রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আজ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকার পর ১৯৭২ সালের এইদিনে মুক্তি পেয়ে নিজ দেশে পা রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ-বাতাস।

সেদিন স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন বঙ্গবন্ধু। আনন্দ-বেদনার অশ্রুধারা নামলো তার দু’চোখ বেয়ে। জনগণনন্দিত শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তার ঐতিহাসিক ধ্রæপদি বক্তৃতায় বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারবো কীনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’

যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সদ্য স্বাধীন বাঙালি জাতির কাছে ছিল একটি বড় প্রেরণা। তাঁর এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করা হয়েছিল ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে’। দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে বির্জয় অর্জনের পর বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে বাঙালি জাতি যখন কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখি তখন পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ নিজ বাসা ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার থেকে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সেইরাতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামকে ধুলিস্যাৎ করে দিতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামক গণহত্যা চালায় নিরস্ত্র জনগণের ওপর। তবে গ্রেফতারের আগমুহূর্তেও কোনোধরণের আতঙ্ক ছুঁতে পারেনি শেখ মুজিবর রহমানকে। দূরদর্শিতার সাথে তিনি তার বিশ্বাসভাজনদের সকল দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে যান।

তিনি যখন কারাগারে বন্দি ছিলেন, সেসময় তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার কথা জানানো হয়, তাতেও বিন্দুমাত্র ভয় পাননি এই অকুতোভয় এই নেতা। কারণ তিনি জানতেন তার মৃত্যু বাঙালিদের স্বাধীনতা এনে দিতে আরো বেশি অনুপ্রাণিত করবে। তৎকালীন তৎকালীন স্বৈরশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবকে হত্যার জন্য একটা আদেশ জারি করেন। কিন্তু মুজিব যে কারাগারে বন্দি ছিলেন সেখানকার জেলার ওই আদেশ না মেনে মুজিবকে অন্যত্র সরানোর চেষ্টা করেন।

১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি মুক্তির পরপরই তিনি বাংলাদেশে ছুটে আসতে চান, ভারতের সাথে সমস্যা থাকায় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলি ভুট্টোকে তেহরান বা অন্যকোনো এয়ারওয়েজ বেছে নিতে বললে তিনি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে আসার সিদ্ধান্ত নেন। লন্ডনে প্রবেশের পর বিবিসিতে তিনি বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেন। তিনি যখন ভরাট কণ্ঠে তার সুস্থতার কথা জানান, ঠিক সেই মুহূর্তটিতে লাখ লাখ বাঙালি আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। তখনও যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাত করেন। এসময় ব্রিটিশ বিরোধীদলীয় নেতা হ্যারোল্ড উইলসনও তাকে স্বাগত জানাতে সাক্ষাত করেন।

এরপর দিল্লিতে পৌঁছান অবিস্মরণীয় এই নেতা। ভারতের প্রেসিডেন্ট ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র দেশবাসী তাকে উষ্ণ সংবর্ধনা দেন। এসময় তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অনন্য ভূমিকার জন্য ভারতবাসী ও তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

এরপর আসে সেই কাক্সিক্ষত মুহূর্ত। ১০ জানুয়ারি দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে তিনি পা রাখেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত লাখো লাখো বাঙালি সেই মুহূর্তে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন তাদের প্রিয় নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে ফিরে পেয়ে। পুরো দেশই তাকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত ছিল, তার কিছুটা চিত্র ধরা পড়ে তেজগাঁও বিমানবন্দরে। জয়বাংলা ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠা বিমানবন্দর যেন বাংলার আকাশ বাতাসকেই প্রতিনিধিত্ব করছিল। পাঁচলাখেরও বেশি মানুষ সেই মুহূর্তে অবিস্মরণীয় এই নেতাকে গ্রহণ করতে অংশ নিয়েছিলেন। মহান এই নেতাকে একটু ছুঁয়ে দেয়ার জন্য সর্বস্তরের জনসাধারণের মধ্যে এক ধরণের ব্যাকুলতা কাজ করছিল। তাকে বহনকারী ট্রাকটিও সেসময় ফুলে ফুলে ভরে গিয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বরাবরের মতো এবারও নানা কর্মসূচি আয়োজন করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছেÑ আজ সকাল সাড়ে ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে সংগঠনের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন। দুপুর ৩টায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ক্ষণগণনা কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণ।

এছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং সংগঠনের সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির অনুরূপ কর্মসূচির আয়োজন করবে।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
সাঈদ, মুক্তিযোদ্ধা ১০ জানুয়ারি, ২০২০, ৫:৪৫ এএম says : 0
" Father of the Nation came back this day after 9 months' life in Pakistan jail and সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দেন, ‘রক্ত দিয়ে হলেও আমি বাঙালি জাতির এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করে যাব।’ কথা রেখেছেন জাতির পিতা। হিংস্র পাক হানাদাররা যার গায়ে আঁচড় দেওয়ারও সাহস দেখাতে পারেনি, স্বাধীন দেশে বাঙালি নামক একশ্রেণির কুলাঙ্গার-বিশ্বাসঘাতকের হাতে তাকে জীবন দিতে হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে বঙ্গবন্ধু তার কথা রেখে গেছেন। On that we saw his face and eyes and those were showing his love for the country and for the people. I was very lucky to attend the guard of honour for him as an airman of Bangladesh Air Force. He shook hands of so many of us. We saw tears on his eyes. That patriot was killed by some traitors. And where are those culprits today?
Total Reply(0)
সাঈদ, মুক্তিযোদ্ধা ১০ জানুয়ারি, ২০২০, ৫:৪৭ এএম says : 0
" Father of the Nation came back this day after 9 months' life in Pakistan jail and সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দেন, ‘রক্ত দিয়ে হলেও আমি বাঙালি জাতির এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করে যাব।’ কথা রেখেছেন জাতির পিতা। হিংস্র পাক হানাদাররা যার গায়ে আঁচড় দেওয়ারও সাহস দেখাতে পারেনি, স্বাধীন দেশে বাঙালি নামক একশ্রেণির কুলাঙ্গার-বিশ্বাসঘাতকের হাতে তাকে জীবন দিতে হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে বঙ্গবন্ধু তার কথা রেখে গেছেন। On that we saw his face and eyes and those were showing his love for the country and for the people. I was very lucky to attend the guard of honour for him as an airman of Bangladesh Air Force. He shook hands of so many of us. We saw tears on his eyes. That patriot was killed by some traitors. And where are those culprits today?
Total Reply(0)
সাঈদ, মুক্তিযোদ্ধা ১০ জানুয়ারি, ২০২০, ৮:৩৮ এএম says : 0
This day Bongobondu was given guard of honor and I was very lucky to be one of them as an airman.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন