শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভারতীয় কোম্পানির সাথে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ চুক্তি সই

প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : বহুল আলোচিত রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ চুক্তি সই হয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে ভারতের কোম্পানি ভেল-এর সাথে এই চুক্তি হয়। ‘বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির (বিআইএফপিসিএল)’ পক্ষে চুক্তিতে সই করেন উজ্জ্বল ভট্টাচার্য ও প্রেম পাল যাদব।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহি চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ সচিব ও ভারতের হাইকমিশনার উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ছিলেন বাংলাদেশ-ভারত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির আজ বুধবারের বৈঠককে কেন্দ্র করে দেশটির বিদ্যুৎ সচিব প্রদীপ কুমার পূজারি’র নেতত্বে আসা উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সকল সদস্য।
চুক্তি সই শেষে জ্বালানি উপদেষ্টা ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, আমরা জানিয়ে দিয়েছিÑসরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সব ধরনের সহযোগিতা করবে। তবে প্রকল্পটি অবশ্যই আগামী তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৯ সালের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই কেন্দ্রটিতে উৎপাদিত সব বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ।
ভারতের বিদ্যুৎ সচিব প্রদীপ কুমার পূজারি বলেন, তারা যথাসময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। তিনি বলেন, এই প্রকল্পটি নির্মাণ করা হবে পরিবেশের সকল ভারসাম্য রক্ষা করেই। তিনি আরও বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আন্তর্জাতিক মানের করেই গড়ে তোলা হবে।
এদিকে চুক্তি সইয়ের পর আজ বুধবার যৌথ কমিটি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা পরিদর্শন করবেন। সেখান থেকে ফেরার পর বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির সভা। এই সভায় দুই দেশের বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার ক্ষেত্র চিহ্নিত করা, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ২০১০ সাল থেকে সচিব পর্যায়ের এই কমিটি কাজ করছে। এ ছাড়া কর্মকর্তা পর্যায়ে রয়েছে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ। আজ বুধবার সকালে এই গ্রুপের সভা হবে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ভারতের এই ভেল কোম্পানিই প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়ায় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ ঠিকাদার নির্বাচিত হয়েছে। গত ৩০ জানুয়ারি ভেলকে চিঠি দিয়ে চুক্তি করতে বলা হয়েছিল। শর্ত অনুযায়ী, চিঠি পাওয়ার ২৮ দিনের মধ্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ভেলকে বিআইএফপিসিএল-এর সঙ্গে চুক্তি করার কথা। কিন্তু পরে এই সময় বাড়ানো হয়। গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে তিনটি কোম্পানি দর প্রস্তাব জমা দেয়।
এর মধ্যে যৌথভাবে রয়েছে জাপানের মারুবিনি করপোরেশন ও ভারতের লারসেন এন্ড টুব্রো লিমিটেড এবং চিনের হারবিন ইলেকট্রিক ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লি, ফ্রান্সের এএলএসটিওএম ও চীনের ইটিইআরএন। এছাড়া ভারতীয় কোম্পানি ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালস লিমিটেড (ভেল) এককভাবে দরপ্রস্তাব জমা দেয়। দরপ্রস্তাবের সঙ্গেই কোম্পানিগুলো কেন্দ্র স্থাপনের বিনিয়োগ কারা করবে তার নিশ্চয়তা নিয়ে এসেছিল।
চূড়ান্ত চুক্তি করার তিন মাসের মধ্যে অর্থনৈতিক চুক্তি করতে হবে। অর্থনৈতিক চুক্তির ৪১ মাসের মধ্যে প্রথম ইউনিট এবং ৪৬ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আনতে হবে। এই হিসেবে কেন্দ্র স্থাপন শেষ হবে ২০১৯ সালের শেষে। রামপাল কেন্দ্রের ৭০ শতাংশ অর্থ ঋণ নেয়া হবে। এই ঋণ দেবে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। বাকি ৩০ শতাংশ পিডিবি ও এনটিপিসি যৌথভাবে বিনিয়োগ করবে।
সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন অনুযায়ী, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা (দেড় বিলিয়ন বা ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার)। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী ঠিকাদারই এই ঋণ সংগ্রহ করবে। এ ক্ষেত্রে ভারতের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট (এক্সিম) ব্যাংক থেকে ভেল ঋণের অর্থ পাবে। জানা যায়, ২ শতাংশ সুদে ঠিকাদারের মাধ্যমে এই অর্থ পাওয়া যাবে। তবে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ঋণের সুদের হার আরও বেশি হবে।
রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা পরিবেশবান্ধব হবে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে ইউনেসকো ইতিমধ্যে রামপাল এলাকা পরিদর্শন করেছেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশের একাধিক পরিবেশবিদ এই কেন্দ্র স্থাপনের বিরোধিতা করে আসছে। তারা মনে করছেন, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও ভারতের এনটিপিসির যৌথ উদ্যোগে গঠিত হয়েছে বিআইএফপিসিএল। বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সচিব এই কোম্পানির চেয়ারম্যান। এছাড়া এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকবেন এনটিপিসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
এই প্রকল্পের জন্য ঠিকাদারকে যেসব যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারিজ) আনতে হবে, তা শুল্কমুক্ত হবে কি না, সে বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সিদ্ধান্ত পেতে দেরি হওয়ায় নির্মাণ চুক্তি সই পিছিয়ে যায়। তবে চুক্তি সইয়ের পর দ্রুততম সময়েই নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে গতকাল দু’দেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
তবে এখন পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য কয়লার উৎস, কয়লা আনার প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি নিশ্চিত হয়নি। বিআইএফপিসিএলের একটি সূত্র বলেছে, কেন্দ্রটি নির্মাণে সময় লাগবে প্রায় চার বছর। কয়লা লাগবে তার পরে। কাজেই কয়লার উৎস ও আমদানির প্রক্রিয়া পদ্ধতি নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট সময় হাতে আছে।
এই কেন্দ্রের জন্য প্রতিদিন কয়লা লাগবে প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন। কেন্দ্রটির নির্মাণস্থল সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তসীমা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে। আইন অনুযায়ী সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে এ ধরনের স্থাপনা করা যায় না। তবে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন ও সুশীল সমাজের একাংশ প্রকল্পটিকে সুন্দরবন ধ্বংসকারী অভিহিত করে এর বিরোধিতা করছে।
আর সরকার বলছে, পরিবেশবিজ্ঞানী, গবেষক ও এ-সংক্রান্ত উচ্চতর প্রকৌশল জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের পরামর্শ নিয়েই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তা ছাড়া এই প্রকল্পে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি (সুপার ক্রিটিক্যাল) ব্যবহৃত হবে। তাই সুন্দরবনের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা অমূলক।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন