ইনকিলাব ডেস্ক : সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে লিবিয়ায় শরণার্থী-নির্যাতনের এক ভয়াবহ চিত্র। ওই প্রতিবেদনের নথিতে দেখা যায়, লিবিয়ায় বেশিরভাগ শরণার্থী মানব পাচারকারীদের দ্বারা হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও অনাহারের শিকার হন। গত শুক্রবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে পুগলিয়া ও সিসিলির অভ্যর্থনা কেন্দ্র থেকে গত কয়েক মাসে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আসা ৯০ জনেরও বেশি শরণার্থী ও অভিবাসন প্রত্যাশীর সাক্ষাৎকার যুক্ত করা হয়। সাব-সাহারান আফ্রিকা থেকে দারিদ্র্য ও যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আশ্রয় নিতে অনেকেই আসেন লিবিয়ায়। কাছাকাছি ইউরোপীয় কোন দেশে প্রবেশাধিকার পাওয়ার আশাতেই আসেন এই মানুষগুলো।
এদের মানবেতর জীবনের পেছনে কারণ হিসেবে ইসলামিক স্টেটকে দায়ী করা হলেও এদের জীবনের চরম দুর্ভোগের জন্য মূলত দায়ী মানবপাচারকারী গোষ্ঠীগুলো। শরণার্থীদের অনেকেই ব্যাপক যৌন সহিংসতা, নির্যাতন ও শোষণের শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন। অ্যামনেস্টির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সাক্ষাৎকারে অনেক নারীই তাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় ধর্ষণের ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছেন। মানবপাচারকারীরা প্রায়ই টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ার মিথ্যা অভিযোগ তুলে সংঘবদ্ধভাবে শরণার্থী নারীদের ধর্ষণ করে থাকে।
ইরিত্রিয়ান নারী রামায়া বলেন, ‘নিরাপত্তা রক্ষীরা এসে নিজের পছন্দ মতো মেয়েদের তুলে নিয়ে যেত। মেয়েরা প্রতিবাদের চেষ্টা করতো, কিন্তু যখন কারো মাথায় বন্দুকের নল তাক করা থাকে তখন প্রাণরক্ষা করতে চাইলে আর কিছুই করার থাকে না। আমাকে তিনজন লিবিয়ান পুরুষ দুইবার ধর্ষণ করেছে। আমি কিছুই বলতে পারিনি কারণ আমি বাঁচতে চেয়েছি।’
তারা আরও জানান, পাচারকারীরা এমনকি গর্ভবতী নারীদেরও ধর্ষণ করতো।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক সময় মুক্তিপণের দাবিতেও বন্দি করে রাখা হয় অনেক শরণার্থীকে। বন্দিদশায় তাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য করা হয়, খাদ্য পানীয় থেকে বঞ্চিত করা ছাড়াও প্রায়শ:ই তাদের মারধোরও করা হয়। ইরিত্রিয়া থেকে আসা সেমরে জানান, তিনি অন্তত চারজন শরণার্থীকে চোখের সামনে অনাহারে ও বিনা চিকিৎসায় মরে যেতে দেখেছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক ডেপুটি ডিরেক্টর মাগদালেনা মুঘারাবি লিবিয়া কর্তৃপক্ষ এবং ইইউয়ের কাছে শরণার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষার জোর দাবি জানান। সূত্র : আল জাজিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন