স্টাফ রিপোর্টার : গুম-খুনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে কোনোদিন ক্ষমা করা হবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। গতকাল বুধবার বিগত আন্দোলনে গুম-খুন হওয়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইফতারে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক অবস্থা ফিরে আসলে নিখোঁজ হওয়া নেতাকর্মীদের খোঁজ করার চেষ্টা করবো। এদের সঙ্গে যারা খারাপি করেছে বিশেষ করে র্যাব ও পুলিশ, যারা এসব গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত তাদের কোনোদিন ক্ষমা করা হবে না। তাদের বিচার একদিন না একদিন হবেই। গুম হওয়াদের হয়তো ফিরে নাও পেতে পারি, কিন্তু তাদের বিচারটা পেলেও কিছুটা শান্তি পাওয়া যাবে। আমরা এই আশায় থাকবো।
রাজধানীর গুলশানে হোটেল লংবিচে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এই ইফতারের আয়োজন করা হয়। এতে গুম-খুন হওয়া ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় ৪০ পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। ইফতারের পূর্বে খালেদা জিয়া প্রতিটি টেবিলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। খালেদা জিয়া তাদের শান্ত¦না দিয়ে বলেন, আশা করি একদিন এর বিচার হবে। অনুষ্ঠান শেষে গুম, খুন শিকার পারিবারের সদস্যেদের হাতে ঈদ উপহার ও আর্থিক সহয়তা তুলে দেন খালেদা জিয়া।
দেশ গণতান্ত্রিক অবস্থায় ফিরে আসবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, দেশের মানুষ এই সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়। দেশে গণতান্ত্রিক অবস্থা ফিরে আসলে যারা গুম হয়েছে আমরা তাদের অবশ্যই খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো। আল্লাহর কাছে দোয়া করি আমরা, তারা (গুম হওয়ারা) যেখানেই আছে যেন ভালো থাকে, সুস্থ থাকে।
সরকারকে খুনি, জালেম ও গুপ্তহত্যাকারী আখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি দুনিয়াতে যেন এদের বিচার হয় এবং তা যেন খুব শিগ্গিরই হয়, যা মানুষ দেখে যেতে পারে। তাদের যেন এমন বিচার হয় যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর এ ধরনের অন্যায় করতে সাহস না পায়।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনারা যে আশা করছেন, স্বজনরা একদিন ফিরে আসবে, আমরাও সেই আশায় আছি। আবার আপনাদের মা, বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী, ছেলে-মেয়েদের আদর করবে ঠিক তেমনিভাবে আমাদের দলে ফিরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিলে আমাদের আপন হয়ে থাকবে। এর পর পরই ভারী হয়ে যায় তার কণ্ঠ। তার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়তে থাকে। এ সময় অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত অনেকেই কান্নায় ভেঙে পরেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে খালেদা জিয়া বলেন, স্বজন হারানোর ব্যথা আমি বুঝি। আপনারা দেখেছেন আমার সন্তান হারিয়েছি।
ক্রসফায়ারের ঘটনাকে দুঃখজনক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, একটি নীরিহ ছেলেকে কথা নাই, বার্তা নেই গুলি করে মেরে ফেলবে। এটা খুবই দুঃখজনক। বিচার ছাড়া কাউকে গুলি করে মেরে ফেলবে। এটা আগে কখনো হয়নি।
খালেদা জিয়া বলেন, আমরা এখন বিরোধী দলে আছি। আমাদের প্রত্যেকের উপর মিথ্যা মামলা, নানা নির্যাতন চলছে। নতুন করে অভিযানে ১৬ হাজার লোক ধরেছে এর মধ্যে ৪ হাজার বিএনপি নেতাকর্মী। তাদের প্রধান উদ্দেশ্যে হলো বিএনপিকে ধ্বংস করা।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে হাসিনা এমনভাবে গুম-খুন শুরু করে যাতে বিএনপি না থাকে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ের হাসি হাসতে পারেন। কিন্তু দেশের জনগণ ওই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে।
অনুষ্ঠানে গুম হওয়া বংশাল থানা বিএনপি কর্মীর ছোট মেয়ে হƒদি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘পাপার ছবি গলা ঝুঁলিয়ে হাঁটতে মন চায় না। মন চায় পাপার হাত ধরে হাঁটতে। হাসিনা আন্টি পাপাকে ফিরিয়ে দেন, চাচুকে ফিরিয়ে দেন। পাপাকে ছাড়া ঈদ করতে ভালো লাগে না।’
গুম হওয়া আরেক সদস্য চঞ্চলের ছোট ছেলে আহাদ বলে, ‘হাসিনা আন্টি আমার পাপাকে ফিরিয়ে দিন, পাপার সাথে ঈদ করবো, পাপা জামা কিনে দিবে, পাপার সাথে স্কুলে যাবো।’ বিমানবন্দর থানা ছাত্রদল নেতা নিজামউদ্দিন মুন্নার বাবা শামসুদ্দিন আহমেদও বক্তব্য রাখেন।
ইফতারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম, শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসান, সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, নাজমুল হাসান প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন