শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশে হিন্দু পুরোহিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক কেউ নিরাপদ নয় সংসদে -এরশাদ

প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, দেশ আজ কঠিন সময় অতিক্রম করছে। দেশের হিন্দু পুরোহিত, বিশ্ব্যালয়ের শিক্ষক কেউ নিরাপদ নয়। তাই সবাইকে নিয়ে জাতীয় সংলাপ আহ্বান করে দেশকে কঠিন অবস্থা থেকে উদ্ধারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা জাতীয় সন্ত্রাসমুক্ত রাজনীতিতে বিশ্বাস করে তাদের সবাইকে নিয়ে একটি জাতীয় সংলাপের আহ্বান করেন, দেশকে কঠিন অবস্থা থেকে উদ্ধার করার জন্য।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের একাদশতম অধিবেশনে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনের কার্যসূচি শুরু হয়। এরশাদের বক্তৃতাকালে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন। এরশাদ বলেন, সুশাসন আজ কেবল প্রশ্নবিদ্ধ নয়, সুশাসন আজ গুলিবিদ্ধ। তাই আসুন, দেশকে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দেয়ার জন্য ঐকমত্য গড়ে তুলি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে অনুরোধ করব, যেসব রাজনৈতিক দল সন্ত্রাসীতে বিশ্বাস করে না, জ্বালাও-  পোড়াও রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না, তাদের  সবাইকে নিয়ে জাতীয় সংলাপে আলোচনা করুন, কঠিন সঙ্কট থেকে দেশকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করুন।
তিনি বলেন, আমাদের সমস্যার কোনো অন্ত নেই। সম্ভাবনার পথ  দেখছি না। তারপরও বিবেকের তাড়নায় অনেক কথা বলতে হচ্ছে। এটা বলতে হচ্ছে দায়িত্বের কারণে। কারণ, আমরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বলেন, আমরা কেউ নিরাপদে নেই।  লোকজন কি নিরাপদে কর্মস্থলে আসতে পারে? মা কি তার সন্তানকে নিরাপদে স্কুলে পাঠাতে পারেন? হিন্দু পুরোহিত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কেউ কি নিরাপদ বোধ করছেন?  অনেকের  ছেলে যখন বড় হয় তখন সন্ধ্যার পর বাড়িতে সবাই শঙ্কিত হয়ে পড়েন ছেলে বাড়ি ফিরবে কি না। এভাবে বেশি দিন চলতে পারে না।
সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, সেদিন পত্রিকায় দেখলাম তনুর মা প্রশ্ন করেছেন গরিব বলে কি আমরা বিচার পাব না? এরশাদ বলেন, সাগর-রুনি হত্যার কি বিচার হয়েছে? তাহলে তারা কি বিচার পাবে না? একটি গুপ্তহত্যার কি বিচার হয়েছে? এমন নজির আপনি দেখাতে পারবেন?
তিনি বলেন, যে সমাজে পুলিশের একজন এসপির স্ত্রী নিরাপদ নয়, সেখানে সাধারণ মানুষের কি অবস্থা হতে পারে? গত মার্চ হতে এ পর্যন্ত ১৩ জন গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছে। এর দায়িত্ব কি সরকারকে নিতে হবে না? অন্যদিকে ২০০৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে ১ হাজার ৭১৫ জন নিহত হয়েছে। এসব কি সুশাসনের ইঙ্গিত বহন করে? আমি সেদিন বলেছিলেম, এসব সন্তানহারা মায়ের চোখের পানিতে আমরা ভেসে যাব।
বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে এরশাদ বলেন, ক্রসফায়ার চালু করেছিল বিএনপি। ২০০৪ সালে প্রথম ক্রসফায়ার চালু করা হয়, কেন করেছিল? কারণ এদেশে আইনের শাসন ছিল না, আইনের শাসন ছিল না বলেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি শুরু হয়েছিল। সেদিন ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট দিবালোকে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, যার বিচার এখনো হয়নি। সেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমরা এখনো বহন করে চলছি।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বলেন, আমাদের প্রধান বিচারপতি একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হলে এদেশে বিনিয়োগ হবে না। যখন দেশের প্রধান বিচারপতি আইনের শাসন সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন তখন সাধারণ মানুষের আইনের সুফল পাওয়ার উপায় থাকে না। মানুষ চোখে অন্ধকার দেখে। সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকা- প্রতিনিয়ত ম্লান হয়ে যাচ্ছে। সুশাসন ও উন্নয়ন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সুশাসন ছাড়া উন্নয়নের সুবাতাস জনগণ পায় না।
অর্থমন্ত্রীর দিকে ইঙ্গিত করে এরশাদ বলেন, তিনি আমার সময়ে অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তিনি হাসতে হাসতে আশি পার করেছেন এবং এই সংসদে ৯০ পৃষ্ঠার একটা বাজেট পেশ করেছেন সাবলীলভাবে প্রাঞ্জল ভাষায়। এজন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই।
বিস্মিত হয়েছি এবং অনুপ্রাণিত হয়েছি তার বক্তব্য শুনে। কারণ, আমি কিন্তু হাসতে হাসতে আশি পার করতে পারিনি। জেল-জুলুম অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি। এমন কিছু অত্যাচার নেই যা আমার ওপর দিয়ে বয়ে যায়নি। তা সত্ত্বেও বেঁচে আছি। দাঁড়িয়ে আছি এবং সংসদে বক্তব্য রাখছি।
তিনি বলেন, বাজেট বড় হলেই যে বাজেটে জনগণের কল্যাণ হবে একথা বলা যাবে না। বাজেট হচ্ছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিকল্পনার রূপরেখা। বাজেট দেয়ার সঙ্গে নানা মন্তব্য এসেছে। যারা ব্যবসায়ী তারা বলেছেন, এমন জটিল বাজেট ইহজনমে কেউ  দেখেননি। ব্যবসায়ীরাই তো আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সাহায্য করেন। বাজেট নিয়ে তাদের মতামত যদি এরকম হয় তাহলে কি হবে?
ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে তিনি বলেন, স্বয়ং অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ব্যাংকে সাগর চুরি হয়েছে। ভালো কথা। তাহলে আমাদের কিছু করার থাকে না। এই সাগর চুরির জন্য দায়ী কে? এটা বন্ধ করার জন্য কি ব্যবস্থা নিয়েছেন। ৯০ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতায় সে রূপরেখা  দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, বারবার ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়। আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করি। আর লুটপাট আরো দ্বিগুণ পর্যায়ে চলতে থাকে। যারা লাখ লাখ টাকার ঋণখেলাপি তারা ঋণ অবলোপন করেন। কিন্তু কৃষকদের যে ঋণ  দেয়া হয় সেটা অবলোপন করা হয় না।
এরশাদ বলেন, আমি শুনেছি এবং দেখেছি ৩৭ হাজার কোটি টাকা অবলোপন করা হচ্ছে। এই অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে। এটা জনগণের টাকা। পেনশনের টাকা। এই টাকা অবলোপন করার অধিকার আপনাকে কেউ দেয়নি। ৩৭ হাজার কোটি টাকা দিয়ে একটা পদ্মা সেতু করার পরও টাকা বেচে যেত। সেই টাকা আপনি মওকুফ করে দিয়েছেন। এই অধিকার কিন্তু আমরা আপনাকে  দেইনি। এটা আপনার নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না বলেও মুহিতের সমালোচনা করেন এরশাদ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা প্রথম। পৃথিবীর কোথাও এ ঘটনা ঘটেনি। আপনি কি বলতে চান, এই টাকা পাচারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ জড়িত না। ফরাসউদ্দিন সাহেব তো একটা প্রতিবেদন দিয়েছেন। আপনি কেন প্রকাশ করেন না। কেন অপরাধীদের ঢেকে রেখেছেন। কেন এদের আড়াল করে  রেখেছেন। কেন সেটা জনগণের সামনে প্রকাশ করেন না। তাদের বিচার করুন। আপনার কি ভয়? কেউ অন্যায় করে বেঁচে যাবে  সেটা হতে পারে না। লুটপাট চলবে আর প্রতিরোধের ব্যবস্থা  নেবেন না, এটা বিচারহীনতার লক্ষণ।
তিনি বলেন, যে কাজটি করে সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি পেয়েছি, প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে জাতির জনকের কবর জিয়ারত করেছি আমিই। আমার এখনো ইচ্ছে হয় জাতির জনকের কবরে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।
সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির জনককে আওয়ামী লীগের জনক বানিয়ে ফেলা হয়েছে। আমার অনুরোধ জাতির জনককে সবার জাতির জনকের জায়গায় নিয়ে আসুন।
এরশাদ সবসময় আওয়ামী লীগের পাশে ছিলেন দাবি করে বলেন, আমি সবসময় আওয়ামী লীগের পাশে থেকেছি। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগসহ সংসদ প্রতিষ্ঠা করেছি। আমি তখন জেলে ছিলাম।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যুগপৎ আন্দোলন করে অত্যাচারী বিএনপি সরকারকে সরিয়েছিলাম। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে বিশাল বিজয় এনে দিয়েছি। ২০০৬ সালে মহাজোট গঠন করি, ২০০৮ সালে আপনাদের পক্ষে থেকে বিশাল বিজয় এনে দিয়েছিলাম। আমি সবসময় আওয়ামী লীগের পাশেই  থেকেছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Rajib ২৯ জুন, ২০১৬, ৩:০৩ পিএম says : 0
akdom thik kotha bolesen
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন