শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ে শীর্ষে রূপালী ব্যাংক

প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পাঁচ বছরে সম্পদ বেড়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা আমানতের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি বিনিয়োগ বেড়েছে ৭ হাজার ৬১১ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ বেড়েছে ১১৫ কোটি টাকা
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে রূপালী ব্যাংক। সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ে ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ আদায় করেছে ব্যাংকটি। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ঋণ আদায়ের বিশেষ অভিযানের কারণেই মূলত এটি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে শ্রেণিকৃত, অবলোপনকৃত এবং অশ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ের জন্য বিশেষ আদায় অভিযান পরিচালনা করছে ব্যাংকটি। গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। এই সময়ে ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকের বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া গত পাঁচ বছরে ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ বেড়েছে ১১৫ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের জন্য খেলাপী ঋণ থেকে ১৫০ কোটি টাকা আদায়ের জন্য টার্গেট দেয় অর্থমন্ত্রণালয়। চলতি বছরের মে মাসের মধ্যেই শতভাগ ঋণ আদায় করতে পেরেছে রূপালী ব্যাংক। এর মধ্যে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত শুধুমাত্র টপ টুয়েন্টি থেকে ৭৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এর আগের বছর ২০১৫ সালে আদায় হয়েছে ৭ কোটি টাকা। শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে দেশব্যাপী ‘বিশেষ আদায় অভিযানে’ নেমেছে রূপালী ব্যাংক। এ কার্যক্রমের আওতায় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন। এ অভিযান অব্যাহত থাকলে রূপালী ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে আসবে বলেও ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি’র সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো চাইলেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ে করতে পারলে অবশ্যই সেটি রূপালী ব্যাংকের জন্য ভালো দিক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণ আদায় সম্ভব হলে ব্যাংকের স্বাস্থ্য ও গুণগতমান ভালো হবে। এক্ষেত্রে রূপালী ব্যাংকের আরও মনোযোগি হতে হবে।
রূপালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। ২০১১ সালে ছিল ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ২০১২ সালে ছিল ২৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। ২০১৩ সালে ছিল ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ২০১৪ সালে ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ। ২০১৫ সালে ছিল ১৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত শ্রেণীকৃত ঋণের হার ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ২০১২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ ও অগ্রীম শ্রেণীকরণ সংক্রান্ত নীতিমালা পরিবর্তন করায় ব্যাংকিংখাতে উল্লেখযোগ্যহারে শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর প্রভাব রূপালী ব্যাংকের ওপরে পড়ে। তবে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে রেখে যাওয়া শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৪২ শতাংশ। কিন্তু ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. ফরিদ উদ্দিনের দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও কঠোর মনিটরিংয়ের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। শ্রেণিকৃত, অবলোপনকৃত এবং অশ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ের জন্য বিশেষ আদায় অভিযান পরিচালনা করছে ব্যাংকটি। এ কার্যক্রমের আওতায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দু’জন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান কার্যালয় ও বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক মাঠে কাজ করেছেন। সংশ্লিষ্টরা ব্যাংকের গ্রাহকদের সঙ্গে ডোর টু ডোর বৈঠক করে ঋণ আদায় করছেন কর্মকর্তারা। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঋণ গ্রহীতাদের একান্ত স্বাক্ষাতকার ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া যুগিয়েছে বলে রূপালী ব্যাংকের গ্রাহকরা জানান।
ব্যাংকের রিকভারী বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে রূপালী ব্যাংক ৫০ দিনের মধ্যে ৪শ’ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণ থেকে নগত আদায় হবে ১৭০ কোটি টাকা। অবলোপনকৃত ঋণ থেকে নগত ৩০ কোটি টাকা এবং অ-শ্রেণিকৃত ঋণ থেকে নগত ২০০ কোটি টাকা আদায় করা হবে। মো. আবুল কাসেম নামে রূপালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ের এক গ্রাহক বলেন, রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. ফরিদ উদ্দিন শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ে যে কৌশল নিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তিনি বলেন, ঋণ আদায়ের এ কৌশল অন্য কোন ব্যাংকে নেই। রূপালী ব্যাংক ঋণ আদায়ে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করায় এ ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ও বেশি হচ্ছে। আর আমরা ব্যাংকের টাকাও দিকে বাধ্য হচ্ছি।
এ বিষয়ে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপী ঋণের আশংঙ্কাজনক বৃদ্ধি ব্যবসায়িক কর্মকা-কে দারুণভাবে ব্যহত করছে। শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ যতই বাড়ছে, মুনাফা অর্জনের পথ ততই সংকৃচিত হচ্ছে। ব্যাংকের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে খেলাপী ঋণ আদায়ের কোন বিকল্প নেই। তাই ব্যাংকের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে শ্রেণিকৃত ঋণ আদায় কর্মসূচিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, রূপালী ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ের জন্য ‘বিশেষ আদায় অভিযান’ পরিচালিত হচ্ছে। এর আওতায় ব্যাংকের দু’জন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান কার্যালয় ও বিভাগীয় কার্যালয়ের সকল মহাব্যবস্থাপক ৪শ’ কোটি টাকা ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের খেলাপী ঋণের পরিমাণ খুব দ্রুত হ্রাস পাবে।
রূপালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে রূপালী ব্যাংকের শাখা ছিল ৪৯২টি। ২০১৫ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৫৫৪টি। ২০১০ সালে ৭৭৮ কোটি টাকার রেমিটেন্সর বিপরীতে ব্যাংকটির মাধ্যমে ২০১৫ সালে এসেছে ১৮৫০ কোটি টাকা। ব্যাংকটির বর্তমানে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ২৪০.০৩ কোটি টাকা। যা ২০১০ সালে ছিল ১২৫ কোটি টাকা। ২০১৫ সাল শেষে রূপালী ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৫৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ২০১০ সালে এই সম্পদের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৪৪৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ২০১০ সালে রূপালী ব্যাংকের আমানত ছিল ৯ হাজার ১১২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ২০১৫ সাল শেষে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৩৮২ কোটি। ২০১৫ সাল শেষে রূপালী ব্যাংকের ঋণ অগ্রীমের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে ব্যাংকের বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। ২০১০ সালে ছিল ১ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা।
২০১০ সালে ঋণ অগ্রীমের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৬০৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ২০১০ সালে রূপালী ব্যাংকের আমদানি পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ২৪ কোটি টাকা। ২০১৫ সাল শেষে আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা। ২০১০ সাল শেষে রফতানির পরিমাণ ছিল ৮৪৯ কোটি টাকা। ২০১৫ সাল শেষে রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। গত পাঁচ বছরে রূপালী ব্যাংকের জনবল বেড়েছে। ২০১০ সালে রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৫৫৯ জন। ২০১৬ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৪৬ জন। রূপালী ব্যাংকের সম্পদ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে রূপালী ব্যাংক এগিয়ে। রাজধানীসহ চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার, কুমিল্লা মনোহরপুর, পটুয়াখালীতে ব্যাংকের নিজস্ব স্থাপনা রয়েছে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন