অর্থনৈতিক রিপোর্টার : দীর্ঘ মেয়াদী ভাবনায় দেশের প্রত্যেকটি জেলা সড়ক ও মহাসড়ক চার লেনে নির্মাণ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এই নির্দেশনা দেন। একনেকের সভায় প্রস্তাবিত দুই লেনের পাঁচদোনা-ডাঙ্গা-ঘোড়াশাল সড়ক চার লেনে রূপান্তরের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়, যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এটিসহ মোট ৪ হাজার ৬০৭ কোটি টাকার ৮ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। পরে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান।
তিনি জানান, ৮টি প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ৪ হাজার ৬০৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩ হাজার ৮০৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৮০০ কোটি টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এখন থেকে প্রত্যেকটি জেলা সড়ক ও মহাসড়ক চার লেনে রূপান্তর করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী ৫০ বছরের কথা চিন্তা করেই এটা করার কথা বলেছেন তিনি। আমরা যদি ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতাম, তাহলে ঢাকার যানজটের অবস্থা এতো ভয়াবহ হতো না।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এলাকায় কেউ জমি দিলে সরকারিভাবে ডে-কেয়ার সেন্টার তৈরিরও ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে একনেক সভায় ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান উন্নতকরণের জন্য শিক্ষা সেক্টরের রিফর্মস ও কৌশল নির্ণয়, কলেজসমূহের ব্যবস্থাপনা ক্যাপাসিটি শক্তিশালীকরণ, বেসরকারি কলেজসমূহের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উন্নতকরণ এবং সরকারি ও বেসরকারি কলেজের অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষণ-শিক্ষা পদ্ধতি উন্নীতকরণ।
অন্যদিকে চলমান ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪৭৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আগে এ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৩১৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, ১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ২৮১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ২০টি শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। পাঁচদোনা-ডাঙ্গা-ঘোড়াশাল সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা। কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী ও উলিপুর উপজেলাধীন বৈরাগীর হাট ও চিলমারী বন্দর ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীরের ভাঙন থেকে রক্ষা প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। উন্নত জাতের গাভী পালনের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত মহিলাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। হাতে কলমে কারিগরি প্রশিক্ষণে মহিলাদের গুরুত্ব দিয়ে বিটাকের কার্যক্রম সম্প্রসারণপূর্বক আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৫৮ মিলিয়ন। কিন্তু কারিগরি শিক্ষায় বর্তমানে ছাত্রছাত্রীর অন্তর্ভূক্তির সংখ্যা মাত্র ১১ শতাংশ। উন্নয়নশীল দেশ যেমন, কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও চায়নায় কারিগরি শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩৫ শতাংশ, ৪৭ শতাংশ ও ৫০ শতাংশ। উন্নত দেশেও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনশক্তির সংখ্যা ৫০ শতাংশের ঊর্ধ্বে।
তিনি জানান, চলতি অর্থবছরে মোট ২৭৮টি প্রকল্পের বিপরীতে ২ লাখ ৬৮ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। গত অর্থবছরে ২১২টি প্রকল্পের বিপরীতে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে গত অর্থবছরের চেয়ে ৬৩ শতাংশ বরাদ্দ বেড়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরে ৯০ শতাংশ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হবে। যা গত ২০১৪-১৫ অর্থবছর বাস্তবায়িত হয়েছিল ৯১ শতাংশ।
তিনি বলেন, এখনও দু’টি মন্ত্রণালয়ের তথ্য পাওয়া বাকি রয়েছে। এগুলো পেলে এডিপি বাস্তবায়ন বাড়বে। চলতি অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ৭৯ হাজার ১১৫ কোটি টাকা এবং গত অর্থবছরে খরচ হয়েছিল ৭১ হাজার ১৪০ কোটি টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা সচিব তারিক-উল-ইসলাম, শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন