শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিভীষিকাময় গণহত্যার রাত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০২০, ১২:০৯ এএম

আজ ২৫ মার্চ। বাঙালির ইতিহাসে এ দিবাগত রাত চিহ্নিত হয়ে আছে বর্বর গণহত্যার স্মারক ‘কালরাত’ হিসেবে। ১৯৭১ সালের এ রাতে নিরপরাধ নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালির ওপর ভারী অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পৈশাচিক হত্যার উল্লাসে। পৃথিবীর ইতিহাসের ভয়াবহতম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল বাংলাদেশে। এই রাতের বীভৎসতা এতটাই নির্মম যে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধ্বংসযজ্ঞের অতীত সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে এটি হয়ে উঠেছে বিশ্বের বিভীষিকাময় গণহত্যার রাত।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ নামে পাক বাহিনীর অতর্কিত সেই হামলায় মৃত্যুপুরী হয়ে ওঠে সমগ্র ঢাকা শহর। ঢাকা যখন মৃত্যুপুরী ইয়াহিয়া তখন বিমানে করে পাকিস্তান ফিরে যাচ্ছিলেন। মত্ত ছিলেন মদের বোতলে কারণ দিনটি ছিল তার প্রেসিডেন্ট হবার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি। পৃথিবীবাসী অবাক হয়ে দেখেছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কিভাবে একরাতে প্রায় অর্ধলক্ষ ঘুমন্ত বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ-এর প্রতিবেদক সাইমন ড্রিং-এর বর্ণনায় জানা যায়, ২৫ মার্চ ৭১-এ রাত দশটার দিকে শুরু হয় সেই পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ। যদিও পরিকল্পনা অনুযায়ী জিরো আওয়ার বা আক্রমণের নির্ধারিত সময় ছিল রাত একটা।

মধ্যরাতে ঢাকার পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশলাইন, নীলক্ষেত এলাকায় আক্রমণ চালায় হানাদাররা। ঢাকার ইপিআর সদর দপ্তর পিলখানার বাঙালি সৈনিকদের নিরস্ত্র করে এবং ইপিআর দফতরের ওয়্যারলেস ব্যবস্থা দখল করে নেয় ২২তম বেলুচ রেজিমেন্ট। অন্যদিকে ১৮ নং পাঞ্জাব, ৩২ নং পাঞ্জাব ও ২২ নং বেলুচ রেজিমেন্ট ট্যাংক ও মর্টার হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। হানাদার বাহিনীর মেশিনগানের গুলি, ট্যাংক-মর্টারের গোলা আর আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে ঘটে নৃশংসতম হত্যার সব থেকে বড় ঘটনাটি। হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।

ভয়াবহ এই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।অন্যদিকে ঐ রাতেই জহুরুল হক হলের প্রায় ২০০ ছাত্রকে গুলি করে হত্যাকরে পাকবাহিনী। এই জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ চলতে থাকে প্রতিটি ছাত্রাবাসে, বাদ যায়নি রোকেয়া হল। আর্চার কে ব্লাড এর বই ‘দ্য ক্রুয়েল বার্থ অব বাংলাদেশ’ থেকে জানা যায়, ছাত্রীনিবাস রোকেয়া হলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় এবং ছাত্রীরা আগুন থেকে বাঁচতে হলের বাইরে আসা শুরু করলে পাকবাহিনী তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। পাকবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সাথে আর্মি ইউনিট ৮৮ এর কথোপকথন থেকে জানা যায়, আনুমানিক ৩০০ জন ছাত্রীকে সে রাতে হত্যা করা হয়।

রাজারবাগে গ্যাসোলিন ছিটিয়ে আগুনে ভস্মীভূত করা হয় পুলিশ সদর দফতর। বাংলা মায়ের ১১শ পুলিশ সন্তানের রক্ত ঝরিয়েই তারা ক্ষান্ত হয়নি, সমগ্র ব্যারাক গুঁড়িয়ে দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল সবকিছু।
মধ্যরাতেই ঢাকা তখন লাশের শহর। দেশের অন্যান্য বড় শহরগুলোতেও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেই রয়েছে। পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল তাতে বলা হয়- ‘১৯৭১ সালের ১লা মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ রাত পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।

এই রাতে একদিকে যেমন রচিত হয়েছে বিশ্বের জঘন্যতম গণহত্যার ইতিহাস অন্যদিকে এই রাত প্রত্যক্ষ করেছে ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি রাষ্ট্রের জন্মমুহূর্তটি। চারিদিকে রক্ত আর রক্ত, শহীদদের সারি সারি লাশ। মধ্যরাতে পরিচালিত হয় পাকবাহিনীর স্পর্শকাতর অভিযান ‘অপারেশন বিগবার্ড’। গ্রেফতার করা হয় বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, বাঙালির শতবর্ষের দাসত্বমুক্তির অগ্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোন মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

এবার দেশ করোনাভাইরাস আক্রান্ত হবার কারণে গণহত্যা দিবস ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের সকল রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান স্থগিত করেছে সরকার। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও তাদের কর্মসূচি বাতিল করেছে।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন