দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র
স্টাফ রিপোর্টার : গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় শুক্রবার রাতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় বিদেশী নাগরিকসহ পুলিশ কর্মকর্তা নিহতের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, সন্ত্রাসীদের পরিচয় সন্ত্রাসীই। ইসলামের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। শান্তির ধর্ম ইসলাম কোন উগ্রতা ও সহিংসতাকে সমর্থন করে না। নেতৃবৃন্দ বলেন, গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলা করে দেশী-বিদেশী নাগরিকদের জিম্মি করে যারা এই নারকীয় হত্যাকা- চালিয়েছে তারা ইসলাম, দেশ ও মানবতার চিরশত্রু। এই শত্রুদের বিরুদ্ধে আলেম-উলামাসহ দেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের রুখে দাঁড়াতে হবে। পবিত্র রমজান মাসে এই বর্বর হামলা ও হতাহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ নিহতদের আত্মার মাগফেরাত ও তাদের পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। নেতৃবৃন্দ এ হামলা দেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ। যে কোন মূল্যে এ ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে দেশ ও জাতিকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। এই বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলার সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবী জানাচ্ছি।
ইসলামী ঐক্যজোট
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় বিদেশী নাগরিকসহ পুলিশ কর্মকর্তা নিহতের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী ঐক্যজোট। গতকাল জোটের এক জরুরী বৈঠকে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা দেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ। যে কোন মূল্যে এ ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে দেশ ও জাতিকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
সভায় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, সন্ত্রাসীদের নিন্দনীয় ভয়াবহ সহিংসতায় আমরা স্তম্ভিত। দেশের মানুষ আতংকে, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ও অস্বস্তিতে ভুগছে। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সাথে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করুন। দেশের নাগরিক ও বিদেশী কূটনীতিক ও নাগরিকদের জীবন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানের প্রশংসা করে বলা হয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আল্লাহর রহমতে বিচক্ষণতা, বুদ্ধিমত্তা, সাহস ও দৃঢ়তার সাথে শ্বাস্বরুদ্ধকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। মজলিসে শূরার সভায় সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, আমরা কাপুরুষোচিত, বর্বর এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। জিম্মিদের মুক্ত করতে গিয়ে যেসকল পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন আমরা তাদের মাগফিরাত কামনা এবং তাদের পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। একই সাথে আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করছি। এই বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলার সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবী জানাচ্ছি। বাদ জোহর লালবাগস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ইসলামী ঐক্যজোটের এক জরুরী সভায় নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। জোট চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন- মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ, ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, মাওলানা আবদুর রশীদ মজুমদার, মাওলানা যুবায়ের আহমদ, মাওলানা জসিম উদ্দীন, যুগ্ম মহাসচিব মুফতী তৈয়্যব হোসাইন, মাওলানা আবুল কাশেম, মাওলানা শেখ লোকমান হোসাইন, মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াছেল, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা আলতাফ হোসাইন, মাওলানা এ কে এম আশরাফুল হক, মাওলানা আবুল ফারাহ আমিনী, মাওলানা আনছারুল হক ইমরান প্রমুখ।
খেলাফত মজলিস
গুলশানের রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলা ও জিম্মি সংকটের ঘটনার র্তীর নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়ে খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, গুলশানের এ ভয়াবহ হামলার ঘটনা দেশ ও দেশের জনগণের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। দেশ ও দেশের জনগণকে বিপদাপন্ন করার জন্যে পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালানো হচ্ছে। এ হামলার সাথে জড়িতরা ইসলাম ও মুসলমানের শত্রু। সুরক্ষিত কূটনৈতিক জোনে এহেন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দেশবাসী স্তম্ভিত, আতংকিত ও উদ্বিগ্ন। বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় এ সন্ত্রাসী হামলায় জিম্মি ২০ বিদেশী নাগরিকসহ নিহত ও আহতদের জন্যে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং হতাহতদের শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
খেলাফতে ইসলামী বাংলাদেশ
গুলশানের একটি অভিজাত রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলায় ২০ বিদেশী নাগরিকসহ দুই পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খেলাফতে ইসলামীর আমীর মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী ও মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান। শনিবার দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলটির আমীর ও মহাসচিব যৌথভাবে এ নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলা করে দেশী-বিদেশী নাগরিকদের জিম্মি করে যারা এই নারকীয় হত্যাকা- চালিয়েছে তারা ইসলাম, দেশ ও মানবতার চিরশত্রু। এই শত্রুদের বিরুদ্ধে আলেম-উলামাসহ দেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের রুখে দাঁড়াতে হবে। তারা বলেন, পবিত্র রমজান মাসে এই বর্বর হামলা ও হতাহতের ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও তাদের পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। বিবৃতিতে তারা বলেন, কোন অবস্থাতেই বাংলাদেশকে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হতে দেয়া হবে না।
ইউনাইটেড মুসলিম উম্মাহ
হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলা ও জিম্মি পরিস্থিতির ঘটনার র্তীর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ‘ইউনাইেটে মুসলিম উম্মাহ বাংলাদেশ’ এর চেয়ারম্যার অলি উল্লাহ বুলবুল ও সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ইসলাম এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা-কে কোনভাবেই সমর্থন করে না। ইসলামে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের কোন স্থান নেই। এই ধরনের কর্মকা- বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের সুগভীর ষড়যন্ত্রের অংশ ছাড়া আর কিছুই নয়। ইসলাম শান্তির ধর্ম। মানবতার মুক্তি ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই ইসলামের লক্ষ্য। এই ধরনের ঘৃণ্য সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে গোটা মুসলিম উম্মাহকে সোচ্চার হতে হবে। নেতৃদ্বয় বলেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
Ñনেজামে ইসলাম পার্টি
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি নেতৃবৃন্দ আজ এক জরুরি সভায় গুলশানে রেস্তোরাঁয় স্মরণকালের ভয়ংকর হামলায় হতাহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন যে, গুলশানের এই হামলা বর্বরতার ইতিহাসে আরেকটি সংযোজন। এধরনের লোমহর্ষক ও হৃদয়বিদারক হত্যাকা- দেশের শান্তি ও সুস্থিতির জন্যে মারাত্মক হুমকীস্বরূপ। এতে দেশের জনগণ দারুণভাবে উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। এ ধরনের আতঙ্কজনক ঘটনায় সমাজে নিরাপত্তাহীনতা ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিতেই সহায়তা করবে। হামলাকারীরা দেশকে অরাজকতা, রক্তপাত, নৈরাজ্য ও হানাহানির আবর্তে ঠেলে জান্নাতে যাওয়ার মিথ্যা আশ্বাসে অপচেষ্টায় মেতে উঠে জাহান্নামী হয়েছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, জিম্মি সংকটের সমাপ্তিতে জাতি স্বস্থির নিঃশ^াস ফেলেছে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন যে, এ ধরনের বিভৎস হত্যাকা- সংঘটিত হওয়ায় মনে হয় শান্তির উজ্জ¦ল দৃষ্টান্তের দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে একশ্রেণির স্বপ্নবিলাসী অপশক্তি দেশ, জাতি ও জনগণকে ধ্বংস করার অশূভ চক্রান্তে মেতে উঠেছে। এ ধরনের ন্যাক্কারজনক হত্যাকা-ে বিদেশিদের নিশানা বানানোর অন্তর্নিহিত রহস্য উদ্ঘাটন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। সভায় এধরনের নারকীয় হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্যে জাতি-ধর্ম এবং দলমত নির্বিশেষে সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
তারা হতাহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পদক্ষেপ গ্রহণের জনের সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সভায় মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীর সভাপতিত্ব করেন।
খেলাফত আন্দোলন
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ গুলশানে নৃসংশ হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, কোনো সভ্য মানুষ যার ভেতরে মানবতা আছে সে কোনো দিন এ ধরণের জঘন্যতম হত্যাকা- ঘটাতে পারে না। যারা এ কাজ করেছে তারা মানুষরুপী হিংস্র জানোয়ার। ইসলাম এ ধরনের হত্যাকা-কে মহাপাপ ও হত্যাকারীকে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের উচিত, এ ঘটনার নেপথ্যে কারা রয়েছে অবিলম্বে তাদের চিহ্নিত করে এবং গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা।
গতকাল রাজধানী ঢাকার কিল্লার মোড়ে খেলাফত কৃষক-শ্রমিক আন্দোলনের এক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। মাওলানা মুহাম্মাদ হুসাইন আকন্দ এর সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মাদ আজম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি ফখরুল ইসলাম, মাওলানা সাইফুল ইসলাম সুনামগঞ্জী, মাওলানা সুলতান মহিউদ্দীন, মাওলানা আবুল কাসেম কাসেমী ও হাফেজ মুহাম্মাদ দেলোওয়ার প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন