বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দক্ষিণাঞ্চল থেকে কর্মে ফেরা জন স্রোতেও নিষ্ক্রিয় বিআইডব্লিউটিসির বিশেষ সেবা

প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঈদপরবর্তী রাজধানীমুখী কর্মজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের ¯্রােত অব্যাহত থাকলেও থেমে গেছে রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠানের বিশেষ যাত্রীসেবা।
বিআইডব্লিউটিসির ৪টি প্যাডেল জাহাজের ৩টিই গতকাল অচল ছিল। এর মধ্যে ‘পিএস টার্ন’ দীর্ঘ কালক্ষেপণের পরে ঈদের আগে ভারী মেরামতে ডকইয়ার্ডে নেয়া হয়। অপর দুটির মধ্যে গত ৪ জুলাই ‘পিএস মাহসুদ’ বরিশালের অদূরে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে বন্দরে পড়ে আছে এখনো। দুর্ঘটনার ৭ দিন পরে গত সোমবার সংস্থা যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, তারা এখনো নৌযানটি পরিদর্শনও করেনি। গত ১১ জুলাই সংস্থার অপর নির্ভরযোগ্য যাত্রীবাহী নৌযান, ‘পিএস অস্ট্রিচ’ ঢাকার সদরঘাটে একটি বেসরকারী নৌযানের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাদামতলী ঘাটে পড়ে আছে। সোমবার নৌযানটির যাত্রা বাতিলও করা হয়। তবে সংস্থাটির পরিচালক-কারিগরি’কে গতকাল দুপুর পর্যন্ত অস্ট্রিচের দুর্ঘটনার বিষয়টি জানানো হয়নি। এমনকি সোমবার সারা রাত সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে মাঝারি বর্ষণে লঞ্চের ছাদ বোঝাই হাজার হাজার যাত্রী ভিজে জুবুথুবু হলেও কারোরই কিছু করণীয় ছিল না।
সংস্থার যাত্রী সেবা (?) ইউনিট গত মাসের মধ্যভাগে ঈদের আগে-পরে ঢাকার সাথে দক্ষিণাঞ্চলের ঈদ কেন্দ্রীক যাত্রী পরিবহনের একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে তা সর্বসাধারনের জন্য প্রকাশ করে। সে পরিকল্পনায় ১০ জুলাইয়ের পরে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানী ছাড়াও চাঁদপুর হয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মস্থলমুখি মানুষকে পৌঁছে দেয়ার জন্য কোনো বিশেষ নৌযানের ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
অথচ ৭ জুলাই ঈদ উল ফিতর উদযাপনের পরে ১০ জুলাই হতে মূলত দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানী ছড়াও চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মস্থলমুখী জন¯্রােত শুরু হয়। কিন্তু বিআইডব্লিটিসি’র মত একটি শতাধিক বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সংস্থার কথিত যাত্রী সেবা ইউনিট ঈদের দিন ও পরের দিন নিয়মিত রকেট সার্ভিসের পাশাপাশি যাত্রীশূন্য ‘বিশেষ স্টিমার সার্ভিস’ পরিচালনা করে জনগণের লক্ষ লক্ষ টাকা লোকসান গুনে প্রয়োজনের সময় যাত্রীসেবা বন্ধ করে দিয়েছে। গত ১০ জুলাই থেকে বরিশাল-ঢাকা রুটে বেসরকারী রুট পারমিটধারী ১৪টি নৌযান ডবল ট্রিপে যাত্রী পরিবহন করছে। এমনকি প্রতিটি নৌযানই ধারন ক্ষমতার তিন গুণেরও বেশী যাত্রী পরিবহন করায় জেলা প্রশাসন বরিশাল নদী বন্দরে বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বেসরকারি নৌযানগুলোকে নির্ধারিত সময়ের দু থেকে আড়াই ঘন্টা আগেই বন্দর ত্যাগে বাধ্য করছে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিসি’র যাত্রী সেবা (?) ইউনিটের কুম্ভকর্ণের মতো ঘুম ভাঙেনি। সংস্থাটির এ অমানবিক উদাসীনতা বিগত দিনের প্রতিটি ঈদের পরেও লক্ষণীয় ছিল।
বিষয়টি নিয়ে ইতিপূর্বে ইনকিলাবের পক্ষ থেকে সংস্থার জিএমের (বাণিজ্য) দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি তখন জানিয়েছিলেন, ‘ঈদের পরে বিশেষ নৌযানের প্রয়োজন হলে বরিশাল অফিস তা দেখবে। বরিশাল অফিস থেকে চাহিদা পেলেই আমরা প্রয়োজনে বাড়তি নৌযানের ব্যবস্থা করব।’ কিন্তু সে কথা ভুলে গেছেন সবাই। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, আজ (বুধবার) মোড়েলগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা নিয়মিত রকেট সার্ভিসের নৌযান ‘পিএস লেপচা’ বরিশাল বন্দর ভীড়তেই পারবে না অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে। বিষয়টি ইতোমধ্যে সংস্থার সদর দফতরকেও অবহিত করা হয়েছে দায়িত্বশীল মহল থেকে।
ওয়াকিবাহাল মহলের মতে, পিএস টার্ন জাহাজটির ভারী মেরামত জরুরি ছিল আরো দেড় বছর আগে। গত জানুয়ারি থেকেই সংস্থার বাণিজ্য বিভাগ নৌযানটির মেরামত সম্পন্ন করতে বারবার তাগিদ দিলেও কারিগরি বিভাগ তা আমলে নেয়নি। রমজান শুরু কয়েকদিন আগে টার্নকে মেরামতে ডকইয়ার্ডে নেয়া হয়েছে। আগামী ঈদ উল আজহার আগেও এর মেরামত সম্পন্ন হবে কিনা তা বলতে পারেছন না কেউ। অপরদিকে গত ৪ জুলাই দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পিএস মাহসুদ-এর মেরামত কবে শুরু হবে তাও কারো জানা নেই। সংস্থার তদন্ত কমিটি নৌযানটি পরিদর্শনের পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতে পারে। এ নৌযনটিও আগামী ঈদুল আজহার আগে যাত্রী পরিবহনে ফিরিয়ে আনা জরুরি।
এসব বিষয়ে গতকাল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আশোক মাধব রায়ের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, ‘সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর এবং বিআইডব্লিউটিসি’কে মাহসুদ-এর দুর্ঘটনার বিষয়টি জরুরী ভিত্তিতে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।’ পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত নৌযানটি সম্ভব দ্রুততম সময়ের মধ্যে টেকসই ও নির্ভরযোগ্যভাবে মেরামতে পদক্ষেপ গ্রহণেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও সচিব জানান।
এদিকে গতকালও বরিশাল নদী বন্দরে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। রুট-পারমিটধারী ১৪টি বেসরকারি নৌযানের ১২টি গতকালও ডবল ট্রিপে বরিশাল-ঢাকা রুটে যাত্রী পরিবহন করেছে। তবে বিআইডব্লিউটসি’র নিয়মিত রকেট সার্ভিসের ‘এমভি মধুমতি’ জাহাজটি মোড়েলগঞ্জ-পিরোজপুর-ঝালকাঠী থেকে পূর্ণ ধারণক্ষমতার যাত্রী বোঝাই করে। ফলে বরিশাল বন্দরে আর কোনো যাত্রীর পা ফেলার স্থান ছিল না। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কিছু কেবিন যাত্রীর সাথে হাতেগোনা কিছু ডেক যাত্রী নিয়ে নৌযানটি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পরে বরিশাল বন্দর ত্যাগ করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন