শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মসজিদে জামাত চলবে, তবে সংক্ষিপ্ত: ইফা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০২০, ৬:৫৪ পিএম

দেশের সব মসজিদে নিয়মিত আজান, ইকামত, জামাত ও জুমার নামাজ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। তবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে পুরো মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং কার্পেট-কাপড় সরিয়ে ফেলার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে জামাত সংক্ষিপ্ত করার কথাও বলেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)। দেশের খ্যাতনামা আলেমদের সঙ্গে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইফা। সোমবার (৩০ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে গত ২৪ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশন দেশের খ্যাতনামা আলেমদের সঙ্গে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিরাজমান পরিস্থিতিতে জনগণের সুরক্ষার বিষয়ে পরামর্শ প্রদানের লক্ষ্যে বৈঠক করে। সেই বৈঠকেও আলেমরা মসজিদগুলোতে জুমা ও জামাতে মুসল্লিদের সংখ্যা সীমিত রাখার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে বলা হয়, মসজিদ বন্ধ থাকবে না, তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে মসজিদে গমন করবেন না। আলেমদের পরামর্শ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রকাশ করে ইফা। যদিও সে পরামর্শের কোনও প্রতিফলন দেখা যায়নি দেশে মসজিদগুলোতে। বেশিরভাগ মসজিদে জুমার নামাজে পরিপূর্ণ মুসল্লি সমাগম দেখা গেছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে আবারও রবিবার (২৯ মার্চ) আলেমদের নিয়ে বৈঠক করে ইফা। বৈঠকে আরব দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসল্লিদের মসজিদে নামাজ বন্ধের বিষয়গুলো সামনে রেখে বাংলাদেশেও পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে মতামত চায় ইফা। কোনও কোনও আলেম পরামর্শ দেন, মসজিদ খোলা থাকবে। শুধু ইমাম-মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা জামাতে নামাজ আদায় করবেন, মুসল্লিরা মসজিদে আসবেন না। তবে বেশিরভাগ আলেমের বিরোধিতার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন। বরং পরিস্থিতির অবনতি ঘটলেও মসজিদে মুসল্লিদের অংশগ্রহণে জামাতে নামাজ বন্ধ করার পক্ষে নন অধিকাংশ আলেম।

ইফার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মসজিদে নিয়মিত আজান, ইকামত, জামাত ও জুমার নামাজ অব্যাহত থাকবে। তবে জুমা ও জামাতে মুসল্লিদের অংশগ্রহণ সীমিত থাকবে। ৮ ধরনের মুসল্লিদের মসজিদে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইফা। সেগুলো হলো:

১. যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।

২. যাদের সর্দি, জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট আছে।
৩. যারা আক্রান্ত দেশ ও অঞ্চল থেকে এসেছেন।
৪. যারা উক্তরূপ মানুষের সংস্পর্শে গেছেন।
৫. যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।
৬. বয়োবৃদ্ধ, দুর্বল, মহিলা ও শিশু।
৭. যারা অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত।
৮. যারা মসজিদে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করেন তাদেরও মসজিদে না আসার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ইফা আরও বলেছে, যারা জুমা ও জামাতে যাবেন তারা যাবতীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা অবলম্বন করবেন। ওজু করে নিজ নিজ ঘরে সুন্নত ও নফল আদায় করবেন। শুধু জামাতের সময় মসজিদে যাবেন এবং ফরজ নামাজ শেষে দ্রুত ঘরে চলে আসবেন। সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, জীবাণুনাশক দ্বারা মসজিদ ও ঘরের মেঝে পরিষ্কার রাখাসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সব নির্দেশনা মেনে চলবেন।

মসজিদের খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মসজিদ কমিটিকেও করণীয় সম্পর্কে ৮টি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরামর্শগুলো হলো:
১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদকে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং কার্পেট-কাপড় সরিয়ে ফেলা।
২. জামাত সংক্ষিপ্ত করা।
৩. জুমার বয়ান, খুতবা ও দোয়া সংক্ষিপ্ত করা।
৪. বর্তমান সংকটকালে দরসে হাদিস, তাফসির ও তালিম স্থগিত রাখা।
৫. ওজুখানায় অবশ্যই সাবান ও পর্যাপ্ত টিস্যু রাখা।
৬. বর্তমান পরিস্থিতিতে জামাতের কাতারে ফাঁক ফাঁক হয়ে দাঁড়ানো।
৭. ইশরাক, তিলাওয়াত, জিকির ও অন্যান্য আমল ঘরে করা।
৮. ঢাকাসহ দেশের কোনও মসজিদে যদি কোনও বিদেশি অবস্থান করেন তাদের বিষয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে সত্ত্বর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
সভায় হেফাজতে ইসলামের আমির ও আল জামিয়াতুল দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আহমদ শফী, চট্টগ্রামের আল জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুফতি আব্দুল হালীম বোখারী, গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার নাযেমে তালিমাত মুফতি নুরুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইউনুছিয়া মুহতামিম মুফতি মোবারকুল্লাহসহ অনেক আলেমের পরামর্শ নেওয়া হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ। প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নূরুল ইসলাম। সভায় উপস্থিত ছিলেন, জামিয়াতুল উলুমের মুহতামিম মুফতি মাহমুদুল হাসান, শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম ফরীদ উদ্দিন মাসঊদ, জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুমের মুহতামিম মুফতি দিলাওয়ার হোসাইন, শায়খ যাকারিয়া (র.), ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি মীযানুর রহমান সাঈদ, জামেয়া রহমানিয়ার মুহতামিম মাওলানা মাহফুজুল হক, চরমোনাই কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মো. মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, জাতীয় মুফতি বোর্ডের সদস্য সচিব মুফতি মো. নূরুল আমীন, ঢাকা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ড. কাফীলুদ্দীন সরকার সালেহী, মদীনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক আল আযহারী, ইদারাতুল উলুম আফতাবনগর মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি মোহাম্মদ আলী, দারুল উলুম রামপুরার মুহতামিম মুফতি ইয়াহ্ইয়া মাহমুদ, বায়তুল উলুম ঢালকানগর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা জাফর আহমাদ, ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রশীদ, নারায়ণগঞ্জের ভূমিপল্লী আবাসন জামে মসজিদের খতিব শায়খ আহমাদুল্লাহ, তেজগাঁও জামেয়া ইসলামিয়ার শায়খুল হাদিস ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, মুহাদ্দিস মুফতি ওয়ালিয়ুর রহমান খান ও মুফাসসির ড. মাওলানা আবু ছালেহ পাটোয়ারী, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী, পেশ ইমাম মাওলানা মুহিউদ্দীন কাসেম, চকবাজার শাহী মসজিদের খতিব মাওলানা মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন, বড় কাটরা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি সাইফুল ইসলাম মাদানী প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন