স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে মসজিদের মাইকে আজান দেয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল রাজধানীর ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে এক ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, আজকে দেশের কোনো মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। কিন্তু জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। আজকে মসজিদের মাইকে আজান পর্যন্ত কাউকে দিতে দেয়া হয় না। এর কী কারণ?
আমরা দেখেছি, মসজিদে আজান হবে, আমরা আজানের অপেক্ষায় বসে থাকি, আজান শুনে আমরা নামাজ পড়ব, মানুষ সেই অপেক্ষায় বসে থাকে। কিন্তু হাসিনার নিরাপত্তার ব্যাপারে নাকি মাইকে মসজিদে আজান দেয়া যাবে না। এ হলো অবস্থা। কাজেই দেশটা আমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছি?
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, হাসিনা এটা (মসজিদের আজান না দেয়া) মতলবটা কী তাই? সত্যি। নাকি এর পেছনে আরো কোনো উদ্দেশ্য আছে, কোনো নির্দেশ আছে যে বাংলাদেশে আজানটা শুধু মাইকে দেয়া যাবে না, এখন শুধুমাত্র মসজিদের মধ্যেই দেয়া হবেÑ এ অবস্থায় চলে গেছে। মুসলমান ছাড়াও হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরও ক্ষমতাসীনরা দখল করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েকদিন আগে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতিবাদ করেছে যে, তাদের বাড়ি-ঘর, জমি-জমা ও মন্দির ক্ষমতাসীনরা দখল করে নিয়েছে। তাদের ওপর অত্যাচার-জুলুম চলছে। প্রতিনিয়ত তাদের মেয়েরা অত্যাচারিত হচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে, তারা প্রতিবাদ পর্যন্ত করছে। কিন্তু কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। কেন? ছাত্রলীগের লোকজন এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদের ধরা হচ্ছে না।
সম্প্রতি সারাদেশে জঙ্গি অভিযানের নামে ‘সাঁড়াশি অভিযান’-এর সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, পবিত্র রমজান মাসে সাঁড়াশি অভিযান হলো, এটি কাদের বিরুদ্ধে? এই যে কতগুলো ঘটনা ঘটল, বিদেশী হত্যা হলো, এগুলো যারা ঘটিয়েছে তাদের একজন অপরাধীকেও তারা (সরকার) ধরতে পারেনি। কেন ধরতে পারেনি? এই লোকগুলো তাদের কিংবা তাদের সমর্থক কেউ ছিল, যার জন্য তাদের হয়ে কাজ করে, যার জন্য তাদের ধরা হয়নি। দেশ-বিদেশে দেখানোর জন্য ‘সাঁড়াশি অভিযান’-এর নামে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছেÑ অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সাঁড়াশি অভিযানে ১৫-১৬ হাজার লোক গ্রেফতার করা হয়েছে যার মধ্যে কোনো অপরাধী নেই। বিএনপির তিন হাজারের ওপরে নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছে। কাউকে এখন পর্যন্ত ছাড়া হয়নি। আমরা বলব, এই অভিযান বন্ধ করুন, এরকম এলোপাতাড়ি ধরা বন্ধ করুন। সত্যিকার অপরাধী যারা তাদেরকে ধরুন, আমরা আপনাদের সহযোগিতা করতে চাই। কিন্তু আপনারা (সরকার) অন্যায়ভাবে নিরীহ লোককে ধরে তাদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালাবেন, এটা হয় না। রমজান মাসে এই ‘সাঁড়াশি অভিযানে’র নামে পুলিশ গ্রেফতারবাণিজ্য করছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
তিনি বলেন, আজকে ন্যায়বিচার নেই, আইনের শাসন বলে কিছু নেই। দেশের মানুষ ন্যায়বিচার চায়, জুলুম-অত্যাচার বন্ধ চায়। কিন্তু হাসিনার অধীনে জুলুম-অত্যাচার, লুটপাট বন্ধ হবে না। দেশে অবাধে লুটপাট চলছে।
সাংবাদিক শফিক রেহমানের গ্রেফতারের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, শফিক রেহমান একজন সাংবাদিক, রাজনীতি করেন না, কোনো দলের সঙ্গে সেভাবে সম্পৃক্ত নন। আমাদের সঙ্গে একটু জানাশোনা আছে মোটামুটি। তার দোষটা কি? হাসিনা ছেলে জয় (সজীব ওয়াজেদ জয়) যে তিনশ’ মিলিয়ন প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে এবং এটা নিয়ে তদন্ত চলছে আমেরিকায়Ñ এই কাগজগুলো তার (শফিক রেহমান) কাছে ছিল, তার কাছে রেখেছিলেন। এই অপরাধে তাকে জেল খাটতে হচ্ছে। এই হলো বিচার। আমরা মনে করি, জয়কে এখানে আনা উচিত, তারও বিচার করা উচিত। না হলে ন্যায়বিচার হয় না দেশের এই অবস্থা থেকে উত্তরণে মহানগর বিএনপিকে সংগঠিত হওয়ার আহবান জানান বিএনপি নেত্রী।
ঢাকা মহানগর বিএনপির উদ্যোগে এই ইফতার মাহফিল হয়। এতে মহানগরীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের ৬ সহা¯্রাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন।
বক্তব্যের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল, মহানগর আহবায়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মহানগর যুগ্ম আহবায়ক আব্দুুল আউয়াল মিন্টু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মো: সাহাবুদ্দিন, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কাজী আবুল বাশার, শামসুল হুদা, নাসিমা আখতার কল্পনা, বজলুল বাসিত আনজু, ইউনুস মৃধাকে নিয়ে একই টেবিলে বসে ইফতার করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
এছাড়া ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপিকা শাহিদা রফিক, বিএনপির ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, খায়রুল কবীর খোকন, আসাদুজ্জামান রিপন, আব্দুস সালাম আজাদ, সাখাওয়াত হোসেন জীবন, মাহবুবুল হক নান্নু, শহীদুল ইসলাম বাবুল, ২০ দলীয় জোটের লেবার পার্টির হামদুল্লাহ আল মেহেদি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা শওকত আমীন, কল্যাণ পার্টির শাহিদুর রহমান তামান্না, জাগপার আসাদুর রহমান খান, ন্যাপ-ভাসানী রুহুল আমিন, ন্যাপের সৈয়দ শাহজাহান সাজু, সাহিদুন্নবী ডাবলু, খেলাফত মজলিশের গোলাম আজগর প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন