শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

চীনে মৃত বেড়ে ১৭০

ভারতে প্রথম রোগী শনাক্ত বড়পুকুরিয়া খনির ৩ কর্মী পর্যবেক্ষণে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

২০১৯ সালের শেষ দিনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর চীনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৭০ জনে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজার ৭৭১ জন। আর চীনের মূল ভূখন্ডের বাইরে আরও ১৯ জায়গায় অন্তত ৯১ জনের দেহে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে চীনের বাইরে এ ভাইরাসে কারও মৃত্যুর তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ওদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত করেছে ভারত। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এক ব্যক্তির শরীরে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তি চীনের উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এই উহান থেকেই ভাইরাসটি প্রথমে চীনের বিভিন্ন অঞ্চল এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

গতকাল এক বিবৃতিতে ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেরালায় চীনের উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর শরীরে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ওই রোগীকে হাসপাতালে পৃথক অবস্থায় রাখা হয়েছে। তিনি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছেন। তাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’
এদিকে চীন থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশে আসা পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ৩ জন কর্মীকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। চীন থেকে নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে তাদেরকে কাজে যোগদান করতে দেয়া হয়নি।
করোনাভাইরাসের উৎপত্তি চীন থেকে হওয়ায় এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরকার চীনে সফরের ক্ষেত্রে সতর্কতা আরোপ করেছে। এর জেরে চীনে ফ্লাইট চলাচল স্থগিত রেখেছে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এবং এয়ার ক্যানাডা। এছাড়া বহু এয়ারলাইন্স, চীনে তাদের নির্ধারিত যাত্রা বাতিল করেছে। চীনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন সতর্কতা দেয়া হয়নি, তবে ভ্রমণ সংক্রান্ত কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে গত ১৪ দিনে চীন থেকে আসা সব চীনা নাগরিকদের তালিকা তৈরি করতে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ এবং সিভিল সার্জনদের বলা হয়েছে তারা যেন নিজ নিজ জেলায় এই তালিকা তৈরির কাজ করেন।
করোনাভাইরাস যে মুহ‚র্তে ছড়িয়ে পড়ে সে সময় বাংলাদেশে কাজ করতে আসা অনেক চীনা নাগরিক তাদের দেশে চন্দ্র নববর্ষ উদযাপনে যান। এখন তাদের অনেকেই আবার বাংলাদেশে ফিরে আসছেন। এদের স্বাস্থ্য নজরদারিতে রাখার উদ্দেশ্যেই এই তালিকা প্রস্তুত জরুরি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ।
তিনি বলেন, ‘আমরা এই তালিকাটা তৈরি করেছি অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য। বাংলাদেশে যেসব চীনা নাগরিক ফেরত আসছেন তারা ঠিক কতো তারিখে ফিরেছেন, আমরা আমরা জানতে চাই। তাহলে ওই তারিখ থেকে সামনের ১৪ দিন তাকে পর্যবেক্ষণে করবো। কারণ কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এর লক্ষণগুলো ১৪ দিনের মধ্যে দেখা দিতে শুরু করে’।
এই তালিকা প্রস্তুত করতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি- এফবিসিসিআইকে চিঠি পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এছাড়া দেশের সব জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন এবং পুলিশদের জানানো হয়েছে যেন তারা সংশ্লিষ্ট এলাকার তথ্য তৎক্ষণাৎ সরবরাহ করতে পারে।
চীনে থাকা অবস্থায় তাদের কোন নাগরিক যদি অসুস্থ হয় তাহলে তাকে দেশের বাইরে যেতে দেয়া হবে না বলে চীনা সরকার আগে থেকেই নিশ্চিত করেছেন। তারপরও এই তালিকা তৈরি করা হচ্ছে যেন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া যায়।
করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের উদ্বেগের প্রধান কারণ এটি ভীষণ ছোঁয়াচে। এতোটাই ছোঁয়াচে যে কারও স্পর্শ থেকে, হাঁচি কাশি থেকে এমনকি দুই হাত দ‚রত্বে পাশাপাশি বসলেও বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। সেক্ষেত্রে এই তালিকা এই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বা সতর্কতা আরোপে কতোখানি কাজ করবে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ ব্যাপারে সরকারের রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইডিসিআর এর পরিচালক মীরজাদী সাব্রিনা বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী এই নজরদারি করা হচ্ছে। ‘এই তালিকা করার উদ্দেশ্য হল তাদেরকে যেন নজরদারিতে রাখা। যদি কারও মধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্তের লক্ষণগুলো দেখা যায়, আমরা তাকে সাথে সাথেই আলাদা করে ফেলব। পরীক্ষা করার আগেই। যদি পরীক্ষায় করোনাভাইরাস ধরা পড়ে, তাহলে সেটা যেন অন্যদের মধ্যে না ছড়ায়’।
পার্বতীপুর (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক ও কোম্পানি সচিব আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদনে নিয়োজিত চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়ামের অধীনে প্রায় তিনশ’ চীনা নাগরিক বিভিন্ন পদে খনিতে কর্মরত রয়েছেন। এদের মধ্যে কিছু শ্রমিক ছুটি কাটাতে দেশে গিয়েছিলেন। স¤প্রতি ৩ জন কর্মী কয়লা খনিতে ফিরে আসেন। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ওই ৩ কর্মীকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, রাজধানীসহ দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে একজন চীনা নাগরিকসহ মোট তিনজন রোগী ভর্তি হন। তাদের মধ্যে খুলনা হাসপাতালে ১ জন, রাজধানীর গুলশানের বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে ১ জন এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন ১ জন। হাসপাতালে ভর্তি মোট তিনজন রোগীর মধ্যে দু’জনের ইতোমধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় করোনাভাইরাস ধরা না পড়ায় তারা রিলিজ নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
গতকাল সকালে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি রোগীটির জ্বর কমলেও তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তিনিও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাবেন বলে আশা করছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
স¦াস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে এই মুহূর্তে স্ক্রীনিং করা ছাড়া কাউকেই দেশে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। বিদেশ ফেরত সকল ফ্লাইটের যাত্রীদের জন্য প্রবেশ গেটে স্ক্রীনিং মেশিন বসানো হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৩টি স্ক্রীনিং মেশিন রাখা আছে। এর একটি ভিআইপি প্রবেশদ্বারে, একটি সাধারণ প্রবেশদ্বারে এবং অন্যটি স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। একইভাবে দেশের অন্যান্য স্থল, নৌ বন্দরেও স্ক্রীনিং ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এরপরও বিমানবন্দর সংলগ্ন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একটি আলাদা আইসোলেটেড কেবিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিমানবন্দরে প্রতিটি যাত্রীর জন্য একটি করে করোনাভাইরাস নির্দেশিকা গাইড রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে জরুরি হটলাইন মোবাইল নম্বর দেয়া হয়েছে। সুতরাং করোনাভাইরাস নিয়ে এই মুহূর্তে আমাদের আতঙ্কিত হবার কোন কারণ নেই। করোনাভাইরাস মোকাবেলা করতে সরকার পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।
গতকাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ডা. মিলন হলে বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটি আয়োজিত বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব সংক্রান্ত জনসচেতনতামূলক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
দেশের চিকিৎসকদের প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ডেঙ্গুর সময় আমাদের চিকিৎসকরা যেভাবে সফলতা দেখিয়েছে তা বিশ্বে বিরল। করোনাভাইরাস চিকিৎসায় দেশের মেডিসিন সোসাইটি আগে থেকেই যেরকম প্রস্তুতি নিয়েছে এবং চিকিৎসকদের ভাইরাসটির চিকিৎসা নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে তাতে দেশের চিকিৎসকদের প্রতি আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসার সকল ক্ষেত্রেই আমাদের চিকিৎসকদের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর আহমেদুল কবীরের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ, স্বাচিপ মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আব্দুল আজিজসহ অন্য বক্তাবৃন্দ। সভায় মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন প্রফেসর তারিকুল ইসলাম, স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রফেসর রোবেদ আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন