শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীমুখী কর্মজীবী মানুষের যাত্রা

প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বৈচিত্র্য এনেছে নৌপথে ক্যাটামেরন সার্ভিস ও আকাশ পথে তিনটি উড়ান সংস্থা
নাছিম উল আলম : এবারের ঈদ উল ফিতরের আগে ও পরে দক্ষিণাঞ্চল থেকে অপ্রচলিত যানবাহনেও বিপুলসংখ্যক যাত্রী রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করছে। সরকারি-বেসরকারি তিনটি এয়ারলাইন্স আকাশ পথে এবার বিপুলসংখ্যক যাত্রী পরিবহন করেছে। আগামী রোববার পর্যন্ত ৩টি এয়ারলাইন্সেরই সব টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে।
এছাড়াও বেসরকারি ক্যাটামেরন সার্ভিস প্রতিদিন তাদের দুটি যাত্রায় আরো বিপুল যাত্রী পারাপার করছে। অপ্রচলিত এ দুটি আকাশ ও নৌ সার্ভিসের কারণে এবার বরিশাল-ঢাকা নৌপথে বেসরকারি নৌযানের কেবিন ও সোফা টিকিটের চাহিদা অতীতের তুলনায় কিছুটা কম রয়েছে। ফলে সাধারণ যাত্রীদের হয়রানিও কিঞ্চিত কম রয়েছে। তবে এর পরেও গতকাল পর্যন্ত বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো নৌ টার্মিনালও লঞ্চঘাটে উপচেপড়া যাত্রী ভিড় লক্ষ করা গেছে। মাত্রাতিরিক্ত বোঝাই-এর কারণে বিআইডব্লিউটিসি’র নিয়মিত রকেট সার্ভিসের স্টিমার ‘পিএস লেপচা’ গতকাল বরিশাল বন্দরে ভিড়তেই পারেনি। ঈদের দিন ও পরের দিন যাত্রীবিহীন বিশেষ স্টিমার সার্ভিস পরিচালনা করে রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটি ১০ জুলাই থেকেই তাদের কথিত বিশেষ সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি রুট পারমিটধারী বেসরকারি ১৪টি নৌযানের ১২টিই ১০ জুলাই থেকে প্রতিদিন ডবল ট্রিপে বরিশাল-ঢাকা রুটে যাত্রী পরিবহন করছে। এর পরেও বরিশাল নৌ-টার্মিনাল ও বাস টার্মিনালে পা ফেলা দায় এখনো।
অনাদিকাল থেকে নদ-নদীবহুল দক্ষিণাঞ্চল নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপরই নির্ভরশীল ছিল। স্বাধীনতার পরে ১৯৭৩ সালেই সর্বপ্রথম বরিশাল-ঢাকা রুটে একটি বেসরকারি বাস সার্ভিস চালু হয়। সে সময় ৬টি ফেরি পার হয়ে ১২ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছত ওই বাস। ক্রমে সেতু নির্মাণের ফলে ফেরির সংখ্যা হ্রাসের সাথে বাসে সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে বরিশাল-ঢাকা রুটে শুধুমাত্র পদ্মার ফেরি পার হয়ে একাধিক কোম্পানির দেড় শতাধিক বাস দিন-রাতে ঢাকায় যাচ্ছে মাত্র ৬-৭ ঘণ্টায়। এছাড়াও সাম্প্রতিককালে বরিশাল থেকে মাওয়ার অপর পাড়ের কাওড়াকান্দী পর্যন্ত মাত্র আড়াই ঘণ্টায় বিআরটিসি’র বাতানুকুল বাস চলছে সকাল-সন্ধ্যা। সব মিলিয়ে শুধু সড়ক পথেই বরিশাল থেকে ঢাকায় যাচ্ছে অন্তত দশ হাজার মানুষ।
অপরদিকে বৃটিশ যুগ থেকে পাকিস্তান আমল হয়ে স্বাধীনতার পরেও বিআইডব্লিউটিসি বরিশাল-চাঁদপুর-ঢাকা নৌপথে রাত্রীকালীন মেইল স্টিমার ছাড়াও দিবাবালীন রকেট স্টিমার সার্ভিস পরিচালনা করত। স্বাধীনতার পরেও দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে সরকারি সংস্থাটির অবদান ছিল প্রায় ৯০ ভাগ। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে বেসরকারি খাতের অবদান ৯৮%। শুধুমাত্র বরিশাল-ঢাকা রুটেই এখন ১৪টি বেসরকারি বিলাসবহুল যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করছে। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীতে চলাচলকারী বেসরকারি নৌযানের সংখ্যা শতাধিক। এসব নৌযানে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করছে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চাঁদপুর হয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে।
কিন্তু এসব চিরাচরিত যোগাযোগ ব্যবস্থায় অতি সাম্প্রতিককালে পরিবর্তন আনছে নৌপথে ক্যাটামেরন সার্ভিস ও আকাশপথে সরকারি-বেসরকারি ৩টি উড়ান সংস্থা। মাত্র বছরখানেক আগেই বরিশাল-ঢাকা নৌপথে ‘ক্যাটামেরন সার্ভিস’ চালু করে দেশের সড়ক পথের শীর্ষ পরিবহন সংস্থা গ্রিন লাইন পরিবহন। কোম্পানিটি ৬শ’ আসনের বাতানুকুল দুটি দ্বিতল ক্যাটামেরন নৌযান চালু করেছে। বরিশাল ও ঢাকার উভয় প্রান্ত থেকে এসব নৌযানে প্রতিদিন সকাল ও দুপুরে ১২শ’ করে ২ হাজার ৪শ’ যাত্রী যাতায়াত করছে। লোয়ার ডেকে ৭শ’ টাকা এবং এবং আপার ডেকে ১ হাজার টাকায় ৬ ঘণ্টায় যাত্রীদের বরিশাল ও ঢাকায় পৌঁছে দিচ্ছে গ্রিন লাইন। চালু হবার পর থেকেই দিবাকালীন এ ক্যাটামেরন সার্ভিসটি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
অপরদিকে গত বছর এপ্রিলে সরকারি আকাশ পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বরিশাল-ঢাকা আকাশ পথে পুনরায় উড়ান চালু করার পরে ইতোমধ্যে ইউএস বাংলা ও নভো এয়ার বরিশালের আকাশে ডানা মেলেছে। ফলে ৩টি সরকারি-বেসরকারি এয়ারলাইন্স ভাড়া হ্রাসের প্রতিযোগিতাসহ যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধিতেও সচেষ্ট রয়েছে। বর্তমানে সপ্তাহে ১১টি ফ্লাইট চলছে বরিশাল ঢাকা আকাশ পথে। ঈদের আগে নভো এয়ার বরিশালের সাথে বিশেষ ফ্লাইটও পরিচালনা করেছে। বেসরকারি দুটি আকাশ পরিবহন সংস্থাই যাত্রীদের মহানগরী থেকে বরিশাল বিমানবন্দরে পৌঁছে দিচ্ছে বাতানুকুল গাড়িতে। তবে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সে দায়িত্ব পালন করতে পারেনি এখনো। এ ব্যাপারে খোদ বিমান চলাচল মন্ত্রীর নির্দেশনা থাকলেও বরিশাল সেক্টরের বিমান যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে সচেষ্ট হননি কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু বরিশাল সেক্টরে বিমান-এর ফ্লাইট থাকার কারণেই বেসরকারি অন্য দুটি উড়ান সংস্থা ভাড়া এখনো যাত্রীদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রেখেছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। বিগত ঈদ উল ফিতরের আগে থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল সেক্টরে প্রতিটি এয়ারলাইন্সই ফুল লোড নিয়ে চলাচল করছে। বিগত দিনে যে যাত্রীরা একটি কেবিন টিকিটের জন্য সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন নৌ-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের দফতরে ধর্না দিতেন, এখন তারা স্বাচ্ছন্দ্যেই আকাশ পথে বা দিবাকালীন ক্যাটামেরন সার্ভিসের নৌযানে ঢাকায় পাড়ি দিচ্ছেন। বিশেষ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে দিনের বেলা যারা নদ-নদী দেখতে পছন্দ করেন, তারা দিবাকালীন ক্যাটামেরন সার্ভিসের ভ্রমণকে যথেষ্ট উপভোগ করছেন। তবে ‘গ্রিন লাইনÑ২’ ও ‘গ্রিন লাইন-৩’ নামের বিলাসবহুল এ ক্যাটামেরন সার্ভিসের সেবার মান আরো বৃদ্ধির তাগিদ দিয়েছেন একাধিক যাত্রী। নৌযান দুটিতে যাত্রী সেবার জন্য অনেক কর্মী নিয়োজিত থাকলেও তাদের সেবায় অনেক সময়ই সন্তুষ্ট থাকতে পারেছন না যাত্রীরা। এছাড়া নৌযান দুটিতে যাত্রীদের জন্য যে খাবার পরিবশন করা হচ্ছে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে, একই দামে আরো ভালো ও বৈচিত্র্যময় খাবার পরিবশনেরও তাগিদ দিয়েছেন যাত্রীগণ।
তবে এসবকিছুর পরেও দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষ আকাশ ও নৌপথের বৈচিত্র্যময় ভ্রমণে যথেষ্ট খুশি। এর ফলে অন্তত বিভিন্ন বেসরকারি নৌযানের ওপর যাত্রীদের নির্ভরতা অনেকটাই হ্রাস পাওয়ায় খুশি সাধারণ যাত্রীগণও।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন