সড়ক দুর্ঘটনায় ওমানে মৌলভীবাজারের ৩ জনসহ ৫ বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। নিহত তিনজনের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ও হাজীপুর ইউনিয়ন এবং কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নে। এই খবর আসার পর থেকে নিহতদের পরিবারে শোকের মাতম চলছে। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহতদের লাশের জন্য গুনছেন অপেক্ষার প্রহর। জানা যায় গতকাল বিকেলে ওমানের আদম এলাকায় এ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। প্রবাসীদের মাধ্যমে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে নিহত তিনজনের গ্রামের বাড়িতে শুরু হয় শোকের মাতম। ওমানের আদম এলাকায় কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিক ও নিহতদের গ্রামের বাড়ির সূত্রে জানা যায় বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কাজ শেষে স্ব স্ব বাসায় বাইসাইকেল যোগে বাসায় ফেরার সময় দ্রুতগতির একটি প্রাইভেটকারের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই চার বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়।
আর আশঙ্কাজনক একজনকে হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান। মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচ বাংলাদেশীর মধ্যে মৌলভীবাজারের তিনজন হলেন- কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের বিলেরপার গ্রামের লিয়াকত আলী (৩৫), শরীফপুর ইউনিয়নের সঞ্জরপুর গ্রামের সবুর আলী (৩২) ও কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের চিতলীয়া বাজারের টিলালাইন এলাকার আলম আহমদ (৩৫)। বাংলাদেশী অপর দু’জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
ওমানের কর্মরত লিয়াকত আলীর শ্যালক জসিম উদ্দীন মুঠোফোনে জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলেই তিনজনকে চিনতে পারলেও অপর দু’জনের চেহারা বিকৃতি হওয়ায় তাদের পরিচয় সনাক্ত করা যায়নি। কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের নিহত আলমের ছোট ভাই ওয়াসিম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন আমার বড় ভাই পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার আশায় বাড়িতে স্ত্রী ও ২ সন্তানকে রেখে ধার-দেনা করে ৬ মাস পূর্বে ওমানে পাড়ি দেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস পরিবারের স্বচ্ছলতার জায়গায় আজ আহাজারির মাতম। নিহতের স্ত্রী নাসিমা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘প্রবাস আমার সংসার জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে। ধারদেনা করে আমার স্বামী বিদেশে গিয়েছিলেন পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে। এখন এই ধারদেনা কিভাবে পরিশোধ করবো। এ দিকে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আলম আহমদ পরিবারেও চলছে কান্নার রোল। স্থানীয় ইউপি সদস্য শামীম আহমদ জানান, আব্দুল বাছিতের ছেলে আলম আহমদ ৫ মাস আগে ওমানে যান। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তার মৃত্যুর সংবাদে গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের লিয়াকত আলীর চাচা মাসুদুর রহমান জানান, ‘বিলেরপার গ্রামের মুসলিম আলীর ছেলে লিয়াকত প্রায় ৪ বছর আগে ওমানে যান। তার স্ত্রী ও ৯ বছর বয়সের এক সন্তান রয়েছে। সেখানে কনস্ট্রাকশনের কাজ করে পরিবার চালাতো লিয়াকত।
পাসপোর্ট নবায়ন করে দুই মাস পরে দেশে আসার কথা ছিল। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে লিয়াকত সবার ছোট। তার মৃত্যুতে পরিবারে গভীর শোক বিরাজ করছে।’ কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের সঞ্জরপুর গ্রামের নিহত সবুর আলীর মামাতো ভাই কামাল খান বলেন, ‘গ্রামের আব্দুস শহীদ এর ছেলে সবুর আলী ১০ বছর ধরে ওমান ছিল। দুই বছর আগে দেশে আসে একবার। কিছুদিন থাকার পর আবার ওমান পাড়ি জমায়। তার মা আছেন, বাবা নেই। চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে সে তৃতীয়। নিহত সবুরের ২ মেয়ে ১ ছেলে রয়েছে। তার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। নিহদের স্বজন ও এলাকাবাসীর জোর দাবি নিহত তিনজনের লাশ যাতে তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যেন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন