শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলার পরামর্শ

বিশিষ্ট নাগরিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার মতবিনিময়

প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:২১ এএম, ১৫ জুলাই, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ।  দেশের চলমান জঙ্গি তৎপরতাসহ ঘটনাবলীর সাথে সরকারের ইন্দন রয়েছে বলে তারা মনে করেন।
বিএনপির তরফ থেকে যে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়া হয়েছে তার প্রতি সমর্থন দিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ‘জাতীয় ঐক্যে’র আগে একাত্তর সালে দলটির ‘স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকা-ের জন্য জামায়াতকে দলীয়ভাবে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার’ শর্তারোপমূলক পরামর্শের কথা খালেদা জিয়াকে বলেছেন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের একটি অংশ।
গতকাল রাতে খালেদা জিয়ার আমন্ত্রণের পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের এক বৈঠকে এই শর্তের কথা উঠেছে সুপ্রিম কোর্টের প্রবীন আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ও গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মুখ থেকে।
 
দুই ঘন্টা স্থায়ী বৈঠক শেষে রফিক-উল-হককে সাংবাদিকরা জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, উনাকে (খালেদা জিয়া) বলেছি জামায়াত ছাড়তে। এর বেশি কিছু আমি বলব না।  
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, জামায়াতের বিষয়টা বৈঠকে উঠেছে। আমি বলেছি- জামায়াতকে তাদের পিতৃপুরুষেরা যে অন্যায় করেছে, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, তার জন্য তাদেরকে আবার ক্ষমা চাইতে হবে। যদিও গোলাম আজম সাহেব ক্ষমা চেয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে তারা (জামায়াতে ইসলামী) দলীয়ভাবে চায়নি। বর্তমানের যারা আছে জামায়াতে, আমার পরামর্শ হলো-তাদের দলীয়ভাবে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তারা যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আর্দশ বিশ্বাস করে সেটা পুনরায় উল্লেখ করবে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কবর জিয়ারত করবে- এই কথা ঘোষণা করে ১৯৯১ সালে যেভাবে আন্দোলন হয়েছিলো, সেভাবে আন্দোলন হবে। পাশাপাশি ত্রি-দলীয় যে আন্দোলন হয়েছিলো প্রয়োজনে সেটাও হতে পারে।  
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের মনোভাব কি প্রশ্ন করা হলে জাফরুল্লাহ বলেন, আমরা মনে হয়েছে উনি (খালেদা জিয়া) ও মনে করেন এটি (জামায়াতে ইসলামী ক্ষমা চাওয়া) যুক্তিসংঘত।  
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে রাত সাড়ে ৮টা থেকে দুই ঘণ্টার এই বৈঠকে গুলশানের ক্যাফেতে ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনা এবং পরিবর্তী করণীয় বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন পেশাজীবী নেতাদের মতামত ও পরামর্শ শুনেন।
 
খালেদা জিয়া বৈঠকের শেষে দিকে সমাপনী বক্তব্যে উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের সৃষ্টির জন্য সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসার কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, বিএনপি উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। আমরা সব সময়ে এর বিরুদ্ধে কাজ করেছি। বর্তমানে যে ঘটনা ঘটে চলেছে তা দেশের জন্য ভয়াবহ ও আতঙ্কজনক। আমি উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের যে আহ্বান জানিয়েছি, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐক্যের এই প্রচেষ্টা আমার অব্যাহত থাকবে। আমি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ বিষয় বসব। এ ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা চাই।
বৈঠকে অংশ নেয়া অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বৈঠকে গুলশানের ক্যাফেতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় দলমত নির্বিশেষে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা আমাকে পরামর্শ দিয়েছি।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, জঙ্গির নাম করে জনগণকে ভাওতাবাজী করা চলবে না। ১২ ঘন্টা চুপ করে বসে থেকে এতো লোকের মৃত্যু এবং একজনকে জীবিত ধরে নাই। এই ঘটনার অবশ্যই বিচার বিভাগীয় তদন্ত হতে হবে।
র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের ঘটনার দিন ‘এতো লাফালাফি’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেন জাফরুল্লাহ।  কেনো উনি ভেতরে ঢুকে সন্ত্রাসীদের ধরেন নাই।   
গত ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে অস্ত্রধারীদের হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২২ জন নিহতের পর সপ্তাহ না হতেই ঈদের সকালে শোলাকিয়ায় পুলিশের ওপর হামলা হয়। ঈদ জামাতের আগে ওই হামলায় দুই পুলিশ এবং পরে পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের গোলাগুলির মধ্যে এক গৃহবধূ নিহত হন।
বৈঠকে ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক, অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছাড়া আরো ছিলেন, অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক সদরুল আমিন, অধ্যাপিকা জেড এ তাহমিদা বেগম, প্রকৌশলী আ ন হ আখতার হোসেন, আনোয়ারুন্নবী মজুমদার বাবলা, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, চিকিৎসক অধ্যাপক এ কে এম আজিজুল হক, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া।
দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ, দৈনিক নয়াদিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন,  দৈনিক ইনকিলাবের সহযোগী সম্পাদক মোবায়দুর রহমান, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শওকত মাহমুদ, মহাসচিব এম আব্দুল্লাহ, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, কলামিস্ট  মাহফুজউল্লাহ প্রমুখ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নাল আবেদীন, রুহুল আলম চৌধুরী, এএসএম আবদুল হালিম, সুজাউদ্দিন, আবদুল কাইয়ুম, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, এসএম ফজলুল হক প্রমুখ ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন