স্টাফ রিপোর্টার
একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে কতটি সিম নিবন্ধিত হয়েছে তা জানা যাবে আগামী ৭ জুলাই থেকে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) এক সংবাদ সম্মেলনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম একথা জানান। তিনি বলেন, ৭ জুলাই থেকে গ্রাহকদের মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে কোন এনআইডি’র বিপরীতে কতটি সিম রয়েছে তা জানাতে শুরু করবে মুঠোফোন অপারেটররা। আঙুলের ছাপ (বায়োমেট্রিক) পদ্ধতিতে নিবন্ধিত সিম জালিয়াতির বিষয়ে গত কয়েক দিনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ‘একটি এনআইডির বিপরীতে কতটি সিম নিবন্ধিত হয়েছে, সেটি ৭ জুলাই থেকে প্রত্যেক অপারেটর এসএমএস পাঠিয়ে গ্রাহকদের জানাবে। এরপর নিবন্ধিত সিমের সংখ্যা নিয়ে যদি গ্রাহকের মনে কোনো সন্দেহ থাকে, তাহলে তিনি তা সংশ্লিষ্ট মুঠোফোন অপারেটরকে জানাতে পারবেন।’
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন জালিয়াতির বিষয়ে তারানা হালিম বলেন, ‘পুরো ব্যবস্থাটিকে নিñিদ্র করতেই পুলিশ আমাদের অনুরোধে দেশব্যাপী এসব অভিযান চালাচ্ছে। এ পদ্ধতি চালু করার কারণেই এখন এসব জালিয়াতি চক্রকে ধরা সম্ভব হচ্ছে।’ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের জালিয়াতির বিষয়ে গ্রাহকদের সচেতনতা তৈরিতেও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
এদিকে সাইবার হামলার আগাম সতর্ক বার্তা পেতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক সফটওয়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট-এর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। গতকাল ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ এবং মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোনিয়া বশির কবির। চুক্তির বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, এ চুক্তির ফলে মাইক্রোসফটের সঙ্গে একটি সুসম্পর্ক তৈরি হলো। সাইবার হামলার আগাম বার্তা দিয়ে তারা আমাদের সহযোগিতা করবে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটসহ সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। আর চলতি বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলার ব্যাংকের সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে সাইবার হামলার মাধ্যমে করা হয় বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এই চুক্তির মাধ্যমে মাইক্রোসফট প্রাথমিকভাবে সরকারি অফিসগুলোতে সাইবার হামলার বিষয়ে আগাম সতর্ক বার্তা দেবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আগাম বার্তা পাওয়ার পর মাইক্রোসফটকে জানালে তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। এ ব্যাপারে ডাক ও টেলিযোগাযাগ বিভাগ অনুমতি দিলেই তারা সাইবার হামলা প্রতিরোধের বিষয়েও পদক্ষেপ নেবে। বাংলাদেশের সাথে এ চুক্তি তিন বছরের জন্য হয়েছে জানিয়ে মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোনিয়া বশির কবির বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এ সেবা দেবে মাইক্রোসফট। এজন্য কোনো অর্থ নেয়া হবে না। সাইবার হামলার আগাম সতর্কতা দেয়ার পাশাপাশি অনুমতিসাপেক্ষে ইন্টারনেট রোবট বা বটনেট দিয়ে হ্যাকিং ঠেকানো যাবে। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় ডাক ও টেলি যোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
সিম নিবন্ধনে জালিয়াতিতে আশঙ্কা মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের
বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের যে ব্যাপক জালিয়াতি করা হয়েছে ভবিষ্যতে তা জাতিকে ভোগাবে বলে মন্তব্য করেছে মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আবু বক্কর সিদ্দিক গতকাল এক বিবৃতিতে একথা বলেন। নেতৃদ্বয় বলেন, আমরা দাবি করেছিলাম আরো সতকর্তার সাথে ভোক্তাদের আঙ্গুলের ছাপ নেয়া হোক। কিন্ত সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। এখন একের পর এক জালিয়াতির খবর প্রকাশ পাচ্ছে। লাখ লাখ সিম সাধারণ ব্যবহারকারীদের আঙ্গুলের ছাপ একাধিক বার দিয়ে চুরি করে নিবন্ধন করে নিয়েছে জালিয়াতি চক্র। বিবৃতিতে তারা বলেন, “এসব সিম জালিয়াতি চক্র উচ্চ মূল্যে সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রয় করছে বলে আমাদের সংগঠনের তদন্তে উঠে এসেছে। এতে করে কোন সন্ত্রাসী কর্মকা-ের পর নিরপরাধ সাধারণ মানুষ ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনকি কেউ জানে না কার আঙ্গুলের ছাপ চুরি করা হয়েছে। তাই আমরা আজ গোটা জাতি জালিয়াত চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। তাঁরা বলেন, এ ব্যাপারে বড় কোন ভোগান্তির আগেই সরকারকে অতিদ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় জনসাধারনের যেকোন ধরনের ভোগান্তি বা ছোট-বড় দূর্ঘটনার দায় সরকাকেই নিতে হবে।”
গত ২১ মে চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের জানান ১২০টি রবির সিম নিবন্ধন করে বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণা করেছে জালিয়াত চক্র। এরপর গত বুধবার রাজধানীতে এয়ারটেলের এক লাখের বেশি নিবন্ধিত সিমসহ অপারেটরের দুইজন কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ এবং গতকাল ময়মনসিংহেও লক্ষাধিক নিবন্ধিত সিম ও ভিওআইপি সরঞ্জামসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিবৃতিতে তারা বলেন, আমরা ৩০ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে পর্যবেক্ষণের রিপোর্ট প্রকাশ করি। সেখানে আমার বলি যে, মোবাইল অপারেটর, ডিলার ও রিটেইলাররা কারসাজি করে ভোক্তারের আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করে অনিবন্ধিত সিমসমূহ নিবন্ধন করে নিচ্ছে। তাই আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করি, হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির সমন্বয়ে ভোক্তাদের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা হোক। কিন্তু আজ অবধি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় একের পর এক জালিয়াতি ঘটে চলেছে। মন্ত্রণালয় থেকে বারবার দাবি করা হচ্ছে, ৯ কোটি, ১০ কোটি, ১২ কোটি সিম নিবন্ধিত হয়েছে। আসলে প্রকৃতপক্ষে কত সংখ্যক নিবন্ধিত হয়েছে এ নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে দেখা দিয়েছে সংশয়।”
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন