শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই শিবিরকর্মী নিহত

প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা : ঝিনাইদহ সদর উপজেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের মাঠে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শহীদ আল মাহমুদ (২৭) ও আনিসুর রহমান (২৯) নামে দুই শিবির কর্মী নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, বন্দুকযুদ্ধের সময় পুলিশের এসআই প্রবীর কুমার, কনস্টেবল রাব্বি ও তরিকুল আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি ১ শুটার গান, ২ রাউন্ড গুলি, ৬টি হাসুয়া ও ৫টি বোমা উদ্ধার করেছে। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শহীদ আল মাহমুদ ঝিনাইদহ শহর শাখা শিবিরের ছাত্রকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও ঝিনাইদহ সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসার ছাত্র। তিনি সদর উপজেলার বদনপুর গ্রামের রজব আলীর ছেলে। তাকে গত ১৩ জুন নিজ বাড়ি সদরের বদনপুর থেকে পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকের লোকজন তুলে নিয়ে যায় বলে গত ১৮ জুন পরিবারের পক্ষ থেকে এক সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করা হয়েছিলো। অন্যদিকে ঝিনাইদহ পলিটেকনিকের শিবিরের সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান কুষ্টিয়া সদর উপজেলার যুগিয়া ভাগপাড়া ছাবদার হোসেনের ছেলে। তিনি ঢাকার ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটির বিএসসির ছাত্র। তাকেও গত ১৬ জুন রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ৯ নাম্বার রোডের ১১ নাম্বার বাসার ছয়তলা থেকে সাদা পোশাকের লোকজন তুলে নিয়ে যায় বলে সংগঠন ও পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
বুধবার (২৯ জুন) শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটি শহীদ আল মাহমুদ ও আনিসুর রহমান তাদের কর্মী দাবি করে বিভিন্ন গনমাধ্যমে বিবৃতি পাঠায়। ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশের টহল গাড়ি লক্ষ করে একদল সন্ত্রাসী গুলি চালালে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। খবর পেয়ে আমি এবং সার্কেল এসপি স্যার অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। যখন গোলাগুলি বন্ধ হয় তখন আমরা ২ জনের লাশ উদ্ধার করি। এ সময় তিন পুলিশ সদস্যও আহত হয়। নিহতদের নাম-পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বড় ভাই আব্দুর রহিম লাশ দুটির মধ্যে একটি তার ভাই শহীদ আল মাহমুদ ও অন্যজন শিবির নেতা আনিসুরের বলে শনাক্ত করেন। এদিকে বন্দুকযুদ্ধের সময় আহত পুলিশের এসআই প্রবীর, সদস্য রাব্বি ও তরিকুলকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে তেতুলবাড়ীয়া এলাকায় একদল দুর্বৃত্ত নাশকতা সৃষ্টির জন্য অবস্থান করছে। খবর পেয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার টহল পুলিশ তেতুলবাড়ীয়া রাস্তা দিয়ে টহল দিচ্ছিল। পুলিশ টহলের সময় তেতুলবাড়ীয় গ্রামের উত্তর মাঠের দিকে দুবৃর্ত্তরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ করে গুলিবর্ষণ করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। উভয় পক্ষের প্রায় ২০ মিনিট গুলি বিনিময় হয়। এর একপর্যায়ে দুবৃর্ত্তরা পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুটি লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। উল্লেখ্য, গত ১৮ জুন নিখোঁজ সন্তানের উদ্ধারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন নিহত শহীদ আল মাহমুদের বৃদ্ধ পিতা রজব আলী। তিনি সে দিন সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, গত ১৩ জুন রাত ১২টার দিকে সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার ছেলে শহীদ আল মাহমুদকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বদনপুর গ্রাম থেকে তুলে নিয়ে যায়। সেই থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয় ঘটনার সময় ১০/১২ জন লোক একটি কালো মাইক্রোবাস ও ৩টি মোটরসাইকেল এসে তার ছোট ছেলে শহীদ আল মাহমুদকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এ অবস্থায় তিনি এবং তার পরিবার ছেলের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শহীদ আল মাহমুদের বড় বোন মদিনা খাতুন এবং মামা ফিরোজ আহমেদ। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে শিবির কর্মী শহীদ আল মাহমুদকে আটক করা হয়নি বলে জানানো হয়। এদিকে ঝিনাইদহ শহরের পাবলিক হেলথ জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন সোহেল রানা (২২) ২৭ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। গত ৩ জুন শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর একটি কালে রংয়ের হাইয়েজ গাড়িতে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে কে বা করা তাকে তুলে নিয়ে যায়। সেই থেকে তার কোন সন্ধান নেই। সোহেল রানা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কামারকুন্ডু গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে। সোহেল রানার ভাই মাসুদুর রহমান জানান, ঘটনার দিন সোহেল রানার সাথে কিছু অজ্ঞাত ব্যক্তি কথা বলতে দেখা গেছে। এ ঘটনার পর থেকেই সোহেল রানাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের ধারণা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে যেতে পারে। তবে পুলিশ সোহেল রানাকে আটক করেনি বলে জানিয়েছে। এর আগে, গত ১৩ এপ্রিল সকাল ৮টার দিকে যশোর সদরের হৈবতপুর ইউনিয়নের জোড়াদহ গ্রামের একটি পুকুর থেকে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ পৌরসভা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবুজর গিফারি ও অপর নেতা শামীম হোসেনের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। গত ১৮ মার্চ শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ঝিনাইদহ জামতলা মোড় থেকে দুটি মোটরসাইকেলযোগে ৪ ব্যক্তি পুলিশ পরিচয়ে যশোর এমএম কলেজের ছাত্র আবুজর গিফারি এবং ২৫ মার্চ ঝিনাইদহ কে সি কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র শামীম হোসেনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে সে সময় অভিযোগ করেছিল তাদের পরিবার ও ছাত্রশিবির।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন