বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঝিনাইদহে পুলিশের কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ থামছে না

প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এবার সাবেক শিবির নেতা নিহত
ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা : ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর কবরস্থানে পুলিশের সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ইবনুল ইসলাম পারভেজ (২৯) নামে এক শিবির নেতা নিহত হয়েছেন। এই ঘটনা ঘটেছে উত্তর কাস্টসাগরা গ্রামের রাধামদন মঠের অনতিদূরে, যেখানে শুক্রবার ভোরে মঠের সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে।
নিহত পারভেজ ঝিনাইদহ শহরের বনানীপাড়ার জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে। তিনি ঝিনাইদহ শহর শিবিরের সাবেক সভাপতি ছিলেন। বন্দুকযুদ্ধে আরিফ ও সামান্ত কুমার নামে দুই কনস্টেবলের আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তাদের ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। নিহতের পরিচয় পুলিশ নিশ্চিত করতে না পারলেও লাশটি শিবির নেতা পারভেজের বলে তার স্বজনরা সকালে হাসপাতালে এসে শনাক্ত করেন।
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি হাসান হাফিজুর রহমান জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ওই এলাকায় পুলিশ টহল দিচ্ছিল। পুলিশের টহল যানটি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটী ইউনিয়নের মধুপুর কবরস্থানের কাছে পৌঁছালে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ করে গুলি চালায়। ওসির ভাষ্যমতে আত্মরক্ষার্থে পুলিশও গুলি ছোড়ে। শুরু হয় সন্ত্রাসীদের সাথে বন্দুকযুদ্ধ। এ সময় সময় অজ্ঞাতনামা এক যুবক নিহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ১টি পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি, একটি ছোরা, ৩টি রামদা ও একটি চাপাতি উদ্ধার করে।
তবে নিহতর বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযোগ করেন, গত ১৬ জুন রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ৯ নাম্বার রোডের ১১ নাম্বার বাসার ৬তলা থেকে সাদা পোশাকের লোকজন তুলে নিয়ে যায় পারভেজকে। পারভেজের সাথে আরো তিনজনকে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে শিবির নেতা শহীদ আল মাহমুদ ও আনিসুর রহমান শুক্রবার ভোরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের মাঠে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
এদিকে গত বুধবার শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে ইবনুল ইসলাম পারভেজ, শহীদ আল মাহমুদ ও আনিচুর রহমান তাদের কর্মী দাবী করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠায়।
এছাড়া ঝিনাইদহ শহরের পাবলিক হেলথ জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন সোহেল রানা (২২) ২৮ দিন ধরে ও কালীগঞ্জ উপজেলার নলডাঙ্গা এলাকার শিবির কর্মী সবুজ হোসেন ১০ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। গত ৩ জুন (শুক্রবার) জুম্মার নামাজের পর একটি কালো রঙের হাইয়েজ গাড়িতে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে কে বা কারা তুলে নিয়ে যায় রানাকে। সেই থেকে তার কোনো সন্ধান নেই। সোহেল রানা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কামারকুন্ডু গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে। অন্যদিকে নলডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে সবুজকে বাড়ি থেকে সাদা পোশাকের লোকজন তুলে নিয়ে যায়। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে সোহেল রানা ও সবুজকে আটক করা হয়নি বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল সকাল ৮ টার দিকে যশোর সদরের হৈবতপুর ইউনিয়নের জোড়াদহ গ্রামের একটি পুকুর থেকে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ পৌরসভা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবুজর গিফারি ও অপর নেতা শামীম হোসেনের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। গত ১৮ মার্চ শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ঝিনাইদহ জামতলা মোড় থেকে দু’টি মোটরসাইকেলযোগে ৪ ব্যক্তি পুলিশ পরিচয়ে যশোর এমএম কলেজের ছাত্র আবুজর গিফারি এবং ২৫ মার্চ ঝিনাইদহ কে সি কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র শামীম হোসেনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে সে সময় অভিযোগ করেছিল তাদের পরিবার ও ছাত্রশিবির।
এদিকে ঝিনাইদহ শহর শাখা শিবিরের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম গনমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছেন, পুরোহিত ও সেবায়েত হত্যার আসামীদের ধরতে ব্যার্থ হয়ে পুলিশ শিবিরের মেধাবী ছাত্রদের ধরে একের পর হত্যা করছে। তিনি আইন শৃংখলা বাহিনী কর্তৃক পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে বন্দুক যুদ্ধ বলে চালানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এসব ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব যাদের, তারাই নৃশংসভাবে, পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করল। তিনি বলেন, আজ যাদেরকে সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে, তাদের নিজ এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখুন, তারাই ন¤্র-ভদ্র, অমায়িক, সদালাপী পরোপকারী মেধাবী ছাত্র। অথচ রাষ্ট্রীয় বাহিনী আজ তাদের সন্ত্রাসী সাজালো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন