রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জঙ্গিরা আরও হামলার পরিকল্পনা করছে

প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৫ পিএম, ১৩ জুলাই, ২০১৬

বিএনপি-জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সম্পৃক্ততার তথ্য রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ সংবাদদাতা : জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসীরা আরও হামলার পরিকল্পনা করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ কয়েকটি শ্রেণী-পেশার মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজ যখন বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা সারা বিশ্বব্যাপী উজ্জ্বল, যখন আমরা আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি, সেই সময় গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদাকে নষ্ট করা হচ্ছে। এর উদ্দেশ উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা, দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়া। তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সমগ্র দেশব্যাপী জনসচেতনতা গড়ে তুলে জনগণের শক্তি দিয়েই আমাদের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে মোকাবেলা করতে হবে।
সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সবাইকে আরো সচেতন ও সতর্ক হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এসব কর্মকা-ে বিএনপি-জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারগুলোর সম্পৃক্ততার তথ্য রয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৫ সালের শুরুতে টানা তিন মাস বিএনপি-জামায়াত যেভাবে সারা দেশে অগ্নিসংযোগ, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, জগণ্য সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়েছে এখনও তারা থেমে নেই। তারাই জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করছে। যুদ্ধাপরাধীদের পরিবার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এমনও তথ্য আছে, যেসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে তাদের পরিবার থেমে নেই। তারাও নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের অনেকে দেশে-বিদেশে থাকে, তাদের সম্পদের অভাব নেই। এদেরও আর্থিক সহায়তা, প্ররোচণা এবং পরিকল্পনা রয়েছে যে, হয়তো দেখা যাবে একই সাথে সাত-আটটি জেলায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আক্রমণ চালাতে পারে। সেখানে জনপ্রতিনিধি থাকতে পারে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা থাকতে পারে; এমনকি পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, সশস্ত্র বাহিনীসহ বিভিন্ন জায়গা এবং মন্ত্রী অথবা সাংবাদিক বা বিদেশি নাগরিক বিভিন্ন জায়গায় কিন্তু আক্রমণ চালাবার একটা পরিকল্পনা রয়েছে। দেশি-বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন রিপোর্টে আমরা এসব খবর পাচ্ছি, নিশ্চিত করেন শেখ হাসিনা। বিভিন্ন স্থাপনার পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের ওপরও হামলা হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে নিজ নিজ এলাকায় আরো সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তথ্য সংগ্রহ ও তথ্য আদান-প্রদান করতে হবে। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার গণভবন থেকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে তার উদ্যোগের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুরসহ ১৫টি জেলার সরকারী কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সমাজকর্মী, এনজিও কর্মী, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষকদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে এ আহ্বান জানান।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এবং তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন করতে হবে, বাংলাদেশকে এই সন্ত্রাসী কর্মকা- থেকে মুক্ত করতে হবে, মানুষের জীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলের শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমি মনে করিÑ আমাদের মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, অভিভাবকবৃন্দ, প্রশাসনে যারা কর্মরত, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা (যেমনÑ পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার-ভিডিপি), জনপ্রতিনিধিরা আছেন (ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা, মহানগর, জেলা এবং সংসদ সদস্যবৃন্দ) এবং সমাজসেবক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার যারা আছেন সকলকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এই জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আজকে তার সরকার বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেছে, মানুষের সামগ্রিক আয় বৃদ্ধি করেছে, খাদ্যে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। আজকে মানুষের মধ্যে আর সেই হাহাকার নাই। তিনি বলেন, আমরা দারিদ্র্য বিমোচন করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে গৃহায়ণ কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র জনগণকে ঘর-বাড়ি করে দিচ্ছি, স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোঁড়গোড়ায় পৌঁছে দিয়েছিÑ যতদূর সম্ভব আমরা দেশের সেবা করে যাচ্ছি, মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী প্রকৃত অর্থে ইসলাম ধর্মেরই ক্ষতি সাধন করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন মানুষের কল্যাণ হচ্ছে, মানুষের মাঝে একটা স্বস্তি ফিরে এসেছে, আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে ঠিক সেই সময় এই ঘটনাটা ঘটিয়ে আমাদের সমগ্র বিশ্বের সামনে যেমন আমাদেরকে হেয় করছে সেই সাথে আমি মনে করিÑ মুসলমান হয়ে মুসলমানকে হত্যা করে এই পবিত্র ইসলাম ধর্মটাকেই আজকে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। আমাদের এই পবিত্র ধর্মকে কেউ হেয় করবে এটা আমরা বরদাশত করব না।
ধর্মের নাম ব্যবহার করে জঙ্গিকা- হচ্ছে মত দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে ইসলাম ধর্মের মতো শান্তির ধর্মকে বিশ্বের দরবারে অবমাননা করছে। হেয় করছে। এর চেয়ে দুঃখের বিষয় কিছু হতে পারে না। মানুষ যেসময় এশার নামাজ পড়তে যায়, তারাবির নামাজ পড়তে যায়, ঈদের নামাজ পড়তে যায়, সেসময় তারা নিরীহ মানুষের ওপর হামলা চালায়। মানুষ হত্যা করে। তারা কখনও ইসলাম ধর্মের অনুসারী হতে পারে না। এরা মানুষের ঘৃণা ছাড়া কিছু পাবে না। জান্নাতেও যাবে না। এরা দোজখে যাবে’।
প্রধানমন্ত্রী পিতা-মাতা, অভিভাবকদের উদ্দেশে এই প্রশ্ন উত্থাপন করে নিজেদের সন্তানদের প্রতি যতœবান হবার আহ্বান জানিয়ে জঙ্গিবাদ দমনে সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক এলাকায় জঙ্গিবাদবিরোধী কমিটি, কোর কমিটি গঠন করে আড়ালে আবডালে ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গি, নিখোঁজ ব্যক্তি এবং গোপন তৎপরতাকে খুঁজে বের করতে সবাইকে তৎপর হতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলার কর্মকর্তাবৃন্দ নিজ নিজ এলাকায় জঙ্গিবাদ দমনে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করায় তিনি তাদের ধন্যবাদ জানান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দল-মত নির্বিশেষে সকলকে এ ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করারও আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার মাধ্যমে আমাদের জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একজোট হয়ে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় এবং উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করে যেতে হবে।
এ সময় তিনি ঈদের জামাতে হিন্দু ভলান্টিয়ারদের নিরাপত্তা প্রহরা দেবার দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে এটাকেই সকল ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে আবহমান বাংলার চিরায়ত রূপ এবং এই দেশ সাংবিধানিকভাবেই সকল ধর্মবলম্বীদের আবাসস্থল বলেও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়েও সকলকে সতর্ক করে দেন।
তিনি বলেন, হামলাকারীরা দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছে। এরা উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে। কেন এমনটি ঘটছে তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আওয়ামী লীগ জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবসময় যে ঘোষণা দিয়ে আসছে, তা এখনও বলতে চাই। এদেশে আমরা জঙ্গিবাদের স্থান হতে দেবো না। আমরা চাই বাংলাদেশ হবে শান্তিপূর্ণ দেশ।
দেশে যখন অর্থনৈতিক উন্নয়ন চলছে তখনই এমন হামলা মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃণমূল থেকে শুরু করে সর্বস্তরে উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে, বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে উঠেছে বিশ্বে, এদেশের ভাবমর্যাদা যখন বিশ্ব দরবারে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে, তখনই এ হামলা চালানো হয়েছে। এদের উদ্দেশ্য এই উন্নত বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা নষ্ট করা, এদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা। আলোর পথ থেকে দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়া। এ জঙ্গি-সন্ত্রাস মোকাবেলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। জঙ্গিবাদী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
আমাদের মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন-ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব-অভিভাবক-প্রশাসনিক কর্মকর্তা-জনপ্রতিনিধি-সমাজসেবক-ব্যবসায়ী-সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কাল (মঙ্গলবার) চারটি বিভাগের কর্মকর্তাসহ সবার সঙ্গে কথা বলেছি। তাদেরও বলেছি, সবাইকে বলছি আমরা জঙ্গিবাদবিরোধী কমিটি নিয়ে সকলে একযোগে কাজ করবো। কীভাবে জঙ্গি-সন্ত্রাসী কাজ করে তা খুঁজে বের করবো। অভিভাবকদের বলবো, নিজেদের সন্তানদের খোঁজ নেবেন, কীভাবে চলে, কোথায় যায়, কাদের সঙ্গে মেলামেশা করে সে বিষয়ে খোঁজ-খবর নেবেন। জঙ্গিবাদবিরোধী কমিটির সঙ্গে মিলে খোঁজ নেবেন সব দিকে। এলাকায় নতুন কেউ এলে কোথা থেকে এসেছে তা জানতে হবে। অবাঞ্চিত কাউকে দেখলে তার পরিচয় বের করবেন। দেশের মানুষের নির্বিঘœ জীবনযাপন ব্যাহত হবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। আমি আছি আপনাদের পাশে। সবাই মিলে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলবো’, যোগ করেন শেখ হাসিনা
পারস্পরিক বাণিজ্যে নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহারে বাংলাদেশকে রাশিয়ার প্রস্তাব ঃ
বাংলাদেশে নবনিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্যে পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্যে নিজেদের মুদ্রা ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ইগনোয়াতভ এ প্রস্তাব দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, জবাবে প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবটি দেখবেন বলে তাকে আশ্বস্ত করেন।
বৈঠকের পর প্রেস সচিব সাংবাদিকদের বলেন, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য জোরদারে বাণিজ্য বিষয়ে আন্তঃসরকার কমিশন শক্তিশালী করার ওপর জোর গুরুত্বারোপ করেন।
বিভিন্ন খাতে রাশিয়ার সঙ্গে অব্যাহত সম্পর্ক উন্নয়নে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হলে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ আরো বাড়বে। বর্তমানে এই বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার।
তিনি বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশ থেকে চামড়াজাত পণ্য, মানসম্পন্ন চাল এবং আলু আমদানি করতে পারে এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে রাশিয়ার সমর্থন এবং যুদ্ধ পরবর্তী পুনর্গঠনে বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা থেকে মাইন অপসারণে রাশিয়ানদের আত্মত্যাগ এবং যুদ্ধের পর দেশজুড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের কথা স্মরণ করেন।
রাষ্ট্রদূত গুলশানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশ যদি চায় তাহলে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সহায়তা দেয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
২০১৩ সালে শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে পেরে প্রেসিডেন্ট পুতিন খুশী এবং এর ফলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করে আলেকজান্ডার ইগনোয়াতভ বলেন, স্বাক্ষরের জন্য ঋণ চুক্তি প্রস্তুত করা হয়েছে।
তিনি বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মানের প্রশংসা করেন এবং বলেন, রাশিয়ান বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। রাষ্ট্রদূত তার দেশের উন্নতমানের গম আমদানির জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এবং মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
থাই রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
বাংলাদেশে নিযুক্ত থাই রাষ্ট্রদূত মিস পানপিমন সুওয়াননাপঙ্গি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, গুলশান হামলার পর ঢাকায় থাই দূতাবাস ভবন ঘিরে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন থাই রাষ্ট্রদূত।
এ ধরনের চ্যালেঞ্জিং অবস্থায় থাইল্যান্ড বাংলাদেশের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে সে বিষয় আমরা সবাই অবহিত।
তিনি বলেন, এ ধরনের জঘন্য ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরো দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে।
একটি থাই কোম্পানীর অধীনে ঢাকা এলিভেটট এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের অগ্রগতি তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত বলেন, থাই বিনিয়োগকারীরা এখনো বাংলাদেশকে বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় স্থান হিসেবে বিবেচনা করে।
প্রেস সচিব বলেন, থাই রাষ্ট্রদূত দুধের জন্য বাংলাদেশ থেকে ব্লাক বেঙ্গল গোট আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী তার এ আগ্রহের বিষয় প্রশংসা করেন এবং এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে জি-৭৭ গ্রুপের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় থাইল্যান্ডকে অভিনন্দন জানান। এই নির্বাচনে থাইল্যান্ডের অনুরোধে বাংলাদেশ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়।
সউদী আর্মড ফোর্সের ডেপুটি চিফের সাক্ষাৎ
বাংলাদেশ সফররত সউদী আর্মড ফোর্সের ডেপুটি চিফ অব দ্য জেনারেল স্টাফ এয়ার মার্শাল ফায়য়াদ বিন হামেদ-আল রুয়াইলি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এয়ার মার্শাল ফায়য়াদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে সউদী প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদের চিঠি হস্তান্তর করেন।
তিনি সম্প্রীতি মসজিদ-ই-নববীর কাছে হামলার ঘটনা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সউদী আরব আঘাত পেয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দৃঢ়অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা দুই পবিত্র মসজিদ সুরক্ষায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে কোন ধরনের সহযোগিতা প্রদানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সচিব সুরাইয়া বেগম, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে. জেনারেল মাহফুজুর রহমান এবং সউদী আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন