ইনকিলাব ডেস্ক
গত সপ্তাহে ঢাকায় ক্যাফে হামলার সন্দেহভাজন আহত এক বাংলাদেশি তরুণ পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা গেছে। তবে সে জিম্মিদের একজন ছিল বলে দাবি করে নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
হলি আর্টিসান বেকারির কিচেন সহকারী জাকির হোসেন শাওন (১৮) আটক হয় সন্দেহভাজন ইসলামপন্থীদের হাতে জিম্মি ঘটনা ও হামলার পর। ওই হামলায় ১৮ বিদেশীসহ ২২ জন প্রাণ হারান। পুলিশ সে সময় ৫ জঙ্গিকে হত্যা করে এবং ‘সন্দেহজনক কর্মকা-ের’ জন্য শাওনকে অপর এক ব্যক্তির সাথে গ্রেফতার করা হয় যাকে সন্দেহভাজন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে তার পরিবার তীব্রভাবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তাকেও অন্য ভিকটিমদের মতো জিম্মি করা হয়েছিল।
পুলিশ এবং তার পরিবার জানায়, ৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে সে মারা যায়। শাওনের পিতা আব্দুস সাত্তার ‘নিরীহ সন্তান এবং পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম’ নির্যাতনে মারা গেছে অভিযোগ করে তার হত্যার ব্যাপারে তদন্ত দাবি করেন।
আব্দুস সাত্তার এএফপিকে বলেন, ‘তার পুরো শরীরে নির্যাতনের দাগ রয়েছে। অনেক জায়গায় রয়েছে জমাট রক্তের দাগ। তার একটি চোখ এবং দু’পায়ের হাঁটু কালো হয়ে গেছে। তার কব্জি হয়ে গেছে কালচে। দেখে মনে হয় তার কব্জিতে রশি বেঁধে তাকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল’।
বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার গ্রুপ আইন ও শালিস কেন্দ্রের প্রধান নুর খান লিটন বলেন, হামলায় শাওনের জড়িত থাকা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আইএস এ হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে।
নুর খান লিটন বলেন, ‘আইএস ৫ জন হামলাকারীর নাম প্রকাশ করে এবং পুলিশ ওই ৫ জনকেই শনাক্ত করেছে। আর সে ওই ৫ জনের মধ্যে ছিল না’।
‘হামলাকারীদের সহায়তাকারী বা সহযোগী হিসেবে যদি তাকে গণ্য করা হয় তাহলে পুলিশকে অবশ্যই তথ্য বা প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে’।
তবে পুলিশ ও সামরিকবাহিনীর প্রতিনিধিরা শাওনকে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেছেন।
‘তাকে সন্দেহজনক কর্মকা-ের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল। আহত অবস্থায় আটকের পর থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের কোন সুযোগই আমরা পাইনি’ -এএফপিকে বলেছেন ঢাকা পুলিশের মুখপাত্র মাসুদুর রহমান।
তরুণের পিতা বলেন, ১ জুলাই হত্যাকা-ের কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি তার সন্তানের সাথে কথা বলেছেন। শাওন তাকে বলেছিল, সে মুসলিমদের বৃহত্তম উৎসব ঈদুল ফিতরের বোনাস পেয়েছে। সে পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপনের জন্য ঢাকার শহরতলীতে অবস্থিত তাদের বাড়িতে যাবার পরিকল্পনা করেছিল। এর পরিবর্তে তার পরিবার তাকে ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে হামলার পর হাসপাতালে তাকে দেখতে পেয়েছে।
তার পিতা বললেন, ‘সে আমাকে বা তার মাকে চিনতে পারেনি এবং সে মনে করেছিল আমরা তার ভাই’। তিনি আরো যোগ করেন, “সে ঘুমের মধ্যে কেঁদে উঠতো, সে কাউকে অনুনয় বিনয় করে বলতো, ‘প্লিজ আমাকে মারবেন না। আমাকে যেতে দিন।”
এদিকে দেশের পুলিশ প্রধান গতকাল বলেছেন, ক্যাফেতে জিম্মি ঘটনায় জড়িত জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ঈদে হামলার ঘটনায়ও জড়িত।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত সপ্তাহে বলেছিলেন, গুলশান হামলা পরিচালনা করেছে জেএমবি। যদিও ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গ্রুপ গুলশান হামলার ঘটনায় দায়িত্ব স্বীকার করেছে।
হামলাকারীরা গত বৃহস্পতিবার দেশের উত্তরাঞ্চলীয় শহর শোলাকিয়ায় ঈদুল ফিতরের বিশাল জামায়াতের আগে বোমা ও রামদা নিয়ে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে তিন জনকে হত্যা করেছে। শোলাকিয়ায় সাংবাদিকদের কাছে পুলিশের আইজি শহিদুল হক বলেন, “হামলাকারীরা জেএমবি সদস্য এবং তারা গুলশানে এ কাজ (হামলা) করে এবং তারা এখানেও এ কাজ করেছে।”
ঈদে হামলার ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে। সূত্র : এএফপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন