বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

তিন ডেপুটি গভর্নরেরই চুক্তির মেয়াদ বাড়ছে

প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হাসান সোহেল : বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর পদে নতুন কেউই আসছেন না। চার বছর চুক্তিভিত্তিক থাকার পর আবারো তাদেরকেই নিয়োগ দিচ্ছে সরকার। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, তিন ডেপুটি গভর্নর পদে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ায়, মেয়াদ শেষ হবার পরও এই পদে যারা ছিলেন তাদেরকেই পুনরায় নিয়োগ দিচ্ছে সরকার। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া তিন ডেপুটি গভর্নরেরই চুক্তির মেয়াদ বাড়ছে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের পাঠানো সুপারিশের পর অর্থমন্ত্রীর কাছে নিয়োগের সারমর্ম পাঠায় অর্থ মন্ত্রণালয়। এদিকে আবারো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে। তাদের দাবি, এভাবে বিভিন্ন বিভাগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকা-ে স্থবিরতা চলে এসেছে। প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সঠিকভাবে পদোন্নতি হচ্ছে না। তারা একটি সার্চ কমিটি গঠন করে যোগ্যদেরকে নির্বাচনের সুযোগ প্রদানের আহ্বান জানান। কর্মকর্তারা জানান, নতুনদের সুযোগ করে দিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার সাধারণত ১/২ বছরের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। কিন্তু এসব কর্মকর্তাদেরকে চার বছরের জন্য দেয়া হয়। তাদের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আবারো চুক্তিভিত্তিক চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করেন গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ইনকলাবকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে থেকে যোগ্যতা সম্পন্নদের সার্চ কমিটির মাধ্যমে এই সব পদে নিয়োগ দিলে ভালো হয়। এতে ব্যাংকে কর্মরত যোগ্যদের সুযোগ বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। পূর্বেও সার্চ কমিটির মাধ্যমে এভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সূত্র মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের চার ডেপুটি গভর্নরের মধ্যে তিনজনের (এস কে সুর চৌধুরী, আবু হেনা মো. রাজী হাসান ও নাজনীন সুলতানা) চার বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ গত ২১ জানুয়ারি শেষ হয়। এরা কেউই এখন অফিস করছেন না।
কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বার বার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদানে তরুণ, উদ্যমী ও মেধাবী ব্যাংকারদের উচ্চতর পদে দায়িত্ব নেয়ার পথ সংকুচিত হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগকে সীমিত করা হচ্ছে। তাদের মতে, একটি বিশেষ মহলের সুবিধার স্বার্থে এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন তারা। এর মাধ্যমে প্রতিশ্রুতিশীল ব্যাংকাররা ডেপুটি গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ব্যাংকিং খাতকে নেতৃত্ব দেয়ার যে স্বপ্ন দেখছিলেন সে উদ্যমতা হারিয়ে ফেলবেন। যা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ দেশের অর্থনীতির জন্য হতাশাজনক হবে বলে মনে করেন এসব কর্মকর্তারা। তাদের মতে, একটি সার্চ কমিটি গঠন করে যোগ্যদেরকে নির্বাচনের সুযোগ করে দিয়ে ব্যাংকিং সেক্টরে কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরিয়ে আনা হোক। এতে নতুন নেতৃত্বের পথ সুগম হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, ওটা নিয়োগ দেয়া হবে। এটা সে রকম কিছু নয়। ‘নতুন ডিজি নিয়োগ দেয়া হবে কি না’Ñ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখা যাক। জনপ্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমার সমস্যা হচ্ছে, এদের (পুরনো ডিজিদের) এখন এক্সটেনশন না দিলে সার্চ প্রসেসে তিন মাস সময় লাগে। ‘নতুনদের মধ্যে যোগ্য লোক কি নেই’-এ প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, আছে, আছে। কিন্তু প্রসেসটা লম্বা।
‘বাংলাদেশ ব্যাংকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে’ এ কথার জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর সব সময়েই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। আর চুক্তিভিত্তিক হওয়া ভাল।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এসব ডেপুটি গভর্নরদের দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে সর্বকালের সর্ববৃহৎ হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক এবং বিসমিল্লাহ গ্রুপসহ বেশ কিছু জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। যে ঘটনার কোন প্রতিরোধ বা প্রতিকারমূলক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। যা তাদের ব্যাংকিং দক্ষতা এবং পুন:নিয়োগকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ঋণদান সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্থনীতির দুর্বল জায়গা হিসেবে ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাবকে দায়ী করেছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেছেন, দীর্ঘদিন একই পদে থাকায় এসব ডেপুটি গভর্নররা ব্যাংকিং খাতে নানা দুর্নীতির সুযোগ দিয়ে বিপুলভাবে লাভবান হয়েছেন। তাই সার্চ কমিটির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে থেকে যোগ্য ও দক্ষদের এসব পদে নিয়োগ প্রদানের দাবি জানান। অন্যথায় অচিরেই বাংলাদেশ ব্যাংক চরম বিপদের মুখে পড়বে। এ থেকে উত্তরণের পথ থাকবে না। কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে উল্লেখ করেন তারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, পেশাদারিত্বের দোহাই ও কাল্পনিক অভিজ্ঞতা অজুহাতে ইতোপূর্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকটি বিভাগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে এর আগেও কর্মকর্তারা অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেছেন। ব্যাংকের কর্মকা-ে গতিশীলতার স্বার্থে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ থেকে সরে আসতে পরিচালকদের কাছে স্মারকলিপিও দেয়। কিন্তু কোনভাবেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন