সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ও বন্ধু তুমি শুনতে কি পাও!

প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টালিন সরকার : গভীর রাতে ‘প্রবাসী মুখ’ নামের একটি অনুষ্ঠান প্রচার করে বাংলাভিশন। যারা দেশের বাইরে থাকেন সেই প্রবাসীদের নিয়েই এই অনুষ্ঠান। স্টুডিওতে আলোচক হিসেবে দু’তিন জন উপস্থিত থাকেন। বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশীদের সংকট ও সম্ভাবনা তুলে ধরে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়, নানা দেশ থেকে সরাসরি টেলিফোন করে প্রবাসীরা মতামত তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানটির মান এবং উপস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের জীবন চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রায়ই আলোচক ও সরাসরি ফোনে যারা মতামত দেন তারা প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের সংকট নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর ব্যর্থতা, স্বেচ্ছাচারিতা, অসহযোগিতার চিত্র তুলে ধরেন। প্রবাসে বাংলাদেশী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের বিষোদগারের চিত্র তুলে ধরা হয়। তাদের বক্তব্যের সারমর্ম হলো, ভারতীয়রাতো বটেই ভারতের মিডিয়াগুলো বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে থাকে সব সময়। বাংলাদেশী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে সে দেশে ভারতীয় শ্রমিকদের সুবিধা করে দেয়ার চেষ্টা করেন। এটা শুধু ওই সব দেশে কর্মরত প্রবাসী ভারতীয় শ্রমিকরা নয়; তাদের দেশের মিডিয়া এমনকি তাদের দূতাবাস ও সরকার কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায় সুকৌশলে। এটা ভারতীয়দের কার্যত নীতি ও কৌশল। ভারতীয় দূতাবাসগুলো ওই সব দেশে কর্মরত প্রবাসী শ্রমিকদের খোঁজখবর এবং স্বার্থের প্রতি যে গুরুত্ব দেন তা নজীরবিহীন। অথচ বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অধিকাংশই মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রবাসী শ্রমিকদের নীচু স্তরের মানুষ হিসেবে মনে করায় শ্রমিকদের খোঁজখবর নেয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। ফলে প্রবাসে থেকে রেমিটেন্স পাঠিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ফুলেফেঁপে তোলা শ্রমিকরা থাকেন অবহেলিত। বিশ্ব শ্রমবাজারে ভারতীয়দের ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশের শ্রমিকরা বাজার হারাচ্ছে অথচ ভারতীয় শ্রমিকদের বাজার প্রসার ঘটছে।
দীর্ঘদিন মালয়েশিয়া ও সউদী শ্রমবাজার বাংলাদেশীদের প্রবেশ বন্ধ ছিল। বৈধভাবে বাংলাদেশের শ্রমিকরা সে দেশে যেতে না পারায় অবৈধ পথে (সাগর পথে) মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে সাগরে ডুবে হাজারে হাজারে প্রাণ হারিয়েছে। মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ডের জঙ্গলে মারা গেছে। আবার সউদী আরবে হাজার হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশায় দিন যাপন করছে। আকামা (কাজ পরিবর্তনের ছাড়পত্র) না থাকায় হাজার হাজার শ্রমিক দুর্বিষহ জীবন যাপন করেছে। এ সব নিয়ে সরকার নানা সময় নানা ‘ছেলে ভুলানো’ কথাবার্তা বললেও বাস্তবতা তুলে ধরেছে ওই ‘প্রবাসী মুখ’ অনুষ্ঠানটি।
দুই. পৃথিবীর প্রতিটি দেশে ভারতীয় ও ফিলিপাইনের লোকজন কাজ করে। বৃত্তিমূলক শিক্ষার পাশাপাশি ইংরেজি শিক্ষার প্রতি জোর দেয়ায় ভারতের শ্রমজীবী মানুষ বিদেশে গিয়ে ভাল বেতনে চাকরি পান। রাষ্ট্রের দূতাবাসগুলো ওই সব শ্রমিকদের সহায়তায় সদা প্রস্তুত থাকতে বাধ্য থাকেন। প্রবাসী মুখ অনুষ্ঠানে এ চিত্র পাওয়া যায়। বাংলাদেশের শ্রমিকরা একদিকে অদক্ষ অন্যদিকে ইংরেজি না জানায় নানা সমস্যায় পড়েন। ভাষাগত কারণে বাংলাদেশী শ্রমিকদের কম বেতনে চাকরি করতে হয়। আর কোনো শ্রমিক বিদেশে কাজ করতে গিয়ে বিপদে পড়লে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো তাদের তেমন সহায়তা করেন না। ভূরি ভূরি এ উদাহরণ তুলে ধরা হয়। অথচ সরকার দূতাবাসগুলোর কর্মকর্তাদের প্রবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার বাধ্যবাধকতার নির্দেশ দিয়েছেন বলে শোনা যায় না। এ ব্যাপারে কোনো ট্রেনিং দিয়েছেন এমন শোনা যায় না। তাহলে দূতাবাসগুলোর কাজ কি?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষ কাজ করেন। শুধু সউদী আরবে কাজ করেন এমন লোকের সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ। সউদী আরবের ভাষা আরবী। ওই দেশের ভাষা না জানায় অনেক শ্রমিক কম বেতনে চাকরি করতে বাধ্য হন এবং নানা ঝামেলায় পড়েন। দেশের যারা শিক্ষানীতি নিয়ে কাজ করেন তাদের ‘ইসলাম’ সম্পর্কে নেতিবাচক মানসিকতার কারণে আরবীকে গুরুত্ব না দেয়ায় স্কুলে আরবী শিক্ষা নিতে পারেন না ছেলেমেয়েরা। ফলে সউদী আরবে কাজে গিয়ে তারা শুধু ভাষা না জানায় কম বেতন পান। আর ইংরেজি! এটা আন্তর্জাতিক ভাষা। পৃথিবীতে চলতে এখন মাতৃভাষার পাশাপাশি ইংরেজি শেখা জরুরী। সে জন্যই ভারত শিক্ষানীতিতে মাতৃভাষা হিন্দীর মতোই গুরুত্ব দিয়েছে ইংরেজি ভাষা শেখার উপর। ভারতের হাইস্কুলে পাস করা ছাত্রছাত্রীরা যেভাবে ইংরেজি ভাষায় কথাবার্তা বলতে পারেন; তা বাংলাদেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া ছাত্রছাত্রীদের পক্ষেও সম্ভব নয়। ভাষার কারণে ভারতের শ্রমিকরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করে বাড়তি সুবিধা পায়। এমনকি উচ্চশিক্ষা নিয়ে আমেরিকা-বৃটেনসহ বিদেশে নিজেদের শক্ত অবস্থান করে নেয়। বাংলাদেশে ২০ বছর আগেও ইংরেজি শিক্ষার প্রতি তেমন গুরুত্ব দেয়া হতো না। ইদানিং দেয়া হচ্ছে। ১০ থেকে ১২ বছর আগেও দেখা গেছে বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা ভারতে গিয়ে সে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে। দেশে ইংরেজি ভাষায় উচ্চ শিক্ষার মান সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান না থাকায় বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে বাধ্য হয়। এখন দেশে বেশ কিছু ইংলিশ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। রাষ্ট্রীয় এবং ব্যক্তি মালিকানায় উচ্চ শিক্ষার মান সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। সে সব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে দেশের ছেলেমেয়েরা। বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করে তারা বিদেশ যাচ্ছেন এবং বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল করছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া ছেলেমেয়েদের অনেকেই ‘নাসা’তে চাকরি করছেন; বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করছেন। এক সময় ভারতীয়রা বিশ্বের বিখ্যাত বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন; বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করেছেন। এখন সেই জায়গায় বাংলাদেশী ছেলেমেয়েরা যোগ হয়েছে। সে জন্যই কি ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিষোদগার! গত কয়েক বছরে স্কলাসটিকা, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েটের কয়েকজন ছাত্রের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। গুলশান হামলা, ঈদের দিন শোলাকিয়ায় হামলার জঙ্গিরা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল। ওই সব নামকরা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী দেশ বিদেশে কাজ করছেন। সুনাম কুড়িয়েছেন। এখনো হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করছেন। তাদের মধ্যে জঙ্গি, খুনী এবং দানব হয়েছে এমন সংখ্যা কি খুব বেশি? ওই সব প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে নিসবাস ইসলাম, মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজদের সংখ্যা কত? যারা জঙ্গির ট্রেনিং নিয়ে মানুষ খুন করছে তারা অপরাধী এবং তাদের বিচার হওয়া উচিত। পাশাপাশি দেশের তরুণ শিক্ষার্থীরা যাতে জঙ্গীদের খপ্পরে না পড়েন সে জন্য পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সতর্ক হওয়া জরুরী। এ ব্যাপারে সরকারের সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা থাকবে। কিন্তু হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে পাঁচ থেকে ১০ জন ছাত্র জঙ্গি হলেই ওই প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকা করার চিন্তা-ভাবনা কতটুকু বিবেচনা প্রসূত তা বিবেচ্য। কারণ, অনেকেই বলতে শুরু করেছেন সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে এ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের এখন আর টাকা খরচ করে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে হয় না। আবার এ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে বাংলাদেশী ছেলেমেয়েরা বিশ্বের দেশে দেশে গিয়ে উচ্চ বেতনে চাকরি করছে; গবেষণা করছে। বাংলাদেশের এই সাফল্যে বন্ধুরূপী প্রতিবেশী চাণক্যনীতির ভারতের পছন্দ নয়। জঙ্গি তকমায় তারা বাংলাদেশের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে সেটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশের রাজনীতি কার্যত দিল্লী তোষণ নীতির গ্রহণে অভ্যস্ত হওয়ায় নীতি নির্ধারকদের ভারতীয় চক্রান্তের ফাঁদে পা দেয়ার শঙ্কা কমছে না।
তিন. ইতালীয় নাগরিক তাবেলা সিজার ও জাপানের হোসি কোনিও খুনের ঘটনায় বাংলাদেশ মর্মাহত। বিদেশী দুই নাগরিক হত্যার রক্ত শুকাতে না শুকাতেই গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় জঙ্গি দানবদের হামলায় ১৭জন বিদেশী খুন হন। এদের মধ্যে ৭ জন জাপানি ও ইতালির ৯ জন। জাপানিরা বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকা-ে জড়িত ছিল। আর ইতালির নাগরিকরা ছিল গার্মেন্টস ব্যবসায়। রানা প্লাজা ধসের পর দেশে প্রায় সাড়ে ৬শ’ গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ইতালির নাগরিক খুন হওয়ায় বাংলাদেশ গার্মেন্টসে কালো ছায়া পড়ার শঙ্কা হচ্ছে। অথচ গার্মেন্টস শিল্প দেশের গ্রামীণ মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টে দিয়েছে। গরীব পরিবারের জীবনমান উন্নতি করেছে। দেশের রিজার্ভ মূলত প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিটেন্স আর গার্মেন্টস রফতানির আয়। অথচ দু’টি সেক্টরে যেন শনির দশা! গ্রামের গরীব মেয়েরা গার্মেন্টস কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। সেই গার্মেন্টস ধ্বংসের জন্যই কি ইতালির নাগরিকদের হত্যা? বাংলাদেশে গার্মেন্টস ব্যবসায় ধস নামলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে ভারত। আমেরিকা, ইউরোপসহ বিশ্বের যে সব দেশে গার্মেন্টস ব্যবসায় বাংলাদেশ সাফল্য দেখিয়েছে সে সব দেশে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম গার্মেন্টস পণ্য উৎপাদন ক্ষমতার দ্বিগুণ অর্ডার পায়। তাদের বাংলাদেশ নিয়ে চিন্তা নেই। ভারত সব সময় বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী। বিশ্ব শ্রমবাজার এবং গার্মেন্টস শিল্পে বাংলাদেশ যেখানে বিপদে পড়েছে সেখানেই দেখা গেছে ভারতের কালোছায়া। বিশ্বের দেশে দেশে বাংলাদেশী শ্রমিক ও গার্মেন্টস নিয়ে ভারতীয়দের ষড়যন্ত্রের নানা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে ‘প্রবাসী মুখ’ নামের ওই টিভি অনুষ্ঠানে। সরকার দাবি করছে বিদেশী হত্যায় উন্নয়ন কর্মকা- ব্যাহত হবে না; এবং গার্মেন্টস শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। বিশেষজ্ঞরা এ বক্তব্যকে ‘ছেলে ভুলানো গল্প’ মনে করছেন। স্টেকহোলডারদের আশঙ্কা ইতালির নাগরিক হত্যার ঘটনা গার্মেন্টস শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তার ইংগিতও পাওয়া যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে জিএসপি সুবিধা পাওয়ার যেসব দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে বাংলাদেশের নাম নেই। নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলে ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশের বায়ার বাংলাদেশে বৈঠক না করে সিংগাপুরসহ তৃতীয় দেশে বৈঠকের প্রস্তাব করেছে। শুধু কি তাই; নিরাপত্তাজনিত অজুহাতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় মানিল-ারিং গ্রুপ ও টেলিকমিউনিকেশন বিষয়ক সংস্থা এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার তাদের বৈঠক ঢাকার পরিবর্তে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাড়ে তিনশ’ দেশী বিদেশী প্রতিনিধির অংশগ্রহণে মানিল-ারিং গ্রুপের অনুষ্ঠেয় বৈঠকটি ২৪ থেকে ২৮ জুলাইয়ে ঢাকায় হওয়ার কথা ছিল। এটা কি অশনি সংকেত নয়! গার্মেন্টস শিল্পে কাজ করে প্রায় ৪০ লাখ নারী। তারা তুলনামূলক কম বেতনে চাকরি করলেও গার্মেন্টস এর কারণে জীবনযাত্রার পরিবর্তন করেছেন। গ্রামে খড়ের ঘরের বদলে টিনের ঘর করেছেন। ওইসব গার্মেন্টস কন্যা কি বিপদে পড়বে না? আর গার্মেন্টসে শিল্পে বাংলাদেশ বাজার হারালে সুবিধা পাবে কে? অবশ্যই ভারত। কারণ বাংলাদেশের পাট শিল্পকে ধ্বংস করতে বিশ্বব্যাংক ও ভারত যৌথভাবে ষড়যন্ত্র করে সফল হয়েছে। বিশ্বপাটের বাজার এখন ভারতের দখলে। এখন বিদেশী শ্রম বাজার ও গার্মেন্টস ব্যবসা পেতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত ষড়যন্ত্র করছে। সে কারণে সন্ত্রাস বন্ধে বাংলাদেশ ভারতের সহায়তা নিলেও সাধারণ মানুষ জঙ্গি হত্যাকা-গুলোর পিছনে সন্দেহের তালিকায় ভারতকে বাদ দিতে পারছে না।
চার. এলিয়েডার কথা মনে পড়ে! মার্কিন তরুণী এলিয়েডা ম্যাকর্ড? ’৯০ দশকে তানজানিয়া, নাইজেরিয়ার কয়েকজন মাদক চোরাচালানির সঙ্গে মার্কিন তরুণ এলিয়েডা বিমানবন্দরে গ্রেফতার হয়। মাদক চোরাচালানের অভিযোগে বাংলাদেশে তার যাবজ্জীবন কারাদ- হয়। বেশ কিছুদিন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। অতঃপর মার্কিন সরকার কূটনৈতিকভাবে নানা দেনদরবার করে তাকে দেশে ফেরত নিয়ে যান। নাগরিকের জন্য রাষ্ট্রের এটা সাংবিধানিক কর্তব্য। এলিয়েডাকে নিতে ঢাকায় এসেছিলেন সিনেটর বিল রিচার্ডসন। দেশ বিদেশের মিডিয়াগুলো সে খবর ফলাও করে প্রচার করেছে। সম্প্রতি জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে চার বাংলাদেশীকে দুই থেকে পাঁচ বছরের কারাদ- দিয়েছে সিঙ্গাপুরের একটি আদালত। অভিযুক্ত চার বাংলাদেশী হলেন মিজানুর রহমান (৩১), রুবল মিয়া (২৬), মো. জাবেদ কায়সার হাজি নুরুল ইসলাম সওদাগর (৩০) ও ইসমাইল হাওলাদার সোহেল (২৯)। তারা চারজনই চলতি বছরের ৩১ মে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। সিঙ্গাপুরের সংবাদমাধ্যম স্ট্রেইটস টাইম ও চ্যানেল নিউজ এশিয়া এ খবর প্রচার করেছে। পত্রিকা দুটি লিখেছে, এই চার বাংলাদেশীর সবাই শ্রমিক হিসেবে সিঙ্গাপুরে গিয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন। এর আগে সিঙ্গাপুরে বসে বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করার অভিযোগে ২৭ বাংলাদেশীকে আটক করা হয়। কয়েকজন বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠানো হয়। বাংলাদেশের যারা কাজ করতে প্রবাসে গিয়ে জঙ্গিদের খাতায় নাম লিখিয়েছেন তারা নিজেরা শুধু দানব হননি; আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমর্যাদা নষ্ট করছেন। পাশাপাশি বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের শ্রমবাজার নষ্ট করছেন। এগুলো নিয়ে ভাবনা কিছু নেই? আমেরিকা আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানি এলিয়েডাকে কূটনৈতিক উদ্যোগে দেশে ফিরে নিয়ে যেতে পারলে আমরা কেন ওই পন্থায় সিংগাপুর থেকে ওই জঙ্গিদের দেশে ফিরে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে পারছি না? এ ব্যর্থতার দায় কার? বাংলাদেশ থেকে কাজ করতে গিয়ে সিংগাপুরে জঙ্গি হয়ে ওঠার কারণে বিশ্ব শ্রমবাজারে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে কি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না? দেশটাতো আমাদের সবার। সিংগাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত কর্মকার্তারা ওই জঙ্গির দায়ে অভিযুক্ত ওই শ্রমিকদের দেশে ফেরত আনার ব্যাপারে কি ভূমিকা রেখেছে; তা জানানো দরকার। কারণ দেশটা আমাদের সবার। দেশের ভাবমর্যাদা রক্ষা করা প্রতিটি নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব। বাংলাদেশ নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ’৭১ এর মতোই দেশপ্রেমে সবার ঐকবদ্ধ হওয়া দরকার। ‘ও বন্ধু তুমি শুনতে কি পাও/ এ গান আমার, এ গান আমার’। বাংলা সিনেমার এই চটুল গানের শব্দ পাল্টিয়ে বলতে হয় ‘ও বন্ধু তুমি বুঝতে কি পাও/ এ দেশ আমার, এদেশ তোমার’।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Jamal ১৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:৪৪ পিএম says : 0
ora kokhono amader valo chay na
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন