শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নদীভাঙনে সর্বস্বান্ত হচ্ছে মানুষ

প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : দেশের নদ-নদীগুলোতে পানি বাড়ার সাথে সাথে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীভাঙনে মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে। এই ভাঙন আরও তীব্র হবে পানি নেমে যাওয়ার সময়। ভাঙন নিয়ে নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। নদীভাঙন প্রতিরোধে এ বছর জরুরি কাজের বরাদ্দ গতবারের তুলনায় কমে গেছে। অথচ ভাঙনপ্রবণ এলাকার সংখ্যা বেড়েছে। ইতোমধ্যেই যেসব নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে সেগুলো হচ্ছেÑতিস্তা, ঘাঘট, করতোয়া, আত্রাই, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, মেঘনা, সুরমা, কুশিয়ারা, ইছামতী, ধরলা, আড়িয়াল খাঁ, গড়াই, কর্ণফুলী, মধুমতী, মহুরী, ফেনী, শঙ্খ ও ধলেশ্বরী। গঙ্গা, সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি হ্রাস পেতে থাকায় এসব এলাকায় নদীভাঙন তীব্র হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এসব নদ-নদীর পানি আরও কমবে। অপরদিকে, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও পদ্মা নদ-নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার এসব নদীর পানি আরও বাড়বে।
গতকাল তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আর যমুনা নদী বাহাদুরাবাদ ঘাটে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সিরাজগঞ্জে যমুনা নদী বিপদসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এই পানি বৃদ্ধির কারণে এসব এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার সময় ভাঙন আরও তীব্র হবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মাঠকর্মকর্তারা জানান। এদিকে পাউবো নদীভাঙন প্রতিরোধে একরকম হাত-পা গুটিয়েই বসে রয়েছে। পাউবোর কার্যক্রমে ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে পাউবো মাঠ প্রশাসনের অভিযোগ, তারা অর্থ বরাদ্দ না পেলে কাজ করবেন কী দিয়ে। তারা আরও জানান, বকেয়া পরিশোধ না করায় ঠিকাদাররা ভাঙন প্রতিরোধ কাজ করতে চায় না। এতে করে ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ আরও সর্বস্বান্ত হচ্ছে।
প্রতিদিনই ভাঙনের কবলে পড়ছে বসতবাড়ি, জমি, গাছপালা, হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, ব্রিজ ও কালভার্ট। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, দেশের ৮৫টি শহর ও বন্দরসহ মোট ২৮৩টি স্থানে নিয়মিতভাবে প্রতি বছর মারাত্মক ভাঙন দেখা দেয়। এ ছাড়া প্রায় ১২শ’ কিলোমিটার তটরেখা নদীভাঙন-প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে গত ৪৪ বছরে দেশের মোট আড়াই হাজার বর্গকিলোমিটার ভূমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই কর্মকর্তার মতে, বাংলাদেশে নদীভাঙন অন্যান্য আকস্মিক ও প্রলয়ঙ্করী দুর্যোগের চেয়েও বিপজ্জনক।
তার মতে, নদীভাঙনে ক্ষয়ক্ষতি হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে ও ক্রমে ক্রমে। তবে ধীরে ধীরে ও ক্রমে ক্রমে হলেও ভাঙনের ক্ষয়ক্ষতি অন্যান্য আকস্মিক ও প্রলয়ঙ্করী দুর্যোগ অপেক্ষা অধিক ধ্বংসাত্মক ও সুদূরপ্রসারী। ফলে এর প্রতিক্রিয়া হয় দীর্ঘমেয়াদি। নদীভাঙনে একটি পরিবারের যে ক্ষয়ক্ষতি হয় তা কাটিয়ে উঠতে কয়েক দশক লাগে। কিন্তু নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের অবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি বা বেসরকারি কোনো ক্ষেত্রেই খুব একটা অগ্রগতি হয়নি।
পাউবো মহাপরিচালক বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি কাজে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কী পরিমাণ অর্থ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছেনÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে বরাদ্দ রয়েছে ৩শ’ কোটি টাকার মতো। দেশের মূল্যবান সম্পদ রক্ষায় এই বরাদ্দ কমপক্ষে ১ হাজার কোটি টাকা হওয়া প্রয়োজন।




















































 


















































































































 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন