চালক-পথচারি ও যাত্রী সাধারণের মধ্যে সচেতনতা-সাবধানতার কারণে পথে মৃত্যু কমলেও বেড়েছে দুর্ঘটনা ও আহতের সংখ্যা। গত ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে ছোট-বড় মোট ৩ হাজার ৬৩০টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৯০৪ জন, নিহত হয়েছেন ৫৩৬ জন। সেভ দ্য রোডের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।
মহাসচিব শান্তা ফারজানা স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে জানা যায়, বাইক লেন না থাকা, অনিয়ন্ত্রিত গতিতে বাহন পরিচালনা আর আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হওয়ায় ফেব্রুয়ারি মাসে ১ হাজার ১১২ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১ হাজার ১৫২ জন, নিহত হয়েছেন ১১৭ জন; ৭৮৯ টি ট্রাক দুর্ঘটনায় আহত ৮১৫ এবং নিহত হয়েছেন ১৪৬ জন, ৮১০টি বাস দুর্ঘটনায় আহত ৯৬১ এবং নিহত হয়েছেন ১৬৫ জন, সিএনজি-নাসিমন-করিমনসহ অবৈধ বিভিন্ন ধরণের বাহনে ৯১৯ টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৯৭৬ এবং নিহত হয়েছেন ১০৮ জন।
সংগঠনের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়- ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নৌপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৭৬টি। আহত হয়েছে ১১৭ জন, নিহত হয়েছে ১৮ জন। রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ১১১ টি। আহত হয়েছে ৮৭। নিহত হয়েছে ১৮ জন। আকাশপথে কোন দুঘটনা না ঘটলেও বিমানবন্দরের রানওয়েতে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
সড়কপথে দুর্ঘটনা না কমার জন্য সারাদেশে গণপরিবহন সেক্টরে কেবলমাত্র প্রশাসনিক অদক্ষতাই নয়; দায়ী দুর্নীতি-অনিয়ম এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। পাশাপাশি যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন সেই সরকারের লেজুড়বৃত্তি করে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া একশ্রেণির চাঁদবাজ সিন্ডিকেট কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থার কারণে যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস, ট্যাক্সিক্যাব ও অটোরিকশার এই মহাসঙ্কট ও স্বল্পতা। সেই অধিকার রক্ষায় মালিক-শ্রমিক-প্রশাসনিক এবং সাধারণ জনগনের সমন্বয়ের কোন বিকল্প নেই বলে সেভ দ্য রোড মনে করে। আর তাই বারবার ৭ দফা দাবির কথা উল্লেখ করে তারা।
আর সেই ৭ দফা হলো- ১. মিরেরসরাই ট্রাজেডিতে নিহতদের স্মরণে ১১ জুলাইকে ‘দুর্ঘটনামুক্ত পথ দিবস’ ঘোষণা করতে হবে। ২. ফুটপাথ দখলমুক্ত করে যাত্রীদের চলাচলের সুবিধা দিতে হবে। ৩. সড়ক পথে ধর্ষণ-হয়রানি রোধে ফিটনেস বিহীন বাহন নিষিদ্ধ এবং কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যতিত চালক-সহযোগী নিয়োগ ও হেলপার দিয়ে পরিবহন চালানো বন্ধে সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ৪. স্থল-নৌ-রেল ও আকাশ পথ দুর্ঘটনায় নিহতদের কমপক্ষে ১০ লাখ ও আহতদের ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ সরকারিভাবে দিতে হবে। ৫. ‘ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স রুল’ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সত্যিকারের সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ‘ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন’ বাস্তবায়ন করতে হবে। ৬. পথ দুর্ঘটনার তদন্ত ও সাজা ত্বরান্বিত করণের মধ্য দিয়ে সতর্কতা তৈরি করতে হবে এবং ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের পূর্ব পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা-সহমর্মিতা-সচেতনতার পাশাপাশি সকল পথের চালক-শ্রমিক ও যাত্রীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সকল পরিবহন চালকের লাইসেন্স থাকতে হবে। ৭. ইউলুপ বৃদ্ধি, পথ-সেতুসহ সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যাতে ভাঙা পথ, ভাঙা সেতু আর ভাঙা কালভার্টের কারণে আর কোন প্রাণ দিতে না হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন