শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

কাশ্মীরে সেনাদের গুলিতে দুই সঙ্গীসহ হিজবুল নেতা নিহত

সেনা নির্যাতনের বদলা নিতেই সহিংস হয়েছিলেন বুরহান

প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন হিজবুল মুজাহিদীন কমান্ডার বুরহান মুজফফর ওয়ানি। অনন্তনাগের কোকেরনাগ এলাকায় তার বাহিনীর সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধ চলাকালে দুই সঙ্গীসহ তিনি নিহত হন বলে দাবি করেছে ভারতীয় পুলিশ। এ ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলৌমা ও শ্রীনগরের আংশিক অঞ্চলে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এদিকে অশান্ত পরিস্থিতিতে অমরনাথ যাত্রা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ।
হিজবুল মুজাহিদীন কমান্ডার বুরহান মুজফফর ওয়ানি ছিলেন ২২ বছর বয়সী তরুণ। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী, তরুণদের ভারতবিরোধী হামলায় শামিল হওয়ার ডাক দিয়ে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে সম্প্রচারিত একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে তাকে। বলা হচ্ছে, তিনি নিজে সরাসরি হামলায় শামিল হননি বা একটিও গুলিও হয়তো ছোঁড়েননি। কিন্তু কাশ্মীরে সহিংস কার্যকলাপ সংগঠিত করার পেছনে মাথা ছিল বুরহান। সর্বশেষ তাকে দেখা গিয়েছিল গত মাসে অনন্তনাগে তিন পুলিশ কর্মীর নিহত হওয়ার পর সোস্যাল মিডিয়ায় সম্প্রচারিত ভিডিওতে। তাতে তিনি পুলিশের ওপর আরও হামলার হুমকি দেন। মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গিদের তালিকায় তার নাম ছিল। বুরহানকে মরিয়া হয়ে খুঁজছিল পুলিশ। তার অবস্থান জানাতে পারলে ১০ লাখ টাকা পুরস্কারও  ঘোষণা করা হয়েছিল। গতকাল শনিবার গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া আগাম খবরের ভিত্তিতে তাকে খুঁজে বের করে নিরাপত্তাবাহিনী। সকালে বুমদুরা গ্রামে তাকে ঘিরে ফেলে পুলিশ ও সেনার যৌথ দল। সংঘর্ষে আরও দুই মুজাহিদের সঙ্গে সে প্রাণ হারিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে বুরহান নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারানোর পর জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন প্রান্তে সহিংসতার কারণে অমরনাথ যাত্রা স্থগিত করে দিয়েছে নিরাপত্তারক্ষীরা। একই সঙ্গে রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় বন্ধ করে দেওয়া হয়ছে ইন্টারনেট পরিষেবা। এ ছাড়াও অন্য অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সূত্র জানায়, দক্ষিণ কাশ্মীরের এক সম্পন্ন পরিবারের ছেলে ছিলেন বন্দুকযদ্ধে নিহত হিজবুল কমান্ডার বুরহান মুজফফর ওয়ানি। বাবা স্কুলের প্রিন্সিপাল। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই হিজবুলে ভিড়ে যান বুরহান। কাশ্মীরে শিক্ষিত স্থানীয় যুবকদের বন্দুক হাতে তুলে নেওয়ার যে প্রবণতা দেখা যায়, বুরহানকে তাদেরই প্রতিনিধি ধরা হয়। বলা হয়, বুরহানের প্রভাবেই কাশ্মীরে বিদেশিদের তুলনায় স্থানীয় ছেলেদের উপস্থিতি বেড়েছে। কিন্তু কেন বুরহান সহিংসতার পথ বেছে নিলেন। উত্তর খুঁজতে গিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক খবর থেকে জানা যায়, ২০১০ সালে সেনাবাহিনীর অন্যায্য নির্যাতনের শিকার হয়েছিল তার ভাই। বদলা নিতেই মাত্র ১৫ বছর বয়সে সহিংস দলে নাম লেখান বুরহান। ২০১০ সালের কোনো একটা দিনে বুরহানের বড় ভাই খালিদ মোটরসাইকেলে করে তার এক বন্ধু আর বুরহানকে নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে সেনাবাহিনী তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকায়। একপর্যায়ে তাদেরকে সিগারেট এনে দিতে বলে। সিগারেট এনে দেওয়ার পরও তারা খালিদকে বেদম পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে তারা মুক্ত হয়ে বাড়ি আসে। বুরহান-খালিদের অধ্যক্ষ বাবা জানিয়েছেন, ওই সময় থেকেই প্রতিনিয়ত প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলত বুরহান। কেবল খালিদের বাবা নন, তার বন্ধু-স্বজনদেরও কাছে একই তথ্য পাওয়া যায়। প্রতিশোধের উদ্দেশ্যেই ২০১০ সালে ১৫ বছর বয়সেই জঙ্গিবাদে দীক্ষা নেন তিনি। বুরহানের বাবা এই কথাগুলো জানিয়েছিলেন আদালতে। অভিযোগ রয়েছে, এনকাউন্টারের কথা বলে খালিদকে ২০১৫ সালের এপ্রিলে হত্যা করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। তবে সেনাবাহিনীর দাবি ছিল, খালিদ নিজেও বুরহানের মতো সন্ত্রাসী। ভাইয়ের ওপর নির্যাতন, পাঁচ বছর পরে সেই ভাইকে হত্যা বুরহানকে আরও সহিংস করে তোলে। টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ওয়েবসাইট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন