করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে পূর্ব-প্রস্তুতি, সতর্কতা এবং কড়াকড়ি বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যাতে বিদেশি বা দেশি কোনো নাবিকের মাধ্যমে করোনা ছড়াতে না পারে। বিশেষত চীনা জাহাজকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সাগরের দিকে অপেক্ষায় রেখে এবং সেখানে নাবিকদের শতভাগ স্বাস্থ্য পরীক্ষা (স্ক্রিনিং) শেষেই জেটিতে ভিড়তে দেয়া হচ্ছে। চীনের বন্দর হয়ে আসা ‘এমভি ওশেন নভশেভা’ এবং ‘এমভি থর্স উইন্ড’ নামক দুটি জাহাজ গতকাল পর্যন্ত করোনা কোয়ারেন্টাইন পরীক্ষাধীন ছিল। এখনও বন্দরে আসা জাহাজবহরের কোনো নাবিককে এ ভাইরাসে আক্রান্ত পাওয়া যায়নি।
অবশ্য চীনা নাবিকগণ নিজ দেশেই যথাযথ করোনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করেই জাহাজে উঠছেন বলে শিপিং সূত্রে জানা গেছে। এদিকে জাহাজের বিদেশি নাবিকদের পছন্দের বিচরণ ও বিনোদন স্পষ্ট পতেঙ্গা, কাট্টলী, হালিশহর, গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে মানুষের যাতায়াত ও সবধরনের জনসমাগম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গৃহীত ব্যবস্থা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক গতকাল ইনকিলাবকে জানান, সী-অ্যাম্বুলেন্স এবং ল্যান্ড অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তদারকিতে বন্দর হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, টেস্ট কীটস, থার্মাল স্ক্যানার, অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামসহ ৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি পৃথক ইউনিট খোলা হয়েছে। চীনা জাহাজকে অপেক্ষায় রেখে নাবিকদের শতভাগ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। বন্দর প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ এসব বিষয়ে মনিটরিং, সমন্বয় করছে।
সমুদ্রগামী জাহাজের মাধ্যমে ‘করোনা ভাইরাস’ যাতে ছড়াতে না পারে সেই লক্ষ্যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বুধবার চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সভাপতিত্বে সব সরকারি সেবা সংস্থার প্রথম সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত অনুসারে চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও পরিস্থিতি মোকাবিলায় চট্টগ্রাম মহানগরীতে বিশেষ ব্যবস্থায় তৈরি রাখা চারটি হাসপাতালের অন্যতম হচ্ছে বন্দর হাসপাতাল।
বন্দর সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশি-বিদেশি নাবিকের দ্রুত পরির্চযায় বন্দর মেডিক্যাল বিভাগের টিমকে প্রস্তুত। বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর এম শফিউল বারীর নেতৃত্বে তা সমন্বয় করা হচ্ছে। সমুদ্রপথে করোনাভাইরাস প্রবেশ প্রতিরোধে জাহাজের ক্যাপ্টেন এবং এজেন্টদের প্রতি নির্দেশে জাহাজ বহির্নোঙরে আসার সাথেই এ বিষয়ে যথাযথ ঘোষণা দেয়া বাধ্যতামূলক। জাহাজসমুহ পোর্ট লিমিটে আসার পরই নিশ্চিত করতে হবে, জাহাজে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোন নাবিক নেই।
তাছাড়া পূর্ব-এশিয়ার বন্দরগুলো হয়ে আসা জাহাজের নাবিকের শতভাগ স্ক্রিনিয়িয়ের মাধ্যমে ‘নিরাপদ’ ঘোষণা শেষেই বন্দওে ঢোকার অনুমতি পাচ্ছে। জাহাজ থেকে হাসপাতালে দ্রুত রোগী স্থানান্তরে জন্য বন্দরের সী-অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত। বন্দর ইমিগ্রেশন ডেক্সে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে রয়েছে মেডিক্যাল টিম। কোনো নাবিক বাইরে তথা চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রবেশ করতে চাইলে মেডিক্যাল স্ক্রিনিংয়ে সুস্থতার ছাড়পত্র সাপেক্ষে অনুমতি দেয়া হচ্ছে। এছাড়া শহরে ঢুকে মানুষের সংস্পর্শে যাবার সুযোগ রাখা হয়নি।
চীনা জাহাজের আমদানি-রফতানি পণ্য খালাসের আগে আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট সময় বহির্নোঙরে অপেক্ষমান রাখবে। যেহেতু ‘আইএসপিএস কোড’ অনুসরণকারী চট্টগ্রাম একটি আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বন্দর ভবনে বার্থিং সভার পর সিদ্ধান্ত অনুসারে, করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে চীন হয়ে আসা জাহাজ কিংবা চীনা নাবিক রয়েছেন এমন জাহাজ কমপক্ষে ১৪ দিন, সর্বোচ্চ ২২ দিন সাগরে থাকতে হবে। এসব জাহাজ বহির্নোঙরে অপেক্ষা করছে।
বিদেশি শিপিং লাইনস, প্রিন্সিপাল, কোম্পানি ও লোকাল এজেন্টগুলোকে বাধ্যতামূলক এসব নিয়ম-বিধি আগেই জানিয়ে দেয়া হয়। তারা তা মেনে চলছে। অবশ্য এরফলে জাহাজ পরিচালনায় কিছুটা ধীরগতি রয়েছে।
জাহাজে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো নাবিক নেই ঘোষণার পাশাপাশি বন্দর স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিক্যাল টিম তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে। নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হলেই সে জাহাজের পণ্য খালাস শুর কিংবা বন্দরের মূল জেটি-বার্থে ভিড়বে। স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, গত ৩১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার নাবিকের স্ক্রিনিং করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোন নাবিক পাওয়া যায়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন