ইনকিলাব রিপোর্ট : বিশ্ব তাবলীগ জামাতের মূল কেন্দ্র দিল্লির নিজামুদ্দিন এলাকার বাংলাওয়ালি মসজিদে এ বছর রমজানের পবিত্রতা, ইবাদত-বন্দেগীর আবহ ও তাবলীগী কার্যক্রমের পরিবেশ ছিল না বললেই চলে। যা বিশ্বব্যাপী তাবলীগ জামাতের সমর্থকদের জন্য ছিল সীমাহীন দুঃখের সংবাদে। দিল্লি মারকাজ থেকে প্রাপ্য খবরে জানা গেছে, রীতিভঙ্গ করে শূরা পদ্ধতি বাতিল করে অন্যতম মুরব্বী মওলানা সাআদের এককভাবে তাবলিগের আমির হওয়ার উদ্যোগ গ্রহণই এ বিশৃঙ্খলার মূল কারণ।
রমজানে দিল্লির মারকাজে তাবলীগী দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, গ্রেফতারি, অস্ত্র সংরক্ষণ, পুলিশ মোতায়েন ইত্যাদি ভারতীয় মিডিয়ায় প্রচারিত হলে বিশ্বব্যাপী তাবলীগ সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দেয়। বাংলাদেশে প্রচুর তাবলীগভক্ত রয়েছেন, প্রতি বছর তাবলিগের বিশ্ব ইজতেমা টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবং ঢাকার কাকরাইল মসজিদ দিল্লির নিজামুদ্দিনকে কেন্দ্র বিবেচনা করায় সেখানকার গোলযোগ সম্পর্কে বাংলাদেশী তাবলীগীরাও যথেষ্ট দুশ্চিন্তায় আছেন।
এ সম্পর্কে ইনকিলাবের সাথে কথা বলেন তাবলিগের একনিষ্ঠ কর্মী শামসুল আলম। তার মতে, প্রতিষ্ঠিত নিয়ম ভেঙে পরামর্শ পরিষদ তুলে দিয়ে মাওলানা সাআদের একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে কিছু লোকের উশৃঙ্খলতায় বিশ্ব তাবলীগ এখন হুমকির মুখে। ইতোমধ্যে দিল্লির প্রধান মুরব্বীদের অনেকেই নিজামুদ্দিনে যাওয়া-আসা বন্ধ কবে দিয়েছেন। গত ৩ জুন শূরা সমর্থক মাওলানা ইয়াসিনের ওপর একক আধিপত্য বিস্তারে সচেষ্ট মাওলানা সাআদ গ্রুপের লোকজন হামলা চালালে তিনি রক্তাক্ত জখম হন। এরপর থেকে দিল্লি পুলিশ মসজিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ১৯ জুন মেওয়াত ও যমুনাপাড়ের কিছু বহিরাগত মসজিদে অবস্থান নেয়। তারা সেদিন মাওলানা যোহায়েরুল হাসান ও তার লোকদের অপদস্ত করে। ইফতারের আয়োজনে সমবেত দেশী-বিদেশী অতিথিদের সামনেই উভয় পক্ষের মারধর চলে। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে মসজিদে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বিষয়টি নিয়ে দিল্লি থেকে কথা বলেন তাবলীগের কর্মী ওজাহত হোসেন। মোবাইলে দেয়া সাক্ষাৎকারে এই ব্যবসায়ী জানান, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা আধিপত্য বিস্তারের এ লড়াই পবিত্র রমজানেও থামেনি। সাবেক আমির মাওলানা যোবায়েরুল হাসানের পুত্রদের মারকাজ থেকে বিতাড়িত করতে একক আধিপত্য বিস্তারকারী মাওলানা সাআদ তার ভক্তদের মসজিদে সমবেত করেছেন। পুলিশ সন্দেহ করছে, তাদের কেউ কেউ অস্ত্রধারী। যেকোনো সময় তাবলীগী মারকাজে পুলিশি তল্লাশি শুরু হতে পারে। সংঘর্ষের সময় পুলিশ দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করলেও পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে ভারতের আলেম-ওলামারা কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে ওজাহত হোসেন জানান, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের মুরব্বীরা মাওলানা সাআদকে নিয়মনীতি মেনে চলার কথা বললেও কোনো কাজ হচ্ছে বলে মনে হয় না। পাকিস্তানের মাওলানা সলিমুল্লাহ খান দিল্লিতে পত্র লিখেও ব্যর্থ হয়েছেন। মাওলানা আরশাদ মাদানী ও দেওবন্দের মুহতামিম মুফতি আবুল কাসেম নোমানীর অনুরোধও রাখেননি মাওলানা সাআদ। তার নামে নানা অনিয়ম, অভিযোগ ও অসন্তোষ দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত হলেও এবং তাবলীগের বড় মুরব্বীরা তাকে ছেড়ে গেলেও তিনি নিজের অবস্থান থেকে ফিরে আসেননি।
বাংলাদেশে তাবলীগের ভক্ত ও বিখ্যাত আলেমদের সাথে কথা বলেও তাদের উদ্বেগ-হতাশার কথা শোনা গেছে। ইসলামপুর মাদরাসার মুফতি আবুল হাসান ইনকিলাবকে বলেন, সাআদ সাহেব যদি কারো কথা না শোনেন তাহলে বিশ্ব তাবলীগের নেতৃত্ব ও ঐক্য ভেঙে পড়বে দিল্লির কর্তৃত্ব বা নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। কাকরাইল তখন দিল্লিকে অনুসরণ করবে না। পাকিস্তানের রাইবেন্ড আলাদা হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের সকল তাবলীগী মারকাজ তখন আলাদা ব্যবস্থায় চলতে শুরু করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন