বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

কেয়ামতের পূর্ব লক্ষণ ও বর্তমান বিশ্ব

প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুফতি আমজাদ হোসাইন
হুজ্জাতুল ইসলাম আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী (রহ.) বলেছেন, কেয়ামতের পূর্ব লক্ষণ বা নিদর্শনসমূহ তিন ভাগে বিভক্ত। এক. (আলামতে ছোগ্রা) এমন কতিপয় পূর্বের দূরবর্তী লক্ষণসমূহ, যা এক সময় সংঘটিত হয়েছে এবং তার আলামত শেষও হয়ে গিয়েছে। এর উদাহরণ হলো- শেষ নবী হযরত রাসূলে আরাবী মুহাম্মদ (সা.)-এর দুনিয়ার বুকে আগমন, পবিত্র কোরআন নাযিল, রাসূল (সা.)-এর ওফাত, খেলাফতে রাশেদার যুগ, হযরত ওসমান (রা.)-এর শাহাদাত, সিরিয়া ও ইরাক বিজয়, সিফফীন ও উষ্ট্রীর যুদ্ধ, হযরত হোসাইন (রা.)-এর কারবালার ময়দানে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ ইত্যাদি। দ্বিতীয়. (আলামতে ছোগ্রা) এমন কতিপয় নিকটবর্তী লক্ষণসমূহ যা ঘটছে এবং ঘটে চলছে। আজ পর্যন্ত শেষ হয়নি বরং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। (১) ব্যাপক হারে আমানতের খেয়ানত করা হচ্ছে। আমানত শুধুমাত্র টাকা-পয়সার সাথেই সীমাবদ্ধ নয় বরং আমানতের সম্পর্ক মালের সাথে যেমন রয়েছে কথাবার্তার সাথেও তেমন রয়েছে। অনুরূপ মানুষের কাছে মানুষের ইজ্জত-আব্রুও আমানত। কিছু লোক এমন আছে যাদের চাল-চলনের দিকে লক্ষ করলে মনে হয় আল্লাহ পাক তাকে মানুষের ইজ্জত-আব্রু নষ্ট ও গীবত-শেকায়াত করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই এক কাজ নিয়েই তার ব্যস্ততা। মনে হয় এছাড়া তার আর কোনো কাজ নেই। (২) সুদ-ঘুষ ও মদ পানের প্রবণতা ব্যাপকতাভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান যমানাতে এগুলোকে অনেকে কোনো অপরাধই মনে করে না। বহু লোক পোশাকে-লেবাসে দীনি সুরত ধারণ করলেও সুদ-ঘুষের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। সুদি কারবারের সাথে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অকপটে বলে যাচ্ছেন শুনে মনে হয় তিনি সঠিক কাজই করছেন। মদের সাথে অনেক নেশাদার বস্তু তৈরি হচ্ছে। যেগুলোকে সমাজের উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা দেদারছে পান করছে। বিভিন্ন স্থানে সরবতের পরিবর্তে নেশাদার পানীয় সরবরাহ করা হচ্ছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, তারা কোনো কোমল জাতীয় পান পান করছে। সেখানে না আছে কোনো দীনি শিক্ষা বা সামাজিকতার লাগাম। আছে শুধু অশ্লীলতার সয়লাব। অথচ আমরা ছোট বেলায় দেখেছি মুরব্বিদের সামনে কথা বলাতো দূরের কথা। ছোটরা তাদের সামনা সামনি পড়ার ভয়ে আড়ালে-আবডালে চলা ফেরা করতো। যদি কোনো ছেলে না বুঝে বিড়ি-সিগারেট পান করার ইচ্ছা করতো, তখন সে খুব সর্তকতার সাথে পান করতো। না জানি কোনো মুরব্বি দেখে ফেলেন কিনা তাহলে একেবারে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ওই সময় মেয়েদের বিড়ি-সিগারেট পানের কোনো প্রশ্নই আসে না। বর্তমান সময় ছেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে মেয়েরাও এই ধরনের নেশাদার বস্তুর সাথে সমান তালে জড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে পরিণতি বড় ভয়াবহ হচ্ছে। (৩) দুনিয়ার প্রতি মোহ-ভালোবাসা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ এই পৃথিবী এবং তার মধ্যকার সব কিছুই একেবারে লিমিটেড। এখানে সত্যিকার অর্থে আনলিমিটেড বলতে কিছুই নেই। এই দুনিয়া দ্বারা তারাই ধোঁকা খায়, যারা এখানের কোনো কিছুকে আনলিমিটেড মনে করে। নিজের হায়াত, সৌন্দর্য, শক্তি, অর্থসম্পদ, ক্ষমতা, যশখ্যাতি সব কিছুই ক্ষণস্থায়ী ও ধ্বংসশীল। একমাত্র পরকালই স্থায়ী যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। দুনিয়ার মোহে পড়ে দায়িত্বশীলরা দায়িত্বে অবহেলা ও খেয়ানত করছে। অনেকে প্রতারণা, মিথ্যা ওয়াদা, গানবাদ্য ও অশ্লীল চিত্তবিনোদনের প্রসার, হত্যাকা- ও ব্যভিচারের কাজে দেদারছে জড়িয়ে পড়ছে। নিজের অপরাধ বোধের অনুভূতি পর্যন্ত তাদের মাঝে দেখা যায় না।
তিন. (আলামতে কুবরা) এমন কতিপয় বড় ধরনের লক্ষণ। যেগুলো ভবিষ্যতে ঘটবে। যেমন দাজ্জালের আগমন। দাজ্জাল হলো একজন ভ- মিথ্যাবাদী মাসীহ। সে শেষ জামানায় এসে নিজেকে সত্য মাসীহ অর্থাৎ ঈসা মাসীহ বলে দাবি করবে। একসময় নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে। (নাউযুবিল্লাহ)। মুসলিম শরিফের এক হাদিসে এসেছে। হযরত নবী করীম (সা.) বলেন, দাজ্জালের ফিৎনা হবে কিয়ামত অবধি সবচেয়ে বড় ফিৎনা। আর পৃথিবীতে তার অবস্থান হবে ৪০ দিন। ১ম দিন হবে ১ এক বছরের সমান, ২য় দিন হবে এক মাসের সমান, ৩য় দিন হবে ১ সপ্তাহের সমান, আর বাকি ৩৭ দিন হবে আমাদের দিনের মতো। অর্থাৎ মোট ১ বছর ২ মাস ১৪ দিন তার স্থায়ীত্বকাল হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Mozammel ১০ জুলাই, ২০১৬, ১২:৪০ পিএম says : 0
aro details hole valo hoto
Total Reply(0)
Thajul islam ২১ মে, ২০১৮, ৭:৩৭ এএম says : 0
বিশদ আলোচনা করলে ভাল হতো
Total Reply(1)
ইয়াসীন ২৮ মে, ২০১৮, ১২:১২ এএম says : 4
হাদীসের বই পড়েন এবং কোরআনের তরজমা পড়েন তাহলে দুনিয়া ও আখিরাত আপনার জন্য ফায়দা হবে

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন