কুুটনৈতিক সংবাদদাতা : বাংলাদেশে সমন্বিত ক‚টনৈতিক ও গোয়েন্দা তৎপরতা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইতালি ও জাপান। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওলো জেনতিলিনি ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমো কিসিদার টেলিফোন আলাপ করে এ সিদ্ধান্ত নেন। গতকাল সোমবার ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, ৪ জুলাই সকালেই ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করেন। টেলিফোনে তারা গত ১ জুলাই ঢাকায় হলি আর্টিজান বেকারি নামের রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ করেন।
ওই হামলায় ৯ ইতালীয় এবং ৭ জাপানি নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। আলাপে তারা সিদ্ধান্ত নেন ঢাকায় উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে ইতালি ও জাপান বাংলাদেশে সমন্বিত ক‚টনৈতিক ও গোয়েন্দা তৎপরতা চালাবে।
এদিকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহযোগিতার পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বøুম বার্নিকাট, ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমা ও ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। গত সোমবার দুপুরে আর্মি স্টেডিয়ামে গুলশান হামলায় নিহতদের কফিনে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তারা।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বøুুম বার্নিকাট বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। আমরা সব ধরনের সহযোগিতা দিতে রাজি। কেননা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গুলশানের ভয়াবহ হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় আমরা মর্মাহত।
এ সময় ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একসঙ্গে কাজ করার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এটি কোনো দেশের একার সমস্যা নয়। আমাদের উচিত স্কুল-কলেজের যুবকদের ঘৃণার পরিবর্তে ভালোবাসা ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়া।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণদের প্রতি আমার অনুরোধ, উগ্র মতাদর্শের আহŸানে কান দেবেন না। আমরা সবাই মুক্ত মানুষ, সবাই মিলে মুক্ত হিসাবে বাঁচব।
মারিও পালমা বলেন, আমি দুঃখবোধ করছি, আমি দুঃখিত ওই তরুণদের জন্য, যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা শিক্ষিত ও বয়সে তরুণ। তাই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমাদের সব শিক্ষা ব্যবস্থায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, যাতে তরুণরা আরও বেশি সচেতন হয়।
মানুষকে রক্ষা করতে আমার দেশের সরকার ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর সরকারের পক্ষে সব ধরনের কারিগরি সহযোগিতার প্রস্তাব করতে চাই, যোগ করেন তিনি।
একই অনুষ্ঠানে ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আছি। শ্রিংলা বলেন, গুলশান হামলার ঘটনায় আমাদের প্রধানমন্ত্রী মর্মাহত, দুঃখিত আমরাও। তিনি ব্যক্তিগতভাবে এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন তিনি। শ্রিংলা বলেন, আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের পাশে থাকব আমরা।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-জাপান আলোচনা
বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করেছেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সন্ত্রাস ও জঙ্গি প্রশ্নে দুই দেশ আরও সুদৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গীকার করেছে। ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, মন্ত্রী কিশিদা মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিজ ক্যরোলিন কেনেডির সঙ্গে কথা বলেন। প্রায় ১০ মিনিট তাদের মধ্যে কথা হয়। সেখানে রাষ্ট্রদূত ক্যরোলিন ঢাকায় সন্ত্রাসীদের হাতে জাপানী নাগরিকদের নিহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা কখনও সহ্য করার নয়। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার জাপান সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে লড়াইয়ে আগ্রহী। এ অঞ্চলে জাপানকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য যে কোন কিছু করতে প্রস্তুত বলেও জানান রাষ্ট্রদূত ক্যরোলিন। যুক্তরাষ্ট্রের অফারের বিষয়ে জাপানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। ঢাকার ঘটনাকে হিংস্রকর্ম আখ্যা দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের সঙ্গে মিলে জাপান সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে কোন পদক্ষেপ নিতে বদ্ধপরিকর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন