমালোচনা করে অনেরকেই বলেছেন, সড়ক পথের বড় বড় বাস কোম্পানির মালিকের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্যই সোনার বাংলার রানিং টাইম ৫ ঘণ্টা ৪০ মিনিট করা হয়েছে। খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে অনেকেই এর নেপথ্যে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পর্যটন কর্পোরেশনকে খাবার সরবরাহের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দুর্নীতির দায় সারতে তারা ১৯৫ টাকার বিপরীতে ৬০ টাকার খাবার পরিবেশন করার সাহস করেছে। রেলওয়ের ফেসবুকে একজন যাত্রী কটাক্ষ করে লিখেছেন, ‘সোনার বাংলা এক্সপ্রেস দেশের একমাত্র বিলাসবহুল ট্রেন। সুতরাং এখানে একটু বিলাসিতা করা যেতেই পারে। ট্রেনের এক্সক্লুসিভিটিও তো রক্ষা করতে হবে। রাম শ্যাম যদু মধুকে তো এই ট্রেনে উঠে অত্যাধুনিক কোচগুলোর বারোটা বাজাতে দেয়া যায় না। এমন চিন্তা থেকেই মনে হয় খাবারের এই দাম রাখা হয়েছে। যারা গুলশান-বনানীতে হরহামেশা ১০০ টাকার খাবার ৫০০ টাকা দিয়ে খেয়ে থাকেন, তাদের নিশ্চয় রেলের খাবারের এই দাম গায়ে লাগবে না। তাদেরকে নিয়েই চলুক এই ট্রেন। আমাদের জন্য সুবর্ণই ভালো।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন