শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

উল্টো রথযাত্রা অনুষ্ঠিত : যানজটে আচল ঢাকা

প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : উল্টো রথ টানার মধ্য দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় পর্ব শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব। গত ৬ জুলাই রথযাত্রা উৎসব শুরু হয়। এ কারণে গতকাল রাজধানীজুড়েই ছিল তীব্র যানজট। এতে জনজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। দুপুরের পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ অফিস-আদালতগামী মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছে যানজটের কবলে। বিশেষ করে বিকালে ঘরে ফেরা মানুষেরা যানজটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস জগন্নাথ দেব হলেন জগতের নাথ বা অধীশ্বর। জগত হচ্ছে বিশ্ব আর নাথ হচ্ছেন ইশ্বর। তাই জগন্নাথ হচ্ছে জগতের ইশ্বর। তার অনুগ্রহ পেলে মানুষের মুক্তিলাভ হয়। জীবরূপে তাকে আর জন্ম নিতে হয় না। এ বিশ্বাস থেকেই রথের ওপর জগন্নাথ দেবের প্রতিমা রেখে রথযাত্রা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
উল্টো রথযাত্রা উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন এবং মন্দির নানা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সকালে বিভিন্ন মাঙ্গলিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানমালা। এর মধ্যে ছিল হরিনাম সংকীর্তন, বিশ্ব শান্তিও মঙ্গল কামানায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, পদাবলী কীর্তন, আরতি কীর্তন, ভাগবত কথা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শ্রীমদ্ভাগবত গীতা পাঠ। ইসকনসহ রাজধানীর রাম-সীতা মন্দির এবং তাঁতীবাজার জগন্নাথ মন্দিরে এ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
রাজধানী ঢাকায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) উল্টো রথযাত্রা উপলক্ষে বিকালে বিশাল শোভাযাত্রা বের করে। স্বামীবাগের ইসকন মন্দিরে অনুষ্ঠিত শোভাযাত্রা পূর্ব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। শ্রীপাদ চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারীর সভাপতিত্বে এত অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, ইসকন বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি কৃষ্ণ কীর্তন দাস ব্রহ্মচারী, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের সেবায়েত প্রদীপ ভট্টাচার্য, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানা।
কামরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশ থেকে চিরতরে সাম্প্রদায়িক শক্তি নির্মূল করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির মূর্তপ্রতীক হিসাবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, তাঁর কাছে কোন সাম্প্রদায়িক শক্তির স্থান হবে না। দেশ থেকে চিরতরে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা হবে বলে জানান তিনি।
উল্টো রথযাত্রা শেষে আশ্রমে ভক্তবৃন্দের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় নানা আনুষ্ঠানিকতা।
এদিকে গতকালের উল্টো রথযাত্রার কারণে রাজধানীজুড়েই ছিল তীব্র যানজট। এতে জনজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। দুপুরের পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীসহ অফিস আদালতগামী মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছে যানজটের কবলে। বিশেষ করে বিকালে ঘরে ফেরা মানুষেরা যানজটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ে। যানজটের কারণে সময়মত পাওয়া যায়নি গাড়ি। মাঝে মধ্যে দু’য়েকটি পাওয়া গেলেও দিতে হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া। মাত্র দেড়-দুই কিলোমিটার পথ যেতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
গতকাল দুপুর পৌনে ১টা। মতিঝিলের বেসরকারি একটি অফিসের কর্মকর্তা আনিসুর রহমান ও আমজাদ হোসেন অফিসের কাজে রাজধানীর বনানীতে যেতে হয়েছিল। সেখান থেকে কাজ শেষে আবার মতিঝিলে ফিরে আসেন। প্রায় ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় অপেক্ষা করে তারা বাস পেলেন না। উপায় না দেখে হেঁটেই রওনা দিলেন। হাঁটতে হাঁটতে মহাখালীতে পৌঁছলেন। পরে মহাখালী থেকে বাসে উঠলেন দু’জনেই। কিন্তু বাস কচ্ছফ গতিতে চলছে, দু’এক মিনিট যাওয়ার পর আবার থমকে দাঁড়ায়। মহাখালী থেকে বিজয় সরণি পার হতে প্রায় সোয়া ঘণ্টা সময় পেরিয়ে গেল। রাস্তার দুই পাশে থমকে আছে শত শত বাস-প্রাইভেটকার। যেদিকে চোখ যায়, শুধু গাড়ি আর গাড়ি। এরপর রাগে-ক্ষোভে বিরক্ত হয়ে নেমে যান দু’জনেই। আবার হাঁটা শুরু। হেঁটে ফার্মগেট পর্যন্ত গেলেন দু’জন।
গতকাল বিকালে টেলিফোনে কথা হয় আরও একজন পথচারী শহিদুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, যানজটির কথা ভেবে হেঁটেই মতিঝিল অফিস থেকে বাসায় যাই। ফার্মগেট হয়ে কারওয়ান বাজার, এফডিসি, মগবাজার, মিন্টু রোড হয়ে সোজা তেজতুরীপাড়া পৌঁছতে আমার সময় লাগে দেড় ঘণ্টার মতো। কিন্তু তার সহকর্মী শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় তিনি মতিঝিল থেকে বাসে যান। দীর্ঘ যানজট ঠেলে শহিদুলের চেয়ে প্রায় এক ঘণ্টা পরে বাসায় পোঁছলেন তার সহকর্মী।
রাজধানীতে যানজটের চিত্র নতুন নয়। মাঝেমধ্যে ট্রাফিক জ্যাম এমন অবস্থায় দাঁড়ায় যে, রাস্তায় দীর্ঘ সময় রোগীবাহী এ্যাম্বুলেন্স করুণ সুরে সাইরেন বাজালেও কিছুই করার থাকে না কারও। আগে এ্যাম্বুলেন্সের শব্দ শুনে মানবিক কারণে জায়গা করে দিতেন পথচারী, বাসের ড্রাইভার বা ট্রাফিক পুলিশ। এখন মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর রোগীর জন্য কারও কারও মায়া হলেও কিছুই করার থাকে না। কারণ যানজটের ধরনটা এখন এমন হয়েছে যে, ইচ্ছা করলে ওই এ্যাম্বুলেন্সটিকে বের করে দেয়ার সুযোগ থাকে না। যানজট নামক এই মহাঅশান্তিতে পড়ে তাই অনেকের মুখে শোনা যায় ‘এই নগর বসবাসের অনুপযোগী। এখানে আর থাকা যায় না।’
প্রায় দুই কোটি মানুষের নগরী এই ঢাকাতে যানজট প্রতিদিনের চিরচেনা ঘটনা। যানজট নিরসনে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে অতীতে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকছেন মানুষ। ভোগান্তির যেন শেষ নেই। হাঁফিয়ে উঠছে নগারবাসী। নারী, শিশু ও বয়স্কদের ভোগান্তিই সবচেয়ে বেশি। নির্ধারিত সময়ে অফিসে পৌঁছতে পারছেন না কর্মজীবীরা। শিক্ষার্থীরা হিমশিম খাচ্ছেন ক্লাসে পৌঁছতে। মানুষের এ দুর্ভোগ যেন সমাধানের নয়।
ধামরাইয়ে উল্টো রথযাত্রার সমাপ্তি : মেলা চলবে আরো ২০ দিন
ধামরাই (ঢাকা) উপজেলা সংবাদদাতা : আইন-শৃঙ্খলার রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যদিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব উপদেশ খ্যাত ও দেশের সর্ববৃহৎ ঢাকার ধামরাইয়ের শ্রী শ্রী যশোমাধবের উল্টো রথযাত্রা গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সমাপ্তি হয়েছে। গত ৬ জুলাই এ রথযাত্রার উদ্বোধন করা হয়।
মাধবমন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব:) জীবন কানাই দাসের সভাপতিত্বে উল্টো রথযাত্রায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত স্বাগত বক্তব্য রাখেন, স্থানীয় এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ এম.এ মালেক, পৌর আ’লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আলহাজ গোলাম কবির মোল্লা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শরিফুল ইসলাম, যশোমাধব মন্দির পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নন্দ গোপাল সেন এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডাক্তার শামীম রহমান, থানার অফিসার ইনচার্জ রিজাউল হক প্রমুখ। বক্তব্য শেষে উল্টো রথযাত্রা উদ্বোধন করেন স্থানীয় এমপি আলহাজ এম, এ মালেক। যাত্রাবাড়ী থেকে মাধব বিগ্রহসহ অন্য বিগ্রহগুলো নিয়ে রথের ওপর মূর্তিগুলো স্থাপন করা হয়। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে পুরোহিত উত্তম গাঙ্গুলি রথটানা ভক্তদের রশি প্রদান করেন। সন্ধ্যায় সাড়ে ৫টায় কড়া নিরাপত্তা মধ্য দিয়ে  ভক্তরা পাটের রশি ধরে টেনে শ্রী শ্রী যশোমাধবকে তার কথিত শ্বশুরালয় যাত্রাবাড়ী মন্দির থেকে রথখোলায় নিয়ে যান। এ সময় হাজার হাজার নারী-পুরুষ চিনি-কলা ছিটিয়ে যশোমাধবের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
আজ থেকে ২০ দিন ব্যাপী রথমেলা চলবে। এ মেলায় রয়েছেÑ কমলা সার্কাস, পুতুল নাচ, নাগর দোলা, কুটির শিল্প, কাঁসা-পিতল শিল্প, মৃৎশিল্প, ছোটদের খেলার সামগ্রী, শংকর ও মতিপালের প্রসিদ্ধ মিষ্টি সামগ্রী সমাহার এবং বিভিন্ন সামগ্রী।


 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন