বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যা সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। কোনও দেশই এর বিপদজনক পরিণতি এড়াতে পারবে না। যদিও গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং জন্ম হার কমে যাওয়াকে আধুনিক বিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে বড় সাফল্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর এগুলো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট (ওসিডি) এক সমীক্ষায় জানিয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে, পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে ১ হাজার কোটি। বর্তমানে এই সংখ্যা ৭৭০ কোটি। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দীর্ঘকাল বেঁচে থাকবে। ফলস্বরূপ, ১৯৮০ সালে যেখানে প্রতি ১০০ জন কর্মক্ষম নাগরিকের বিপরীতে প্রবীণের সংখ্যা ছিল ২০ জন, ২০৬০ সালের মধ্যে বেড়ে হবে ৫৮ জন। অর্থাৎ, প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পাবে।
সমস্ত ওইসিডি’র সদস্য দেশেই প্রবীন নাগরিকের সংখ্যা বাড়ছে, তবে এই বৃদ্ধির হার সব দেশে এক রকম নয়। যেমন, বর্তমানে বিশ্বের মধ্যে জাপানে প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা সর্বাধিক। সেখানে প্রতি তিনজন নাগরিকের মধ্যে একজনের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটির কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা ৮০ লাখ হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যার ফলে সেখানে বিশাল শ্রমিক
সংকট দেখা যাবে। অন্য দিকে, বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রবীণ বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সেখানেই কর্মক্ষমের বিপরীতে প্রবীণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হবে।
বিশ্বব্যাপী কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা ২০৬০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ হ্রাস পাবে। এর মধ্যে গ্রিস, জাপান, কোরিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং পোল্যান্ডে এই সংখ্যা ৩৫ শতাংশের বেশি হারে হ্রাস পাবে। অন্য দিকে, এটি অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো এবং ইসরায়েলে ২০ শতাংশের বেশি হারে বৃদ্ধি পাবে। বিশ্বের মধ্যে ইসরায়েলে কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে ৬৭ শতাংশ হবে। এর কারণ সেখানে জন্ম হার অনেক বেশি।
প্রবীণ নাগরিকের অনুপাতিক বৃদ্ধিতে যে সমস্ত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে তার মধ্যে বর্তমানে শুধুমাত্র শ্রমশক্তি সংকটই অনুভূত হচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতে আরও অনেক সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দেখা দিতে পারে। যেমন, বেশি লোক পেনশনভোগি হবেন কিন্তু আয়কর পরিশোধকারী লোকের সংখ্যা কমে যাবে। ফলে কর্মীরা বেশি কর দিতে বাধ্য হতে পারেন। আবার দীর্ঘজীবন মানেই সবসময় স্বাস্থ্যকর জীবন হয় না, যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি, তাদের অন্তত একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যার জন্য ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন হবে। এছাড়া অর্থনৈতিক মন্দাও দেখা দিতে পারে। পেনশন সিস্টেমের উপর চাপ সম্ভবত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে সুস্পষ্ট লক্ষণ। যদিও বেশিরভাগ দেশে অবসর গ্রহণের বয়স ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, লোকেরা তাদের ভবিষ্যতের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে সাশ্রয় করছে। যার ফলস্বরূপ ২০৫০ সালের মধ্যে আনুমানিক ৪০০ ট্রিলিয়ন ডলার ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
২০২০ সালে বিশ্ব নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়কালে প্রবেশ করছে। দেশগুলো তাদের প্রবীণ নাগরিকদের কার্যকরভাবে পরিচালনা করার জন্য প্রচণ্ড চাপের মুখোমুখি হচ্ছে, তবে এই জনসংখ্যা ভিত্তিক পরিবর্তনটির জন্য তাড়াতাড়ি প্রস্তুতি নেয়া হলে তারা অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখতে পারবে। সূত্র: ভিজুয়াল ক্যাপিটালিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন