শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিদেশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহে মাঠে ইউজিসি

প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন : বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিদেশী শিক্ষক ও অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের তালিকা সংগ্রহে মাঠে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এসব শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য, পাসপোর্ট, ভিসা, ওয়ার্কপারমিটসহ আরও কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হবে। শিক্ষকদের ক্ষেত্রে তার ওয়ার্কপারমিট আছে কী সেটিকে প্রাধান্য দেয়া হবে। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কোন দেশ এবং পড়ালেখার জন্য কেন বাংলাদেশকে পছন্দ করেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করবে ইউজিসি কর্মকর্তারা।  
এ ব্যাপারে ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকশ’ বিদেশী শিক্ষক কর্মরত আছেন। এছাড়াও হাজার দু’য়েক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে বলে আমি শুনেছি। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। এদের ব্যাপারে নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ও সংখ্যা জানা দরকার। তারা কোথায় থাকে, কাদের সঙ্গে মিশে, এসব বিষয় জানতে ইউজিসির একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের একটি নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস পড়ান একজন বিদেশী শিক্ষক। এটা কোনভাবে মিনে নেয়া যায় না। এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন দিবে গঠিত টিম।
ইউজিসি গত বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৬৪৩ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। ওই সময়ের ৭৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৮টি বিদেশী শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত ছিল। এরমধ্যে সচেয়েয়ে বেশি চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। সেখানে ১ হাজার ২৬৫ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন ছিল। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চর্তুথ এবং ৫ম স্থানে ছিল যথাক্রমে আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় (আইআইইউসি) চট্টগ্রাম ৭৯ জন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশানাল ৫২ জন, নর্থ সাউথে ৪৬ জন এবং আমেরিকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ৩২ জন। এছাড়া ব্র্যাকে ২১ জন, ইস্ট ওয়েস্ট ১৫ জন, আহসানউল্লাহ ৩ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। মঞ্জুরি কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের কিছু তথ্য আমাদের কাছে থাকলেও শিক্ষকদের তথ্য আমাদের কাছে নেই। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ তথ্য আমাদের দেয়নি।
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান বলেন, এই তথ্য সংগ্রহ করতেই একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা শিক্ষকদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করবে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) তারা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে শুরু করেছে। পর্যায়ক্রমে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে তথ্য সংগ্রহ শুরু করবে।
ইউজিসির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশে ইতিহাস পড়ান বিদেশী দুইজন শিক্ষক। এদের কারও ওয়ার্কপারমিট নেই। শুধু তাই নয়, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধশতাধিক বিদেশী শিক্ষার্থীর মধ্যে পাকিস্তানে ১০ জন, মধ্যপ্রাচ্যের দুটি দেশের ১৩ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। এই শিক্ষার্থীরা কাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, কোথায় থাকে, তাদের মুভমেন্ট কী এসব বিষয় জানা জরুরি। তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এদের নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করছে, ইউজিসি তাদের তথ্য সংগ্রহ করে সরকারে দিবে।
ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, গতকাল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনকালে তাদের কতজন শিক্ষক, শিক্ষার্থী বিদেশী তার তথ্য চাওয়া হয়েছে। এই তথ্য পরে তারা দিবে বলে জানিয়েছেন। কিছুদিন আগে রাজধানী ছিনতাই করার সময় ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন নাইজেরিয়ান ছাত্রকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় বলে জানা গেছে।
 এ ব্যাপারে ইউজিসির উপ-পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) জেসমিন পারভীন বলেন, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা আছে, তাদের বিদেশী শিক্ষার্থীদের তথ্য, অবস্থান পার্শ্ববর্তী থানাকে অবহিত করার কথা বলা আছে। কিন্তু বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় এই নিদের্শনা মানছে না। এখন তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যারা নির্দেশনা মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগেই শুধু ১০ জন বিদেশী শিক্ষক কর্মরত আছে বলে জানতে পেরেছে ইউজিসি। কিন্তু এদের কারও ওয়ার্কপারমিট নেই। এরকম কতজন শিক্ষক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত আছে তাদের খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টিমের একজন সদস্য বলেন, গতকাল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় সরেজমিনে গিয়ে তারা একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলোচন করেছেন। যে সকল শিক্ষার্থীরা জঙ্গি কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের সহপাঠিদের সঙ্গেও কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সন্দেহভাজন প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীর তথ্য এখন তদন্ত কমিটির হাতে। এদের প্রত্যেকেই অনিয়মিত বলে জানা গেছে। বর্তমানে দায়িত্বরত পার্টটাইম-ফুলটাইম শিক্ষকদের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন। অন্যদিকে, সন্দেহের আওতায় থাকায় সকল বিদেশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেবার আশ্বাস দিয়েছে নর্থ সাউথ কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্দেহজনক স্থান লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন স্থান ও একাধিক অনুষদ তারা পরিদর্শন করেছেন। তবে সেখান থেকে জঙ্গি আলামত পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।





 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন