শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কোটি কোটি টাকার স্থাপনা সুরক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি এলাকাবাসীর

প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : যমুনার পানিবৃদ্ধি ও ¯্রােতের কারণে অবারো ধসে গেল যমুনার ভাঙন থেকে ধুনট ও কাজীপুরকে সুরক্ষায় নির্মিত বানিয়াজান স্পার। আর ভাঙন-ধস সংঘটিত হয় পূর্বাপর বছরের মতো রাতের আঁধারেই।
এ ব্যাপারে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সোমবার রাতে যমুনা তীরবর্তী ধুনট উপজেলার ভা-ারবাড়ী ইউনিয়নে বানিয়াজান স্পারের ২৫ মিটার অংশ ধসে গেছে। এছাড়া সেখানকার আরেকটি স্পার (ভাঙন রোধে নির্মিত অবকাঠামো) হুমকির মুখে রয়েছে। ভাঙনের কারণে যমুনাপাড়ের মানুষরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ধুনট ছাড়া পাশের সারিয়াকান্দি উপজেলার বেশ কিছু স্থান ছাড়াও পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। বর্ষাজনিত কারণে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ইতোমধ্যে তিন উপজেলারই বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভিতরের কিছু নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও যমুনা পাড়ের মানুষরা জানান, গত দু’সপ্তাহ ধরে যমুনার পানি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কখনও আবার একটু কমলেও পরক্ষণেই তা আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। পানি বৃদ্ধি ও কমার পরিক্রমায় দুই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙনও। সারিয়াকান্দীর চন্দনবাইশাসহ সংলগ্ন এলাকায় জিও টেক্সের বালুর বস্তা ফেলে নদীতীর রক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া পানিবৃদ্ধির কারণে চন্দনবাইশাসহ কতুবপুর এলাকার বাঁধসংলগ্ন নিচু এলাকা (বাঁধের ভিতরের অংশ) প্লাবিত হয়েছে কিছু বাড়িঘরে পানি উঠেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, যমুনা সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়া অত্যন্ত কঠিন বিষয়। সোমবার পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচে থাকলেও ধুনটের ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের বানিায়াজান স্পারের স্যাংকের ২৫ মিটার হঠাৎ করে ধসে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা রাতেই এলাকায় গিয়ে ধস ঠেকানোর ব্যবস্থা নেন। স্পারটির কংক্রিট এবং মাটির স্যাংক মিলিয়ে দৈর্ঘ্য ৭৯০ মিটার। আরসিসি অংশের ১৫০ মিটারের মধ্যে গত বছর ৫০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। আর মাটির তৈরি স্যাংক অংশে এর আগেও ধস নেমেছিল। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন জানান, রাতে ধসে যাওয়া স্থানে বালুভর্তি জিও টেক্সের বস্তা ফেলা হচ্ছে। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে এটি নিরাপদ অবস্থানে আনা যাবে। তিনি সারিয়াকান্দির কিছু স্থানে নদীভাঙনের বিষয়ে বলে, এটি এখনো মারাত্মক হয়ে ওঠেনি। ভাঙন স্থানে বালুর বস্তা ফেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। এদিকে ধুনট উপজেলায় স্পারে ধস দেখা দেয়ায় এলাকার লোকজনের মধ্যে ব্যাপক শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ ভাঙন পরিস্থিতির উন্নতি না হলে স্পার পুরোটা ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বানিয়াজান, শিমুলবাড়ি, কয়াগাড়ি, চিথুলিয়া, চল্লিশপাড়া, মানিকপটল, ভা-ারবাড়ি এবং সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার কিছু এলাকা ফসলি জমি এবং ঘরবাড়ি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে। শিমুলবাড়ি গ্রামের কৃষক গোলাম রব্বানী জানান, তারা খুব শঙ্কায় রয়েছেন, কারণ ভাঙন রোধ করা না গেলে যমুনার পানিতে পাট-আখসহ অন্যান্য ফসলের বিনষ্ট হয়ে যাবে। ঘরবাড়ি ও ফসল হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। এদিকে ধুনট উপজেলার শহরাবাড়ি স্পারও হুমকির মুখে রয়েছে। ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যরে এই স্পারটি কয়েক বছরে ধরেই নিয়মিত ভাবেই রাতের আঁধারে ভেঙ্গে বা ধসে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে এখন মাত্র সাড়ে ৩শ’ মিটারে এসে ঠেকেছে। এলাকাবাসির অভিযোগ প্রতিবছরই ভরা বর্ষা মওশুমে রাতের আঁধারেই কেন ভাঙছে এই ভাঙনের মধ্যে নাশকতা বা ঠিকাদারীর নামে টাকা লোপাটের কোনো বিষয় আছে কিনা তা তদন্ত করা উচিত।
উল্লেখ্য ২০০২ সালে এই স্পারটি ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হওয়ার পর থেকে নিয়মিতই এটা বর্ষা মৌসুমেই রাতের আঁধারে ভাঙছে আর ভাঙন রোধের নামে ব্যয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এভাবে চলতে থাকলে ২-১ বছরের মধ্যেই এর সংস্কার ব্যয় বাঁধের মূল ব্যয়কেও ছাড়িয়ে যাবে বলে অভিমত এলাকাবাসীর। পাশাপাশি তারা সোনাতলা-সারিয়াকান্দি-ধুনট ও কাজীপুর উপজেলাকে রক্ষায় নির্মিত শত শত কোটি টাকার বাঁধ, স্পার, গ্রোয়েন, ফিসপাস গেট ও অন্যান্য অবকাঠামোর সুরক্ষায় পাহারাদার নিয়োগের জোর দাবি যমুনা পাড়ের হাজারো মানুষের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন