শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পোশাক খাতের রফতানি ঝুঁকির মুখে

তিন দেশে কার্গো ফ্লাইটে নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : যুক্তরাজ্য-অস্ট্রেলিয়ার পর ঢাকা থেকে বিমানের সরাসরি কার্গো ফ্লাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জার্মানি। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলে দেশগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে অন্য দেশের মাধ্যমে রি-স্কেনিং করে জার্মানিতে কার্গো রফতানি অব্যাহত রয়েছে। এর আগে গত বছরের মার্চে যুক্তরাজ্য ও ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়াও একইভাবে ঢাকা থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়। অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের মতো একই সুরে জার্মানিও অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও জনবলের অভাবকে দায়ী করে। এই কারণে বাংলাদেশের রফতানি খাত ক্ষতির মধ্যে রয়েছে বলে রফতানিকারকরা জানিয়েছে।
জানা যায়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার জার্মানি। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এ অবস্থায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের এখন সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ জার্মানি কার্গো ফ্লাইট বন্ধ করায় বিমানকে বড় ধরনের মাশুল গুনতে হবে। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধস নেমে আসবে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়বে তৈরি পোশাকসহ রফতানিমুখী বেশকিছু পণ্য।
তথ্য মতে, বাংলাদেশ থেকে বছরে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যে বছরে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারের (৮৮ হাজার কোটি টাকা) পণ্য রফতানি হচ্ছে। যার বড় অংশ হচ্ছে তৈরি পোশাক। এর মধ্যে প্রথম হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র আর দ্বিতীয় স্থানে আছে জার্মানি। পাশাপাশি এ সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদাও নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এসব নিয়ে বিমান ও সিভিল এভিয়েশনের শীর্ষ কর্তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি হঠাৎ ঢাকা থেকে জার্মানিতে বিমানে সরাসরি কার্গো ফ্লাইটের মাধ্যমে রফতানি বন্ধ করেছে জার্মানির রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্স লুফথানসা। জার্মান সিভিল এভিয়েশন বাংলাদেশে বিমানকে যে চিঠি দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কোনো কার্গো পণ্য তারা জার্মানিতে প্রবেশ করতে দেবে না। এক্ষেত্রে সব পণ্য জার্মান সিভিল এভিয়েশন অনুমোদিত দ্বিতীয় কোনো দেশ থেকে রি-স্ক্যানিং করে নিতে হবে।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহে ঢাকা থেকে একটি ফ্লাইটে সরাসরি কার্গো পণ্য যাচ্ছে জার্মানিতে। ওই ফ্লাইটে গড়ে ৭০ থেকে ১০০ টন কার্গো পণ্য যায়। জার্মানির রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার লুফথানসার একটি কার্গো ফ্লাইট এ পণ্য বহন করছে। তবে লুফথানসা ছাড়াও অন্য দেশে রি-স্ক্যানিং করে জার্মানিতে মালামাল পরিবহন করছে বড় বড় এয়ারলাইন্স। এর মধ্যে এমিরেটস, কাতার, কুয়েত, ইতিহাদ, মালয়েশিয়া, সাউদিয়া, এয়ার এরাবিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, চায়না ও ওমান এয়ারলাইন্স অন্যতম। লুফথানসার মাধ্যমে যে পরিমাণ কার্গো সরাসরি বহন করা হতো তা থেকে মাসে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করত বিমান। এখন এ আয় থেকে বঞ্চিত হবে বিমান। বিজিএমইএ বলছে, তৈরি পোশাক খাতের একটা বড় অংশ জার্মানিতে রফতানি করা হয় জিরো ট্যারিফে। এর সবটাই যায় আকাশপথে। বর্তমানে জরুরি ভিত্তিতে গার্মেন্ট পণ্যের নমুনাও সরাসরি আকাশপথে জার্মানিতে পাঠানোর সুযোগ বন্ধ হয়ে গেল।
জানা গেছে, অপ্রতুল নিরাপত্তা ও বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশের অভিযোগ এনে বিমানে কার্গো নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে জার্মানি। তারা জানিয়েছে, বিমানের কার্গো রফতানি টার্মিনালটি বহিরাগত জনবল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এসব জনবল নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) নামে একটি সংগঠনের দখলে রয়েছে পুরো কার্গো রফতানি টার্মিনাল। তারা প্রায় এক হাজার জনবল দিয়ে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণভাবে পরিবেশে রফতানিকৃত কার্গো পণ্য লোড-আনলোড করছে। বিমান ও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ তাদের ড্রেস ও সিকিউরিটি পাস দিয়ে অবাধে কার্গো টার্মিনালে প্রবেশের সুযোগও তৈরি করে দিয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, যুক্তরাজ্য অস্ট্রেলিয়ার পর জার্মানি বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে সরাসরি কার্গো নেয়া বন্ধ করে দেয়ায় চরম বিপাকে পড়বে তৈরি পোশাক খাত। আকাশপথে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ও নমুনা পাঠানোর সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন বিকল্প পথে অন্য দেশের আশ্রয় নিতে হবে। তবে তিনি বলেন, জার্মানি তৃতীয় দেশে রি-স্ক্যানিং করে পণ্য নেয়ার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে কথা বলবে। এরপরই জানা যাবে জার্মানির সঙ্গে কার্গো পণ্য পরিবহনের সর্বশেষ অবস্থা। তিনি আশা করছেন, এর মধ্যেই এটা মীমাংসা হয়ে যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন