শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবিরে করোনা আতঙ্ক

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০২০, ১২:০৩ এএম

নর্দমা-ভিজে গলি এবং বাঁধানো ক্যানভাস এবং বাঁশের ঝুপড়ি ঘিরে দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর করোনাভাইরাস মহামারীর এক ভয়াবহ দৃশ্য দেখার অপেক্ষা বিশেষজ্ঞদের। মিয়ানমার থেকে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা মুসলিমরা যে শিবিরে বাস করেন তা রোগের একটি উর্বরস্থল।
অন্যান্য দেশের জনসাধারণকে দুই মিটার (ছয় ফুট) দূরে রাখার কথা বলা হচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির কুতুপালংয়ের বেশিরভাগ পথের প্রস্থ এমনই। প্রতিদিন খাদ্য এবং জ্বালানীর সন্ধানে লোকজনকে এ পথে চলতে হয়। যে মাস্ক বিশ্বের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিত্যপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে তা এখানে খুব কমই দেখা যায়। স্যানিটাইজারের নামও শুনা যায় না।
প্রতিটি ঝুপড়ি মাত্র ১০ বর্গমিটার (১২ বর্গ গজ) এবং এগুলোতে গড়ে ১২ জন বসবাস করে গাদাগাদি করে।
একজন সহায়তাকর্মী বলেন, ‘আপনি আপনার পাশের বাড়ির প্রতিবেশীর নাক ডাকার শব্দ শুনতে পাচ্ছেন’?
ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার-এর বাংলাদেশ প্রধান পল ব্রোকম্যান বলেন, শিবিরগুলিতে সামাজিক দূরত্ব ‘কার্যত অসম্ভব’।
তিনি এএফপিকে বলেন, ‘চ্যালেঞ্জের মাত্রা অপরিসীম। রোহিঙ্গাদের মতো অরক্ষিত জনগোষ্ঠী সম্ভবত কোভিড-১৯ দ্বারা অপ্রয়োজনীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে’।
বাংলাদেশ কেবল মুষ্টিমেয় করোনভাইরাসের মৃত্যুর খবর পেয়েছে এবং ৫০ জনেরও কম সংক্রমণ ঘটেছে। জনগণ ও বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে, আক্রান্তের সংখ্যা আরও অনেক।
রোহিঙ্গারা এই রোগ সম্পর্কে খুব কমই জানেন, কারণ সরকার শরণার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগে গত বছরের শেষের দিক থেকে বেশিরভাগ ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, ভয় আরও বেড়ে গেছে, যেহেতু গত সপ্তাহে ভারত থেকে ফিরে আসা চারজনের একটি রোহিঙ্গা পরিবারকে জাতিসংঘের ট্রানজিট সেন্টারে পরীক্ষার জন্য পৃথক করা হয়েছিল।
কাছের কক্সবাজারের একজন বাংলাদেশি মহিলা নতুন করোনাভাইরাসে পজেটিভ পাওয়া গেছে। রোহিঙ্গা স¤প্রদায়ের নেতা মোহাম্মদ জুবায়ের বলেছেন, ‘আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। ভাইরাসটি এখানে পৌঁছে গেলে তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়বে’।
‘প্রচুর সহায়তা এবং স্থানীয় কমিউনিটি কর্মীরা প্রতিদিন ক্যাম্পগুলিতে প্রবেশ করেন। কিছু প্রবাসী রোহিঙ্গা সা¤প্রতিক দিনগুলিতে ফিরে এসেছেন। তারা ভাইরাসটি বহন করতে পারে’- বলছিলেন তিনি।
শিবিরের বাসিন্দা লোকমান হাকিম (৫০) শিবিরগুলিতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না থাকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। হাকিম বলেন, ‘আমরা সাবান পেয়েছি এবং আমাদের হাত ধোয়াতে বলা হয়েছে এবং এ পর্যন্তই;।
স¤প্রদায়ের আরেক নেতা সায়েদ উল্লাহ বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার কারণে ভাইরাস সম্পর্কে ‘অনেক বেশি অজ্ঞতা ও ভুল তথ্য’ রয়েছে। ‘আমাদের বেশিরভাগ মানুষই জানেন না যে, এই রোগটি কী। লোকেরা কেবল শুনেছে এটি প্রচুর লোককে হত্যা করেছে। কী ঘটছে তা জানার জন্য আমাদের কাছে ইন্টারনেট নেই’। তিনি আরও বলেন, আমরা আল্লাহর রহমতে ভরসা করছি।
জাতিসংঘ, যে সংস্থা স্বেচ্ছাসেবক এবং সহায়তা কর্মীদের ক্যাম্পগুলিতে হাত-ধোয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রচার চালাতে ব্যবহার করেছে, তারা সাধারণ ইন্টারনেট সেবা পুনরুদ্ধার করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে।
‘জীবন রক্ষাকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাগুলো দ্রুত এবং কার্যকর যোগাযোগের প্রয়োজন’, শিবিরগুলোতে জাতিসংঘের মুখপাত্র লুই ডোনভান বলেন। তিনি এএফপিকে বলেছেন, ‘এই পরিস্থিতি সময়োপযোগী ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার জন্য যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ শরণার্থী কমিশনার অফিস কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট পুনরুদ্ধার করবে কিনা তা বলতে অস্বীকার করেছে। কর্তৃপক্ষ ৩৪ শরণার্থী শিবিরের বাইরের প্রবেশ বিচ্ছিন্নে মনোনিবেশ করেছে।
কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তা বিমল চাকমা বলেন, ‘আমরা শিবিরগুলিতে সহায়তা কার্যক্রম হ্রাস করেছি। কেবলমাত্র খাদ্য, স্বাস্থ্য এবং আইন সম্পর্কিত কাজ চলবে’। করোনভাইরাস দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোতে বসবাসরত রোহিঙ্গা বিদেশ থেকে ফোন কলের মাধ্যমে শিবিরগুলোতে লোকদের সতর্ক করার চেষ্টা করছেন। অনেক প্রবাসী রোহিঙ্গা না জানিয়েই বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করিয়েই শিবিরে ফিরে এসেছেন।
অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক রোহিঙ্গা কর্মী মজিব উল্লাহ মিয়ানমারের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যদি তারা ভাইরাস নিয়ে যায় এবং জনতার সাথে মিশে যায় তবে এটি আরও একটি গণহত্যার ঘটনা হবে, যা ২০১৭ সালে ঘটেছিল। যে ঘটনাকে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা গণহত্যা বলে অভিহিত করেছেন’। সূত্র : এএফপি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন