সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

‘পিএস মাহসুদ’-এর দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু হয়নি অভিযুক্ত নৌযানের সনদ ও রুট-পারমিট বহাল

প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : ঈদের ঘরমুখী যাত্রীদের নিয়ে বরিশালে আসার পথে সরকারি নৌযান ‘পিএস মাহসুদ’-এর দুর্ঘটনায় পাঁচ যাত্রী নিহত ও আরো অন্তত ৩০ জন আহত হওয়ার ঘটনায় তদন্ত শুরুর আগেই অভিযুক্ত নৌযান ‘এমভি সুরভী-৭’-এর সার্ভে সনদ পুনর্বহালসহ রুট-পারমিটের স্থগিতাদেশও প্রত্যাহার করা হয়েছে। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটি এখনো ক্ষতিগ্রস্ত পিএস মাহসুদ পরিদর্শনও করেনি। তবে সুরভী-৭-এর মাস্টার ও ২য় মাস্টারের সনদ স্থগিত করা হয়েছে। অভিযুক্ত ঐ দু চালক তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো নৌযান পরিচালনের দায়িত্ব পাবে না। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত নৌযান পিএস মাহসুদ এখনো বরিশাল বন্দরে বিআইডব্লিউটিসি’র নিজস্ব শিপঘাটে পড়ে আছে। আজ অফিস খোলার পারে সংস্থাটির পরিচালনা পরিষদ নৌযানটির ব্যপারে পরবর্তি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন বলে জানা গেছে।
গত ৪ জুলাই শেষ রাতে বরিশাল বন্দরের নিকট দূরে কীর্তনখোলা নদীতে বিপরীত দিক থেকে আসা বেসরকারি নৌযান এমভি সুরভীর সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে বিআইডব্লিউটিসি’র পিএস মাহসুদ জাহাজটির বাম পাশের প্যডেলসহ এর অগ্রভাগের প্রায় ৬৫ ফুট এলাকা দুমড়ে-মুচড়ে যায়। দুর্ঘটনায় নৌযানটির বাম প্যডেলের সামনের দিকের ক্রু কেবিনগুলোও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে অভ্যন্তরে থাকা যাত্রীরাও হতাহত হয়। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, দুর্ঘটনার পরে গ্যাস কাটার এনে কেবিনগুলোর দরজাসহ পার্টিশন কেটে কক্ষগুলোতে আটকে পড়া নিহতদের লাশ ও আহতদের বের করতে হয়েছে। সম্পূর্ণ বেআইনিভাবেই ওই কক্ষগুলো ভাড়া দেয়া হয়েছিল বলে বিআইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বশীল সূত্রে দাবী করে তা তদন্ত কমিটির সামনে তুলে ধরা হবে বলেও জানানো হয়েছে। তাদের মতে এসব কক্ষ যাত্রী ভ্রমণের জন্য নয়, ক্রুদের জন্য নির্দিষ্ট। অবৈধভাবে কক্ষগুলো ভাড়া না দিলে অন্তত ৫ জন যাত্রীর প্রাণহানি এড়ান যেত।
তবে তদন্ত সম্পন্ন হবার আগেই কেন এমভি সুরভী’র সার্ভে সনদ পুনর্বহাল ও চলাচলের অনুমতি দেয়া হচ্ছেÑএ প্রশ্নের জবাবে বিআইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বশীল মহল জানিয়েছে, সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর নৌযানটির সার্ভে সনদ স্থগিত করে পুনরায় তা বহাল করায় তাদের পক্ষে এর চলাচল বন্ধ রাখার কোন সুযোগ নেই। তবে সুরভী-৭-এর দুই চালকের সনদ স্থগিত করায় তাদের পক্ষে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন নৌযান পরিচালন-এ যুক্ত হবার সুযোগ নেই বলে বলা হয়েছে। এসব ব্যাপারে অবশ্য গতকাল সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের দায়িত্বশীল মহলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বিআইডিব্লিউটিএ’র দায়িত্বশীল মহলের মতে পিএস মাহসুদ-এর প্রধান মাষ্টার কমকর্তা ও ২য় মাষ্টার কর্মকর্তার যোগ্যতার বিষয়টিও তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখবে। গত ছয় মাসে পিএস মাহসুদ মোট ৮ বার ছোট বড় দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এছাড়া নৌযানটির প্রধান মাষ্টার কর্মকর্তা ইতোপূর্বে পিএস অষ্ট্রিচে দায়িত্ব পালনকালে নৌযানটি খুলনার হযরত খান জাহান আলী (র.) সেতুর ওপর আছড়ে পড়ে। পাশাপাশি নৌযানটিকে চরখালীর কাছে সজোরে চড়ায় তুলে দেয়ায় মূল গীয়ার বক্স ভেঙে নৌযানটির খোলের অভ্যন্তরে পড়ে যায়। যা যেকোন নৌযানের জন্যই অত্যন্ত বিরল ঘটনা। এর ফলে নৌযানটি প্রায় ছয় মাস যাত্রী পরিবহন থেকে বিরত ছিল।
পিএস মাহসুদ মেরামতের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও আজ অফিস খোলার পরে এ ব্যাপারে সংস্থার চেয়ারম্যান পরিচালকবৃন্দসহ কারিগরি পরিদফতরের উচ্চপর্যায়ে আলাপ-অলোচনা করে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। তবে পুরো বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে সেখানের দিকনির্দেশনাকেই অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
ওয়াকিবহাল মহল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পিএস মাহসুদ-এর মেরামত সংস্থাটির নিজস্ব ডকইয়ার্ডে কতটা সম্ভব হবে এবং তা কতটা ব্যয়বহুল হবে, তা ভেবে দেখার পাশাপাশি এক্ষেত্রে মেরামত সময়ের বিষয়টিও বিবেচনার তাগিদ দিয়েছেন। তবে একাধিক মহল থেকে পিএস মাহসুদ-এর দ্রুত ও নির্ভরযোগ মেরামতের বিষয়টি মাথায় রেখে এ ক্ষেত্রে নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন খুলনা শিপইয়ার্ডকে বিবেচনায় রাখারও তাগিদ দেয়া হয়েছে। ১৯৭৯ থেকে ’৮২ সালের মধ্যে পিএস অষ্ট্রিচ ও পিএস মাহসুদ জাহাজ দুটি খুলনা শিপইয়ার্ডে পুনর্বাসন ও আধুনিকায়নসহ নতুন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়। ২০০২ সালে পিএস টার্ন জাহাজেও নতুন ইঞ্জিন সংযোজনের কাজটি করে খুলনা শিপইয়ার্ড। এমনকি বছর কয়েক আগে বরিশালের অদুর ভাষান চরের কাছে চড়ায় উঠে ক্ষতিগ্রস্থ পিএস অষ্ট্রিচ জাহাজটির পূর্ণাঙ্গ মেরামেতির কাজটিও সাফল্যজনকভাবে সম্পন্ন করেছিল খুলনা শিপইয়ার্ড।
তবে কোনো অবস্থাতেই পিএস মাহসুদ-এর মেরামতির ক্ষেত্রে কালক্ষেপণের সুযোগ নেই বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। কারণ সংস্থাটির ৪টি প্যাডেল জাহাজের মধ্যে পিএস টার্ন ইতিপূর্বেই ভারী মেরামতে সংস্থার ডকইয়ার্ডে রয়েছে, যা যাত্রী পরিবহনে ফিরতে আরো অন্তত দু’মাস লাগতে পারে। পিএস অষ্ট্রিচেরও অনুরূপ মেরামতির সময়ও অতিক্রান্ত হয়েছে অনেক আগেই। ফলে এখন দ্বিগুণ জ্বালানী ব্যয়ের এমভি বাঙালি ও এমভি মধুমতি দিয়ে নিয়মিত রকেট সার্ভিসটি অব্যাহত রাখতে হচ্ছে। অথচ এসব নৌযান যাত্রী বান্ধব নয় বিধায় তাতে ভ্রমণে সবারই আগ্রহ কম। এমনকি সদ্য সংগৃহীত এসব নৌযানে প্রতি ট্রিপে পরিচালন লোকসানই গড়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন