সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দ. চীন সাগর বিষয়ে রায়ে বিরোধ বাড়বে এমনকি যুদ্ধও হতে পারে

প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : দক্ষিণ চীন সাগর সম্পর্কে হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের গুরুত্বপূর্ণ রায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে দূরত্বকে আরো প্রকাশ্যে নিয়ে আসার পাশাপাশি দুই বিশ্বশক্তির মধ্যে ব্যবধান আরো গভীর করার হুমকি সৃষ্টি করেছে। এতে নিশ্চিতভাবে বিরোধ প্রবল হবে, এমনকি যুদ্ধও হতে পারে। খবর এপি।
হোয়াইট হাউসের পলিসি ডাইরেক্টর ড্যানিয়েল ক্রিটেনব্রিংক সোমবার বলেন, ফিলিপাইনের উত্থাপিত এ মামলার ব্যাপারে সোমবারের রায় দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের অভিন্ন লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মার্কিন কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, এ রায় কূটনীতিতে গতি সঞ্চার করবে। চীন অবশ্য এ রায় সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। উল্লেখ্য, রায়ে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ভূখ-গত দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রাষ্ট্রদূত কুই তিয়ানকাই ভূখ-গত বিরোধ সমাধানে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে আলোচনায় চীনের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তবে তিনি বলেন, এ রায় দক্ষিণ চীন সাগরে কূটনীতির সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করবে যেখানে ৬টি এশীয় দেশের দাবি রয়েছে।
তিনি বলেন, এতে নিশ্চিতভাবে বিরোধ প্রবল হবে, এমনকি যুদ্ধও হতে পারে। শেষ পর্যন্ত এটা আন্তর্জাতিক আইনের কর্তৃত্ব ও কার্যকারিতাকে খর্ব করবে।
ড্যানিয়েল ক্রিটেনব্রিংক ও কুই তিয়ানকাই উভয়েই ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে বক্তৃতাকালে তাদের এ মত প্রকাশ করেন। তাদের মন্তব্যের মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগর কীভাবে ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ককে বিনষ্ট করছে তারই প্রতিফলন দেখা গেছে।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিশ্ব সমস্যাসমূহের ব্যাপারে পরস্পর সহযোগিতা করতে ঐকমত্যে পৌঁছেন। কিন্তু একই সাথে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণের ঘটনায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। চীন কৃত্রিম দ্বীপগুলোতে সামরিক স্থাপনাও নির্মাণ করেছে যাকে যুক্তরাষ্ট্র ঐ এলাকার নিয়ন্ত্রণ লাভের চেষ্টা হিসেবে দেখছে।
এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ঐ অঞ্চলে সামরিক টহল বাড়িয়েছে যাকে চীন উস্কানি হিসেবে দেখছে।
ট্রাইব্যুনালের রায় চীন যদি উপেক্ষা করে তাহলে তাদের মধ্যে ব্যবধান গভীর হবে যদিও উভয় পক্ষই চায় যে তাদের সম্পর্কের উপর তার প্রভাব পড়বে না।
ক্রিটেনব্রিংক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কোনো কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা দ্বারা চালিত নয়। যুক্তরাষ্ট্র আইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে চায়। তিনি বলেন, যদি তা ভেঙে পড়ে এবং বিভিন্ন দেশ শক্তি অর্জন ও অধিকতর প্রাধান্য বিস্তার করতে চায়, ইতিহাস বলে যে তার ফল হয় বেদনাদায়ক।
কুই যুদ্ধের ঝুঁকি সম্পর্কে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তবে তিনি বলেন, যে আইনগত সালিশে চীন সম্মতি দেয়নি তা প্রত্যাখ্যান করে তার দেশ আন্তর্জাতিক আইনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছে যে সমুদ্র আইন বিষয়ক জাতিসংঘ চুক্তির আওতায় এ মামলায় তার আইনগত এখতিয়ার রয়েছে যাতে চীন ও ফিলিপাইন প্রতিপক্ষ।
আইএইচএস কান্ট্রি রিস্ক-এর সিনিয়র কনসালটেন্ট অমরজিত সিং বলেন, এ রায়ের পর দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের বিভিন্ন দাবি বৈধ নয় বলে আদালতের রায়কে শক্তিশালী করে তুলতে চীনের দাবিকৃত ঐ এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র টহল ও বিমান চালনার তথাকথিত স্বাধীনতা গ্রহণ করবে।
মার্কিন আইন প্রণেতারা এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন। সোমবার তিনি চীনের বাড়তি সমুদ্র এলাকার দাবিকে নিয়মিতভাবে চ্যালেঞ্জ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান।
ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেছে যে চীনের কিছু কৃত্রিম দ্বীপ হচ্ছে তথাকথিত ভাটা পরিবাহিত, তাই তা আঞ্চলিক সীমার ১২ নটিক্যাল মাইলের আওতায় পড়ে না। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলো আগের চেয়ে তার আরো নিকটে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
প্রশান্ত মহাসাগরে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মার্কিন নৌবাহিনীর এক অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মাইকেল ম্যাকডেভিট ফিলিপাইন উপকূল থেকে ১৩০ মাইল দূরে একটি কৃত্রিম দ্বীপ মিশচিফ রিফ প্রসঙ্গে বলেন, তাত্ত্বিকভাবে আমরা দ্বীপের ৫শ’ মিটারের মধ্যে চলাচল করতে পারি।
কুই বলেন, এ ধরনের কর্মকান্ড বাণিজ্যিক ও বেসামরিক যানগুলোর চলাচলের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি। তিনি তুলনামূলক ভাবে স্থিতিশীল এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে মার্কিন উপস্থিতি জোরদার করার ওবামার কৌশলগত গুরুত্ব আরোপকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যেমন ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ায় আমেরিকার হস্তক্ষেপের সাথে তুলনা করে বলেন, এর ফলে অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে।
দক্ষিণ চীন সাগরে আকাশ প্রতিরক্ষা জোন করবে চীন
নিরাপত্তা বিঘিœত হলে দক্ষিণ চীন সাগরের উপর একটি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছে চীন। দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিউ শেনমিন বলছেন, দক্ষিণ চীন সাগর এলাকার আকাশে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করার অধিকার চীনের আছে। আমাদের নিরাপত্তা বিঘিœত হলে আমরা সেখানে এরকম একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলবো।
তবে তিনি বলছেন, সেখানে চীন এরকম কোনো ব্যবস্থা এখনই গড়ে তুলবে কিনা, তা নির্ভর করে যে চীন কতটা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, দক্ষিণ চীন সাগরের শান্তি রক্ষায় অন্য দেশগুলো চীনের সঙ্গে কাজ করবে এবং এই অঞ্চলকে একটি যুদ্ধের কারণ হিসাবে তৈরি করবে না। তার এই ঘোষণা এমন সময়ে এলো যার একদিন আগেই এই এলাকায় চীনের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন হেগের স্থায়ী আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত।
আদালত বলেছে, ওই এলাকার সমুদ্রে ফিলিপাইনের সার্বভৌম অধিকার রয়েছে এবং চীন সেখানকার প্রবাল ও পরিবেশের ক্ষতি করছে। তবে আদালতের এই রায়কে গুরুত্ব দিচ্ছে না চীন। দেশটির প্রেসিডেন্ট শী জিনপিং বলেছেন, চীনের সার্বভৌমত্ব এবং সামুদ্রিক অধিকারের বিষয়ে এই রায় কোন প্রভাব ফেলবে না। সালিশি আদালতের এই রায় বাধ্যতামূলক হলেও সেটি কার্যকরে কাউকে বাধ্য করার ক্ষমতা অবশ্য আদালতের নেই।
২০১৩ সালে পূর্ণ চীন সাগরে এ রকম একটি ব্যবস্থা চালু করেছে চীন। ফলে ওই এলাকার আকাশ দিয়ে চলাচলকারী বিমানগুলোকে পরিচয়, গন্তব্য জানিয়ে এবং কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে চলাচল করতে হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন