কর্পোরেট রিপোর্ট : বারবার আল্টিমেটাম আর সময় বাড়ানোর মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে সাভারে চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থানান্তর। চলতি জুন মাসে শেষ হতে যাচ্ছে চামড়া শিল্পনগরীর প্রকল্পের মেয়াদ। এ সময়ের মধ্যেও রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানান্তর হচ্ছে না ট্যানারি। ১৩ বছর ধরে এ নিয়ে জটিলতা চলছে। শেষ পর্যন্ত এ মেয়াদে স্থানান্তরের আশা করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। তারা ট্যানারি স্থানান্তরের জন্য আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চাইছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, সাভারে ২০০ একর জমিতে ২০৫টি প্লটে হাজারীবাগের ১৫৫ ট্যানারি স্থানান্তরের কথা। এর মধ্যে ১২টি ছাড়া সব ট্যানারির অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। এ কাজ শেষ করেই হাজারীবাগ থেকে যন্ত্রপাতি স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে। একই সঙ্গে স্থাপন করা হবে নতুন যন্ত্রপাতি। এ পর্যন্ত ১০টির মতো ট্যানারি যন্ত্রপাতি স্থাপন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অনেক ট্যানারিতে স্থাপনের জন্য নতুন যন্ত্রপাতি আমদানি প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ১৭টি ট্যানারি বিদ্যুৎ সংযোগ চেয়ে আবেদন করেছে। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহীন আহমেদ বলেন, ট্যানারি স্থানান্তরের জন্য এখন সবাই কাজ করছেন। তবে স্থানান্তর করতে সময়ের প্রয়োজন হবে। আগামী জুলাই ও আগস্টের মধ্যে ১০ থেকে ১৫টি ট্যানারি যেতে পারে। জুনে মেয়াদ শেষ হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ প্রকল্পের মেয়াদ আরও বাড়াতে হবে। ট্যানারি মালিকদের যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। ট্যানারি মালিকরা জোরেশোরে কাজ করছেন। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সবাই যেতে পারবেন। এ পর্যন্ত ট্যানারি স্থানান্তরে সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি। প্রকল্প পরিচালক আবদুল কাইয়ুম জানান, এ পর্যন্ত শিল্পনগরীর ১৭টি ট্যানারি বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে টাকা জমা দিয়ে আবেদন করেছে। এর মধ্যে একটি ট্যানারি বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। অন্যগুলো এ মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ পাবে। তিনি আশা করছেন, জুনের মধ্যে ২০টির মতো ট্যানারি স্থানান্তর হতে পারে। অন্যান্য ট্যানারির কাজও দ্রæতগতিতে এগিয়ে চলছে। তবে ট্যানারির কাজ শেষ না হলেও চীনা প্রতিষ্ঠানের সিইটিপি নির্মাণ হলে প্রকল্প শেষ করা হবে। ট্যানারি স্থানান্তর করার দায়িত্ব মালিকদের। তারা ট্যানারি না সরালেও হাজারীবাগের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করা হবে। প্রকল্প পরিচালক বলেন, কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) কাঠামো নির্মাণকাজ জুনের মধ্যে শেষ হবে। তাছাড়া দুটি মডিউলের ইলেক্ট্রোমেকানিক্যালের কাজ জুনের মধ্যে শেষ করে চালু করা হবে। এ দুটি মডিউল চালু হলে ৪৮ থেকে ৫০টি ট্যানারির বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হবে। পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে বাকি দুটি মডিউলের কাজ শেষ হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরো কাজ শেষ করতে নতুন করে টার্গেট করা হবে। তাছাড়া বর্জ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া (এসপিজিএস) স্থাপনের জন্য মেয়াদ বাড়াতে হবে। এ জন্য বিসিক নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেবে। সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে ট্যানারি স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। তখন ট্যানারি স্থানান্তরের সুযোগ না থাকায় নতুন করে এক মাস সময় বাড়ানোর দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে দফায় দফায় চলছে সময় বৃদ্ধি। আল্টিমেটামের পরে পাঁচ মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত ট্যানারি স্থানান্তর শুরু হয়নি। এর আগে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ট্যানারি স্থানান্তরের সময় বেঁধে দেয় সরকার। ওই সময়ের মধ্যে কারখানা স্থানান্তর করতে ব্যর্থ হলে মালিকদের নামে বরাদ্দকৃত প্লট বাতিল করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এর আগে কয়েকবার আল্টিমেটাম দেওয়ার পরও ট্যানারি মালিকরা কারখানা সরাতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এ কারণে ট্যানারি মালিকদের উকিল নোটিশ দেওয়া হয়। এত কিছুর পরেও টনক নড়ছে না ট্যানারি মালিকদের। ২০০৩ সালে বিসিকের আওতায় ১৭৫ কোটি টাকার চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরে কয়েক দফা মেয়াদ বেড়ে এ প্রকল্প সংশোধন করে এক হাজার ৭৮ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ করা হয়। প্রকল্পের চলতি অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ ব্যয়ের অগ্রগতির হার মাত্র ৭ শতাংশ। মোট প্রকল্প ব্যয়ের অগ্রগতির হার মাত্র ৩৩ শতাংশ। শুরু থেকে গত মার্চ পর্যন্ত এ প্রকল্পে মাত্র ৩৫৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। সরকারি অংশের অনেক কাজ এখনও বাকি রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন