বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করা শিক্ষক শ্যামল কান্তি ফের কর্মস্থলে এলাকায় ক্ষোভ উত্তেজনা

প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার : ছাত্রকে মারধর ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে নানা নাটকীয়তার জন্ম দেয়া বন্দরের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের সেই প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত পুনরায় নিজ কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। প্রায় দুই মাস পর রোববার ১০ জুলাই সকালে পুলিশ পাহারায় কর্মস্থলে যোগ দেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুলিশ নিয়ে যোগদান করায় স্কুলটির শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক এবং অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ ও এলাকাবাসীর মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এতে করে স্কুলটিতে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। এদিকে প্রধান শিক্ষক স্কুলে যোগ দেয়ার সাথে সাথে মারধরের শিকার হওয়া স্কুল ছাত্র রিফাতের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তাকে স্কুল থেকে নিয়ে গেছেন তার মা রীনা বেগম। এ সময় সাংবাদিকদের রীনা বেগম জানান, আমার ছেলেকে আমি এই স্কুলে পড়াব না। আমার ছেলে এই স্কুলে থাকলে ওই প্রধান শিক্ষক আমার ছেলেকে মেরে ফেলবে।
অপরদিকে সহপাঠীকে মারধর ও ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করা সেই প্রধান শিক্ষক পুলিশ পাহারায় পুনরায় স্কুলে যোগদান করতে আসছে এমন খবর ছাত্রদের কাছে পৌঁছালে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করার চেষ্টা করে। তবে সকাল থেকে স্কুলে অবস্থান নেয়া পুলিশ সদস্যরা তাদেরকে থামিয়ে দেয়। পরে স্কুল শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করার চেষ্টা করলে আগে থেকেই স্কুলের ভেতরে সাদা পোশাকে অবস্থান নেয়া পুলিশ সদস্যদের কঠোর ব্যবস্থার কারণে তা করতে পারেনি। এ সময় শ্যামল কান্তির বিচার দাবি করে এলাকাবাসীর সাঁটানো ব্যানার পোস্টার পুলিশ ছিঁড়ে ফেলে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
সকাল ১০টায় স্কুল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৯টায় পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত। এরপর তিনি দায়িত্ব বুঝে নিয়ে স্কুলের শ্রেণিকক্ষগুলো ঘুরে দেখেন। স্কুলে যোগদানের সময় প্রধান শিক্ষকের সাথে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী হাবিব, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আ.ক.ম নুরুল আমিন, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম। শ্যামল কান্তি ভক্ত পুলিশ পাহারায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্কুলে অবস্থান করেন। পরে তিনি জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে পুনরায় পুলিশ পাহারায় স্কুল ত্যাগ করেন।
শ্যামল কান্তি ভক্ত সাংবাদিকদের জানান, আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। গত ১৩ মে স্কুলে একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্য আমাকে দেড় মাস হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে আর রমজান ও গ্রীস্মকালীন ছুটির কারণে ২ মাস পর স্কুলে যোগদান করি। মিডিয়ার কারণে আমি আমার ন্যায্য অধিকার ফিরে পেয়েছি। তবে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি না। কারণ পুলিশ পাহারায় আমি যোগদান করতে পেরে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি। আমি স্কুলের সকল কাজকর্ম আন্তরিকভাবে পালন করব। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোবাইল ফোনে তার কোটি টাকা দাবি ও সংসদ সদস্যকে ভগবান এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পায়ে পড়ে কপাল ঠেকিয়ে বিধাতা  বলে সম্বোধন করা প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করলে জবাবে শ্যামল কান্তি বলেন, এটা মিডিয়ার কারসাজি। আমি টাকা দাবি করিনি এবং এমপিকে ভগবান ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পায়ে পড়ি বিধাতা সম্বোধন করিনি।
অভিযোগকারী ছাত্র রিফাত কেন চলে গেল এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে ভুল বুঝেছে। সে বুঝতে পারলে আবার সে ফিরে আসবে।
একজন স্কুল শিক্ষার্থীর অভিভাবক সালাউদ্দিন জানান, সকালে প্রধান শিক্ষক স্কুলে যোগদানের ফলে এলাকায় ও অভিভাবকদের মনে নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। প্রধান শিক্ষক পুলিশ নিয়ে স্কুলে আসা এবং পুলিশসহ স্কুলে অবস্থান করা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ সৃষ্টি হবে বলে মনে করছি। এ নিয়ে ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এতে করে স্কুলটিতে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে স্কুলটিতে পড়–য়া হাজারো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে।
মারধরের শিকার স্কুল ছাত্র রিফাতের মা সাংবাদিকদের জানান, আজ সকালে আমার ছেলে রিফাত স্কুলে যায়। আমি যখন শুনতে পাই প্রধান শিক্ষক পুলিশ নিয়ে স্কুলে যোগ দিয়েছেন তখন আমি স্কুলে গিয়ে স্কুলের তৃতীয় তলা থেকে রিফাতকে নামিয়ে নিয়ে আসি। এ সময় ইউএনও ম্যাডাম আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন আমি কেন তাকে নিয়ে যাচ্ছি। তখন আমি বলেছি আমার ছেলেকে যেভাবে ওই শিক্ষক মারধর করেছে আবার আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি করেছে। ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন সময় আমাদের বাসায় গিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে এসব বিষয়ে আমার থানায় দুটি মামলা দায়ের করেও কোনো বিচার পাইনি। এখন ওই প্রধান শিক্ষক আবার এই স্কুলে যোগ দিচ্ছেন। ওই শিক্ষক এই স্কুলে থাকলে আমার ছেলেকে মেরে ফেলবে আমি আমার ছেলেকে এই স্কুলে পড়াব না।
এদিকে আগামী মঙ্গলবার থেকে স্কুলটিতে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রিফাতসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে রিফাতের মা রীনা বেগম তার ছেলেকে ওই স্কুলে পড়াবেন না বলে ছেলেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সামনে থেকে নিয়ে গেছেন।
এ ব্যাপারে রিফাতের মা রীনা বেগম জানান, আমার একটাই ছেলে। আমার স্বামী বিদেশে থাকে। আমার পুরো পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। রিফাতের পরীক্ষায় অংশ নেয়ার থেকে তার জীবনের নিরাপত্তা অনেক বড় ব্যাপার। আমার ছেলের ভবিষ্যৎ লেখাপড়া এবং তার জীবনের নিরাপত্তার জন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই। সেই সাথে আমার ছেলের প্রতি যে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে সেই নির্যাতনকারী প্রধান শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তির ভক্তের পুনরায় পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে  যোগদান এবং স্কুলটির শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, বর্তমান স্কুলটির পরিচালনা দায়িত্বে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক। উনি একজন অত্যন্ত দক্ষ কর্মকর্তা। আমি আশা করি উনি উনার দায়িত্ব সুন্দরভাবেই পালন করতে পারবেন। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে সুযোগ সন্ধানী যাতে করে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে শান্তি বিনষ্ট না করতে পারে এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ এলাকাবাসীকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান রাখছি। যেহেতু আগামীকাল থেকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে তাই সবাই যেন নির্বিঘেœ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে এ ব্যাপারে সকলকে সহযোগিতা করার আহবান রাখছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন