মো. আবদুর রহিম : মুসলমানদের জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বিশেষ রহমত এবং অনুগ্রহের রজনী পবিত্র “লাইলাতুল কদর”। ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ নাজাতের উছিলা হিসেবে যথাযথ মর্যাদা ও পবিত্রতার সাথে শবেকদর পালন করে থাকেন। ২৬ রমজান দিবাগত রাতের অর্থাৎ কদরের রাতের এবাদত হাজার মাসের এবাদতের চেয়ে উত্তম বলে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে। এ রাতেই পবিত্র কুরআন নাজিল শুরু হয় রাসুলুল্লাহ (দ.) ওপর।
শবেকদরের রাতে বিভিন্ন মসজিদে-মাজারে এবাদত বন্দেগির পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ মুসলামানগণ বিভিন্ন মাজার ও কবর জিয়ারত করবেন। সারা রাত এবাদত বন্দেগি শেষে বাদ ফজরে আখেরি মুনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
কদরের গুরুত্ব ও আমল
রমজান মাস আল্লাহ তা’আলার এক বিশেষ নিয়ামত। সাওয়াব অর্জন করার মৌসুম। এ মাসে আল্লাহ প্রদত্ত একটি রাত রয়েছে, তা হচ্ছে শবেকদর। “যা হাজার মাস থেকেও উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে বঞ্চিত হল (মহাকল্যাণ হতে)” (সুনান আততিরমিযি: ৬৮৩, সহীহ)
লাইলাতুল কদরের গুরুত্বসমূহ হচ্ছে : এ রাতে কুরআনুল কারীম লাউহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে নাজিল হয়। এ বিষয়ে আল কুরআনে বলা হয়েছে, “নিশ্চয় আমি এটি নাজিল করেছি ‘লাইলাতুল কদরে’। [সূরা কদর : আয়াত ১]। এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। আল-কুরআনে বলা হয়েছে “লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।” [সূরা কদর : ০৩]। এ রাতে ভাগ্য নির্ধারণ হয় আল-কুরআনে বলা হয়েছে, “সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়, আমার নির্দেশে। নিশ্চয় আমি রাসূল প্রেরণকারী”। [সূরা দুখান : ৪-৫]। এ রাতে নফল সালাত আদায় করলে মুমিনদের সগিরা গুণাহগুলো মাফ করে দেয়া হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াব পাওয়ার আশায় ইবাদত করবে তাকে পূর্বের সকল গুণাহ মাফ করে দেয়া হবে” [সহীহ আল বুখারি : ৩৫]। এ রাত পাওয়ার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ কর” [বুখারি : ২০১৭]। এ রাত পাওয়ার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক পরিশ্রম করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য সময়ের তুলনায় রমজানের শেষ ১০ দিনে অধিক হারে পরিশ্রম করতেন।” [সহীহ মুসলিম : ১১৭৫]। এ রাতে পৃথিবীতে অসংখ্য ফেরেশতা নেমে আসে। আল-কুরআনে বলা হয়েছে, “সে রাতে ফেরেশতারা তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করেন। [সূরা কদর : ০৪]।
আমল : কিয়ামে লাইলাতুল কদরের নামাজ আদায় অধিক দোয়া করা। মা আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বললেন, “আয় আল্লাহর নবী! যদি আমি লাইলাতুল কদর পেয়ে যাই তবে কী বলবো? রাসূল (দ.) বললেন, সুবহানাল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহ আকবর উচ্চারণ করতে। সুবহানাল্লাহ পাঠ করলে ১০ সওয়াব ও ২০ গুনাহ মাফ। আল্লাহু আকবার উচ্চারণে ২০ সওয়াব ও ২০ গুনাহ মাফ। লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু পাঠে ২০ গুনাহ মাফ ও ২০ সওয়াব। আর আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন পাঠে ৩০টি গুনাহ মাফ ও ৩০টি সওয়াব লেখা হবে (মুসনাদ : ১১৩৪৫)। অধিক অধিক তওবা করা এবং সদাকাহ করা [আ-তারগিব ওয়াত তাহজিব]
পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ সারা দেশে মসজিদগুলোতে আলোচনা ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, অন্যান্য সময় এক হাজার মাস ইবাদত করলে যে সওয়াব পাওয়া যায়, কদরের এই রাতে ইবাদত করলে তার চেয়ে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। তাই এই রাতে ইবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহর কাছে গুণাহ মাফের জন্য প্রার্থনা করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা। এ কারণে মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে সওয়াব হাসিল ও গুণাহ মাফের রাত হিসেবে শবেকদরের ফজিলত অতুলনীয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের মতো বাংলাদেশের মুসলমানেরাও নিজেদের গুণাহ মাফ এবং অধিক সওয়াব হাসিলের আশায় নফল ইবাদত, কুরআন তেলাওয়াত, যিক্র-আযকারের মধ্য দিয়ে রাতটি অতিবাহিত করবেন। পবিত্র এই রাতে অনেকে কবরস্থানে গিয়ে স্বজনদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করেন।
পবিত্র শবেকদর উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আজ বাদ যোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র শবেকদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। এছাড় রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে ’পবিত্র শবেকদরের ফজিলত ও করণীয়’ শীর্ষক ওয়াজ মাহফিল ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণীতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে প্রিয় মাতৃভূমি ও মুসলিম জাহানের উত্তোরোত্তর উন্নতি অব্যাহত শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে আমাদের ইহকাল পরকালের মঙ্গলময় ফায়সালা কামনা করেছেন। বাণীতে পবিত্র এ রাতে ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্যলাভের প্রত্যাশা করা হয়।
এছাড়া বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও পবিত্র শবেকদর উপলক্ষে এক বাণী প্রদান করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন