রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিশেষ স্টিমার সার্ভিস জনতার উপকারে আসছে না বিআইডব্লিউটিসির উদ্যোগ

প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে রাজধানী থেকে দক্ষিণাঞ্চলে বিআইডব্লিউটিসি যে কয়দিন বিশেষে স্টিমার সার্ভিস পরিচালনা করছে, সময়সূচি যাত্রীবান্ধব না হওয়ায় তা আমজনতার তেমন কোনো উপকারে আসছে না। আগামীকাল থেকে সংস্থাটি এ বিশেষ সার্ভিস পরিচালনা করবে। অপরদিকে বরিশাল নদী বন্দরে বাড়তি নৌযান পরিচালনের লক্ষ্যে বিআইডব্লিউটিএ প্রয়োজনীয় পন্টুনের ব্যবস্থা করতে পারেনি জেলা প্রশাসনের পরক্ষ বাধার মুখে। এমনকি ঈদের আগে-পরে বিআইডব্লিউটিসি’র নৌযানগুলো মূল টার্মিনাল থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে বরিশাল নদী বন্দর থেকে রাষ্ট্রীয় সংস্থার নৌযানে যাত্রীসংখ্যা হ্রাসসহ ভ্রমণকারী যাত্রীদের জন্য বাড়তি দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে।
উপরন্তু রাষ্ট্রীয় নৌ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানটি ঈদের পরে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মস্থলে ফেরার বিষয়ে এবারো যথারীতি উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে। তবে বেসরকারি নৌযান মালিকরা শুধু ঢাকার সাথে দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো নৌপথে শতাধিক যাত্রীবাহী নৌযান দিয়ে ৩ জুলাই থেকে প্রতিদিন ডবল ট্রিপে যাত্রী পরিবহন করবে। অবৈধ রোটেশন পদ্ধতি স্থগিত করে ১ ও ২ জুলাই রুট পারমিটধারী সবগুলো নৌযানই রাজধানী থেকে দক্ষিণাঞ্চলের রুটগুলোতে যাত্রী পরিবহন করবে। এমনকি ঈদের পরে ১৬ জুলাই পর্যন্ত বিশেষ সার্ভিসও পরিচালনা করতে যাচ্ছে। অপরদিকে পর্যাপ্ত উপকূলীয় নৌযান থাকা সত্ত্বেও বিআইডবিউটিসি চট্টগ্রামÑবরিশাল সার্ভিসটি এবারো পুনর্বহাল করছে না।
এবারের ঈদে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির অভ্যন্তরীণ নৌযান গত বছরের ৭টির স্থলে দুটি কম। এবার ৪টি প্যাডেল জাহাজের মধ্যে ‘পিএস টার্ন’ ঈদের মাত্র কিছুদিন আগে ভারী মেরামতে ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। ফলে তা ঈদের ভীড়ে যাত্রী পরিবহন করতে পারছে না। নৌযানটির সার্ভে মেয়াদ শেষ হওয়ার বছরাধিককাল পরেও তাতে যাত্রী পরিবহন করেছে রাষ্ট্রীয় নৌ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানটির বিবেকহীন কর্তারা। অপরদিকে ‘এমভি সেলা’ জাহাজটি বিক্রির জন্য নিলাম ডাকা হয়েছে। ফলে ঈদের আগে-পরে বরিশাল-চাঁদপুর রুটে বিশেষ সার্ভিসটিও এবার বন্ধ থাকছে। অথচ চট্টগাম অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক যাত্রী ট্রেনে চাঁদপুর পৌঁছে সেখান থেকে ঐ বিশেষ স্টিমারে বরিশালে পৌঁছাত। ঈদের পরেও কর্মস্থলমুখী বিপুল সংখ্যক যাত্রী ‘এমভি সেলা’তে করে বরিশাল থেকে চাঁদপুর হয়ে চট্টগ্রাম যাবার সুযোগ থাকত।
আগামীকাল শেষ কর্মদিবসের পরে রাজধানী থেকে দক্ষিণাঞ্চলে জন¯্রােত শুরু হবে। এবারের ঈদে অন্তত ৬০ লাখ মানুষ রাজধানী ছাড়বে বলে আশা করছে ওয়াকিবহাল মহল। এমনকি রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ সারা দেশ থেকে দক্ষিণাঞ্চলে আপনজনের সাথে ঈদ করতে ঘরে ফিরবে অন্তত ১৫ লাখ মানুষ। রাজধানী ও সন্নিহিত এলাকার ৮৫ ভাগ মানুষ আসছে নৌপথে। বেসরকারি শতাধিক রুট পারমিটধারী নৌযান ছাড়াও সড়ক পথেও বিপুল সংখ্যক মানুষের শ্রোত শুরুর হবে সড়ক পথে। যার মধ্যে শুধু ঢাকা-বরিশাল নৌপথেই চলবে বিশালাকায় ১৫টি যাত্রীবাহী নৌযান। ইতোমধ্যে ঈদের আগে সরকারী-বেসরকারী নৌযান ছাড়াও সড়ক পথের সব যানবাহনে টিকেট বিক্রী শেষ হয়ে গেছে । এখন চলছে ঈদ পরবর্তি কর্মস্থলে ফেরার টিকেট নিয়ে লড়াই।
বেসরকারী নৌযানগুলো যেমনি এবার বাড়তি নৌযান নিয়ে যাত্রী পরিবহনের প্রস্তুতি নিয়েছে, তেমনি, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় ভাড়াও বৃদ্ধি করছে। ডেক থেকে প্রথম শ্রেণী হয়ে ভিআইপি শ্রেণীতে ভাড়া বাড়ছে ৪০% থেকে ৬০% পর্যন্ত। অবশ্য এক্ষেত্রে বেসরকারী নৌযান মালিকদের দাবী তারা সরকার নির্ধারিত ভাড়াই আদায় করছেন। সারা বছর কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করলেও ঈদের সময় সরকার নির্ধারিত রেটে ভাড়া আদায় করেন।
বিআইডব্লিউটিসি এবার ঈদের আগে শুধুমাত্র ৩০ জুন ও ২ জুলাই নিয়মিত রকেট স্টিমারের সাথে ঢাকা-বরিশাল রুটে দুদিন বিশেষ নৌযান পরিচালনা করছে। এছাড়া ঢাকা-বরিশাল-ঝালকাঠী-হুলারহাট (পিরোজপুর) রুটে ঈদের আগে কয়েকটি বিশেষ সার্ভিস পরিচালনার কথা ঘোষণা করলেও তার সময়সূচী মোটেই যাত্রীবান্ধব হয়নি। ফলে বেসরকারী নৌযানগুলো যেখানে ছাদবোঝাই যাত্রী নিয়ে ঢাকা বন্দর ত্যাগ করবে, সেখানে সরকারী নৌ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানটির নৌযনগুলো সন্ধা ৬টায় ধারন ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ঢাকা বন্দর ত্যাগ করতে পারবে কিনা সে ব্যপারে সংশয় সন্দেহ রয়েছে ওয়াকিবাহাল মহলে। সংস্থাটির নিয়মিত রকেট স্টিমার সার্ভিস সন্ধা সাড়ে ৬টায় ঢাকা বন্দর ত্যাগ করার কথা থাকলেও বিশেষ স্টিমারগুলো সন্ধা ৬টায় ঢাকা ছাড়ার কথা ঘোষনা করা হয়েছে। অথচ ঐ সময়ে ঢাকার সদর ঘাটে কোন যাত্রীর পৌছা দুরুহ ব্যপার। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে বিআইডবিউটিসি’র বিশেষ ও নিয়মিত সব নৌযানই ধারন ক্ষমতার অর্ধেকের বেশী যাত্রী পায় না সদরঘাট থেকে। অথচ অনেক ঢাক ঢোল পিটিয়ে এসব নৌযান চলাচলের ঘোষনা দেয় সরকারী ঐ প্রতিষ্ঠঅনটি। তবে এসব নৌযানের প্রথম শ্রেণীর কেবিনগুলোর টিকেট সরকারী আমলা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অনেকটা প্রভাব খাটিয়ে দখল করেন। বিশেষ তদবির ছাড়া অনেক সাধারণ যাত্রী এক মাস আগে বুকিং দিয়েও কেবিন টিকিট পান না বলে অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে ঈদ পরবর্তী সময়ে কর্মস্থলমুখী লাখ লাখ মানুষের কাজে ফেরার ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি যাত্রী বান্ধব কোন ব্যবস্থা করেনি। অথচ এক্ষেত্রে নৌযানের সংকট নেই। শুধুমাত্র ১০জুলাই বরিশাল থেকে ‘পিএস লেপচা’ জাহাজটি চাঁদপুর হয়ে ঢাকায় একটি বিশেষ ট্রিপে যাত্রী পরিবহন করবে। এছাড়া ৮ ও ৯ জুলাই হুলারহাট থেকে বরিশাল হেয়ে ঢাকা দুটি বিশেষ সার্ভিস পরিচালনা করবে সংস্থাটি। অথচ ঈদের দিন ও তার পরের দিনও সংস্থাটি অনেকটা অপ্রয়োজনীয়ভাবে দুটি বড় মাপের নৌযান নিয়মিত রকেট সার্ভিসে পরিচালনা করছে। ঈদের দিন ও পরের দিন দক্ষিণাঞ্চলের তেমন কোনো যাত্রী কর্মস্থলে ফেরে না। অপরদিকে ঈদের পরের পুরো সপ্তাহটি জুড়েই যেখানে কর্মস্থলমুখী মানুষের ¯্রােত অব্যাহত থাকবে, সেখানে সরকারী নৌ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানটি কোনো বিশেষ সার্ভিস পরিচালনা করছে না। অথচ বেসরকারী নৌযান মালিকরা আগামী ১৬ জুলাই পর্যন্ত বরিশাল সহ দক্ষিরাঞ্চলের সবহুলো রুট থেকে ঢাকা পর্যন্ত প্রতিদিন ডবল ট্রিপে কর্মস্থলমুখী যাত্রী পরিবহন করবে।
এদিকে ৩টি নৌযান সচল থাকার পরেও বহু কাক্সিক্ষত চট্টগ্রাম-বরিশাল উপকূলীয় স্টিমার সার্ভিসটি পুনর্বহাল করছে না বিআইডব্লিউটিসি। অথচ এ লক্ষে আরো দুবছর আগে খোদ নৌ পরিবহন মন্ত্রীরও ঘোষনা রয়েছে। এরুটের জন্য ২টি পুরেনা নৌযান প্রায় ২০কোটি টাকা ব্যায়ে পূণর্বাশন সহ প্রায় ৩৫কোটি টাকা ব্যায়ে একটি নতুন নৌযান সংগ্রহের পরেও ২০১১-এর জুন থেকে বরিশাল-হাতিয়া-সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম রুটে উপকূলীয় যাত্রীবাহী নৌযানের চলাচল বন্ধ রয়েছে। পূণর্বাশনের নামে ‘এমভি আবদুল মতিন ও এমভি মনিরুল হক’ নৌযান দুটিতে পুরনো ইঞ্জিন সংযোজন সহ ব্যপক লুটপাট করা হয়েছে। ‘এমভি বার আউলীয়া’ নৌযানটি কোটি কোটি টাকা লোকশান দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে গুপ্তছড়া পর্যন্ত চালান হচ্ছে। অথচ দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম-বরিশাল রুটে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন বন্ধ।
এসব বিষয়ে গতকাল বিআইডব্লিউটিসির জিএম (বাণিজ্য) শাহদত আলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, ‘আমরা চেষ্টা করছি সার্বিকভাবে যাত্রীদের ভাল সেবা দিতে।’ ঈদের পরে বরিশাল অঞ্চল থেকে যাত্রী চাপ থাকলে প্রয়োজনে বিশেষ সার্ভিস সম্প্রসারণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
বরিশাল বন্দরে পন্টুনের সমস্যার বিষয়ে গতকাল বিআইডব্লিউটিএ’র সদস্যের (পরিচালন) সাথে আলাপ করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বরিশালের জেলা প্রশাসনের সাথে আলাপ-আলোচনা করে সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন