শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খুতবা বয়ানে নজরদারি করে ওলামার কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করা যাবে না-ইসলামী নেতৃবৃন্দ

প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : জুমার খুতবা ও বয়ানে নজরদারির সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন বিভিন্ন ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামী নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, এরূপ নজরদারির মাধ্যমে ওলামায়ে কেরামের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করার অপপ্রয়াসের ফলাফল শুভ হবে না। খুতবা নজরদারির দুঃসাহস সরকারের জন্য বিপদ বয়ে আনতে পারে। তারা বলেন, নজরদারি নয় বরং খতিব ওলামায়ে কেরামকে সাথে নিয়েই সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ দমন সহজ হবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম
জুমার খুতবায় নজরদারির নামে ওলামায়ে কেরামের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করার ষড়যন্ত্র শুভ হবে না বলে মন্তব্য করেছন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর নির্বাহী সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস। তিনি বলেন, ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান জুমার খুতবা নিয়ন্ত্রণের মতো দুঃসাহস সরকারের জন্য কঠিন বিপদ বয়ে আনতে পারে। জুমার খুতবা মুসলমানদের সামাজিক সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, সর্বোপরি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। খুতবার ব্যাপারে যারা নেগেটিভ ধারণা করে তাদের ঈমান নিয়েও সন্দেহ আছে। মুফতি ওয়াক্কাস বলেন, ইসলামের সুদীর্ঘ ইতিহাসে খুতবা মানুষকে আলোর পথ দেখিয়েছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের নির্দেশ করেছে এমন নজির নেই। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতাবশত যারা খুতবা নিয়ে নাকগলাতে শুরু করেছে তাদের উচিত ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা সম্পর্কে জেনে নেওয়া। ওলামায়ে কেরামকে সাথে নিয়ে সমাধান খোঁজা। জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বারবার প্রমাণ হওয়া সত্ত্বেও জঙ্গিবাদকে যারা ইসলামের সাথে মিলিয়ে ফেলছে তারা মূলত সা¤্রাজ্যবাদের গোপন দালাল। অর্থের নেশায় তারা জঙ্গিবাদ তথা আত্মহননকে সমর্থন দেয়।
ধর্মীয় অধিকার পরিষদ
সরকারের কোনো কোনো দায়িত্বশীল সন্ত্রাস, জঙ্গি দমনের পথ হিসেবে জুমার খুতবা, আলেমদের বয়ান, মসজিদে, মাদরাসায় নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ধর্মীয় অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক ড. মাওলানা হাফিজুর রহমান, সদস্য সচিব মুফতি ওমর ফারুক। বিবৃতিতে তারা বলেন, ৯২ ভাগ মসুলমানের ধর্মীয় অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্ণ মনোযাগ এবং আন্তরিকতা কামনা করে বলেন, আলেম-উলামা ও ইমাম-খতিবদের বদনাম করে না। আলেমদের সাথে নিয়েই সন্ত্রাস দমন করতে হবে। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে এ সবের মূল উৎস ও উপাদান ধ্বংস করতে হবে। আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক ও আদর্শিক কারণে সৃষ্ট হতাশা, ক্ষোভ এবং প্রেরণা দূর না করে শুধু অপরাধী ধরে ধরে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করা যাবে না। বিশেষ করে সমস্যা জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক সুবিধা নেয়া, ক্ষমতায় যাওয়া অথবা টিকে থাকার চিন্তার সমস্যার সমাধান করা যাবে না। সন্ত্রাস দমনে এর নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ জঙ্গিবাদের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।
আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেওয়া জুমার খুতবা ও বয়ান নজরদারি করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন সংগঠনের আদর্শ নাগরিক আন্দোলনের আহ্বায়ক মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান, যুগ্ম-আহ্বায়ক-রাজু আহমেদ প্রমুখ। নেতৃবৃন্দ বলেন, সম্প্রতি গুলশানের হোটেলে এবং শোলাকিয়া ঈদগাহের পাশে যারা সন্ত্রাসী কর্মকা- করেছে তাদের সাথে মসজিদ-মাদরাসা বা কোনো আলেম-ওলামার সম্পর্ক নেই। মসজিদের ইমাম ও খতিবরা সর্বদা ইসলামী বক্তব্য, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, মাদকসহ সমাজের অনৈতিক কার্যক্রমের বিষয়ে দেশের মানুষকে সচেতন করে এসবের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে মুসল্লিদের উৎসাহিত করেন। দেশের ক্রান্তিকালে ইমাম খতিবরা অতীতেও ভূমিকা রেখেছে, বর্তমানেও রাখছে। সুতরাং বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে পুঁজি করে সরকার ৯২-৯৫% মুসলমানের এই দেশে “জুমার খুতবা ও বয়ান নজরদারি করার সিদ্ধান্ত” নিয়েছেন, যা নাস্তিক ও ইসলামবিরোধী গোষ্ঠীর ইসলামকে সঙ্কুচিত করার অপপ্রয়াসের অংশ। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইলে তাও সহ্য করা হবে না।

নেতৃবৃন্দ যেসব কারণে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা বন্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলুন। নেতৃবৃন্দ খুতবা ও বয়ান নজরদারির সিদ্ধান্ত বাতিল করার দাবি করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন