বিশেষ সংবাদদাতা : দেশের অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে তিনটি পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর পানি বৃদ্ধির কারণে ঘাঘট-করতোয়া, তিস্তা-যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীবেষ্টিত গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে প্লাবিত হওয়া এসব গ্রামের অনেকের বসতবাড়ির লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে শত শত একর ফসলি জমি, পাট, পটল, কাঁচামরিচ ও শাকসবজির ক্ষেতসহ সদ্য রোপণকৃত বীজতলা তলিয়ে গেছে।
চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার, এলাসিনে ধলেশ্বরী নদী বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ও জারিয়াজঞ্জাইলে কংস নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব এলাকায় পানিবন্দী হাজার হাজার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। নি¤œাঞ্চল তলিয়ে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টা এসব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এতে করে এসব এলাকার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন পানি বিশেষজ্ঞরা।
ধরলা নদীর পানির তোড়ে ভেঙে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় আধা কিলোমিটার বাঁধের অংশবিশেষ। এলাকাবাসী জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দ্রুত মেরামত না করলে আরো বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে ফুলবাড়ি উপজেলার ৩ ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম।
এছাড়া নদীভাঙনের মুখে পড়েছে প্রায় ৫ হাজার মানুষ। হুমকিতে রয়েছে শতাধিক বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্রিজ ও কালভার্ট। পানি বৃদ্ধির কারণে নি¤œাঞ্চলের পাট, সবজি, কলা ও আমন বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তলিয়ে গেছে উঠতি পটল, ঝিঙ্গা, ঢেড়শসহ বিভিন্ন সবজি, পাটসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। এ অবস্থায় কৃষকরা আগাম কেটে নিচ্ছেন তাদের সদ্য উৎপাদিত এবং প্লাবিত জমির ফসল।
এ ছাড়া পানিবন্দী এসব গ্রামের শত শত পরিবারের লোকজন বসতবাড়ি ছেড়ে উঁচু জায়গা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, উঁচু মাচা পেতে বসবাস করছেন। বন্যাকবলিত এসব এলাকার অধিকাংশ কাঁচা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় লোকজন এখন নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় চড়ে যাতায়াত করছেন। বর্তমানে পানিবন্দী এসব এলাকার নারী-পুরুষ তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়ে অসহায়ভাবে দিনাতিপাত করছেন। বিশেষ করে তারা গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়া এলাকাগুলো হলোÑ সদর উপজেলার কামারজানি, মালিবাড়ি, লক্ষ্মীপুর, কুপতলা, গিদারী ও কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম। প্লাবিত হয়েছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের উত্তর ও দক্ষিণ শ্রীপুর, কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের ছয়ঘড়িয়া, হরিপুর ইউনিয়নের হাজারির হাট, চড়িতাবাড়ি, বোছাগাড়ি, হরিপুর খেয়াঘাট ও বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর, বেলকা নবাবগঞ্জ, কাপাসিয়া, চন্ডিপুর ও তারাপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম।
এছাড়া সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া, মদনের পাড়া, আমদির পাড়া, কাঠুয়া, গোবিন্দপুর, জটিরপাড়া, থৈকরের পাড়া, চিনিরপটল, পালপাড়া, চকপাড়া, পবনতাইর, কুন্ডপাড়া, চানপাড়া, গোবিন্দি, বাঁশহাটা ও মিয়াপাড়া গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট, পাটগ্রাম উপজেলার ছিটমহল দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা, হাতিবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার বৈরাতি ও আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা কলতারপাড় চরাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকায় বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে যেকোনো সময় এসব এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কন্ট্রোল রুম সূত্র জানিয়েছে। পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে খুলে রাখা হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট।
এদিকে তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। পানির চাপে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কানাইপাড়ায় ধসে গেছে সøুইস গেট। এতে ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। এছাড়া ভাঙনের মুখে পড়েছে ২টি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভাঙনকবলিত মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। গৃহহীন হয়েছে কয়েকশ’ পরিবার।
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানায়, পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল ৯০টি স্টেশনের মধ্যে ২৮টির পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। হ্রাস পেয়েছে ৫৫টির পানি, অপরিবর্তিত ৪টি এবং ৩টি পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন