শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সন্ত্রাসী হামলার সতর্কতা আগেই জানিয়েছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ঢাকায় আইএসের হামলার ঝুঁকির আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। গত মাসে দুই দেশের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের সময় এই সতর্কবার্তা জানানো হয়েছিল। গত শুক্রবারের হামলা প্রতিরোধ করার মতো সরাসরি কোনো তথ্য ছিল না ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে। তবে ভারতের মাটিতে বাংলাদেশি উগ্রপন্থিরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন বলে প্রমাণ দিয়েছিলেন তারা। বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। খবরে বলা হয়, ভারতীয় গোয়েন্দারা বাংলাদেশে আইএসের প্রোপাগান্ডা জোরদারের বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারতীয় গোয়েন্দাদের শেয়ার করা নানা তথ্যের মধ্যে এই সতর্কবার্তাও ছিল যে জিহাদিরা বড় ধরনের কোনো কার্যক্রমের পরিকল্পনা করছে। আমাদের কাছে এর অল্প কিছু তথ্যই ছিল। কিন্তু তাদের পরিকল্পনা ধরে ফেলার মতো পর্যাপ্ত তথ্য ছিল না আমাদের হাতে।’
ঢাকা হামলার তদন্তকারী আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, তারা এখন হামলাকারী সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ ও গোলাবারুদ সরবরাহের উৎস সম্পর্কে জানার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
এর আগে এপ্রিলে আইএসের নিজস্ব ম্যাগাজিন দাবিকে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে হামলার হুমকি দেয়া হয়েছিল। ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রধান সন্ত্রাসী সংগঠন জেএমবি বেশকিছু হত্যাকাÐ পরিচালনা করেছে। এর বেশিরভাগই করা হয়েছে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে বা গলা কেটে, যেসব হামলার শিকার হয়েছেন বিদেশি দাতা সংস্থার কর্মী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। জেএমবিই বর্তমানে আইএসে রূপান্তরিত হয়েছে। এরা কিছু বোমা হামলাও করেছে, যেসব বোমা পশ্চিমবঙ্গের বুর্দোয়ানের একটি গোপন কারখানায় তৈরি বলে অভিযোগ রয়েছে। ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) গোয়েন্দারা বুর্দোয়ানের ওই কারখানায় একটি বোমা বিস্ফোরণের তদন্তে জানিয়েছিলেন, বোমা তৈরির প্রশিক্ষণের জন্য সেখানে বেশ কয়েকজন নিয়োজিত ছিলেন। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে পুলিশ দাউখানগরে একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের খোঁজ পায়। ওই ক্যাম্পে জেএমবির সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। এ বছরের এপ্রিলে আসাম পুলিশ চিরাং জেলা থেকে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। এরা আমগুড়ি গ্রামে জেএমবির একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প পরিচালনা করতেন অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাদের। স্থানীয় আলেম জয়নাল আবেদিন আশপাশের গ্রাম থেকে ওই ক্যাম্পে তরুণদের প্রশিক্ষণের জন্য সংগ্রহ করে বেড়াতেন বলে জানায় পুলিশ। আসামের একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সকলের নজর এড়িয়েই দীর্ঘদিন ধরে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ পরিচালনা করার মতো বড় জায়গা রয়েছে। এই এলাকায় বেশকিছু অপরাধীচক্র থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এসব অপরাধীরাই প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র সরবরাহ করতে সক্ষম। ওয়েবসাইট।
রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অকার্যকারিতার কারণেই গুলশান হামলা : হিন্দুস্তান টাইমস
রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অকার্যকারিতার কারণেই গুলশানের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে ভারতের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে। গত রোববার ‘বাংলা সিজ : বেøম ডিপ ডিসফাংশন ইন পলিটিক্স অ্যান্ড স্টেট ইনস্টিটিউশন্স’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে পত্রিকাটি এই মন্তব্য করেছে। গত শুক্রবার রাতের হামলার পর শেখ হাসিনা সরকারের সন্ত্রাসদমন নীতি আরো বেশি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়বেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়। বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামির ওপর সরকারের নিপীড়নমূলক কার্যক্রমের বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে এতে। এই সঙ্কট থেকে উত্তরণে নতুন ধরনের রাজনীতির প্রয়োজন বলেও এতে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গুলশানে বাংলাদেশ মুম্বাই-ধরনের আত্মঘাতী হামলার শিকার হয়েছে। ইরাক ও সিরিয়ায় তাÐব চালানো ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। গ্রæপটির দাবির সত্যতা কয়েক দিনের মধ্যেই নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে রাষ্ট্রীয় ‘এস্টাবলিশমেন্ট’ এবং চরমপন্থীবাহিনীর মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে যে তিক্ত ও রক্তাক্ত যুদ্ধ চলছে, যেটা সুস্পষ্ট করার জন্যই দৃশ্যত সচেতনভাবে বিদেশীদের টার্গেট করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই হামলার পর শেখ হাসিনা সরকারের সন্ত্রাসদমন নীতি আরো বেশি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়বে। এ ধরনের ব্যবস্থা মাঝে মাঝে সহায়ক হয়, যেমন হয়েছিল মুম্বাই হামলার পর পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ লস্কর-ই-তৈয়বার লাগাম টানতে বাধ্য হওয়ায়।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে শেখ হাসিনা সরকারের এই ধরনের কোনো সুবিধা নেই। ইসলামি গ্রæপগুলো গত বছরজুড়ে বøগার, নাস্তিক, প্রকাশক, হিন্দু, শিয়া ও বিদেশীদের ওপর বেশ কয়েকটি নির্মম, প্রায়ই অবর্ণনীয় সহিংস হামলা চালিয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, বাংলাদেশে চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা প্রায় অসম্ভব বলেই প্রমাণিত হয়েছে, কারণ এগুলো নিজেরাই বাংলাদেশের রাজনীতি এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে গভীর অকার্যকারিতার ফসল। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং সরকার উভয়ই ওই অকার্যকারিতার ফসলও চালক। বাংলাদেশে মারাত্মক সহিংস রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবেশ রয়েছে এবং অচলাবস্থার রাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে বিবদমান দুটি দল। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রæপের (আইসিজি) মতে, এটা চরমভাবে দলীয় রাষ্ট্র কাঠামো, এখানে সিভিল সার্ভিস, পুলিশ ও বিচার বিভাগ রাজনৈতিক আনুগত্যের মাধ্যমে নিয়োগ করা হয় কিংবা ফায়দা তোলা হয়। শেখ হাসিনার সরকার সহিংস ইসলামপন্থীদের বিরোধী, কিন্তু তারাও বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর মতো বিরোধী দলগুলোর ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছে। এটা এবং দলীয় প্রকৃতির ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা বিচ্ছিন্নতার জন্ম দিয়েছে, চরমপন্থী সংস্থা এবং সন্ত্রাসী গ্রæপগুলোর আবেদন বাড়িয়ে দিয়েছে। অধিকন্তু, রাজনীতি-চালিত আমলাতন্ত্রকেও একটি সরকারকে অব্যাহত রাখা এবং সেদিকে যাওয়ার কাজে নিয়োজিত রাখা হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার মিডিয়া এবং নাগরিক সমাজের অংশগুলোর ওপরও দমন চালিয়ে তার নিজের বৈধতা ক্ষুন্ন করেছে। হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্কটে ভুগছে, যেখানে সন্ত্রাসবাদ কেবল একটি রূপ। এখন ষড়যন্ত্রকারীদের খোঁজার দিকে নজর দেয়া হবে, কিন্তু দেশটির প্রয়োজন নতুন ধরনের রাজনীতি এবং ধারাবাহিক পদক্ষেপ যা সামাজিক উত্তেজনা নিরসন করবে। ঠিক এখন এটা কল্যাণকামী চিন্তার মতো শোনায়।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন