ইনকিলাব ডেস্ক : নিউইয়র্ক টাইমস/সিবিএস নিউজের সর্বশেষ জনমত জরিপে ৬৯ শতাংশ আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণভাবে জাতি সম্পর্ক খারাপ বলে মত প্রকাশ করেছে। রডনি কিং ঘটনায় ১৯৯২ সালে লস এঞ্জেলেসে দাঙ্গার পর এটাই প্রথম সর্বোচ্চ বিরূপ মত প্রকাশ। খবর দি নিউইয়র্ক টাইমস।
ডালাসে ৫ পুলিশ হত্যার পরদিন ৮ জুলাই থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত পরিচালিত জনমত জরিপে দেখা যায়, প্রতি ১০ জন আমেরিকানের ৬ জন বলেছে, জাতি সম্পর্ক ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। এক বছর আগের চেয়ে এ সংখ্যা ৩৮ শতাংশ বেশি। প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে জাতিগত অসন্তোষ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং ১৯৯২ সালে কিংকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত লস এঞ্জেলেস পুলিশ অফিসারদের মুক্তি দেয়ার ফলে সৃষ্ট দাঙ্গার পর জাতিগত অসন্তোষ যে পর্যায়ে পৌঁছেছিল, বর্তমানে তা সে পর্যায়ে পৌঁছেছে। জনমত জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ ও পুলিশের মধ্যে সম্পর্ক এত তিক্ত হয়ে পড়েছে যে কৃষ্ণাঙ্গদের অর্ধেকেরও বেশিসংখ্যক বলেছেন, গত সপ্তাহে ডালাসে হামলায় ৫ জন পুলিশ অফিসার নিহত ও আরো হওয়ায় তারা বিস্মিত হননি। অন্যদিকে অর্ধেকেরও বেশি শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান বলেছেন যে তারাও এতে বিস্মিত হননি।
নিহত পুলিশ অফিসারদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামা জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাতিসমূহ আমরা যেমনটি মনে করি তেমন বিভক্ত নয়। কিন্তু জনমত জরিপে দেখা যায় যে, কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানরা জাতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন, বিশেষ করে আফ্রিকান-আমেরিকানদের প্রতি পুলিশের ব্যবহার বিষয়ে।
জাতি সম্পর্ক ভালো বলে মনে করেন এমন আমেরিকানদের সংখ্যা ২০০৯ সাল থেকে সার্বিকভাবে হ্রাস পেয়েছে। অধিকাংশ স্থানে পুলিশ শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে ভয়ংকর মাত্রায় শক্তি প্রয়োগ করে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিন-চতুর্থাংশ আফ্রিকান-আমেরিকান হ্যাঁ উত্তর দেন। অন্যদিকে শ্বেতাঙ্গদের অর্ধেক মাত্র এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। ৫৬ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান বলেন, পুলিশের শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে সন্দেহভাজনের জাতি পরিচয় পার্থক্য সৃষ্টি করে না। কিন্তু ১৮ শতাংশ মাত্র কৃষ্ণাঙ্গ এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
স্থানীয় পুলিশ বিভাগের দায়িত্ব পালন বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে ৫ জনের মধ্যে ৪ জন শ্বেতাঙ্গই চমৎকার বা ভালো বলে মন্তব্য করেন। অন্যদিকে অধিকাংশ কৃষ্ণাঙ্গ তা চলনসই বা খারাপ বলে মন্তব্য করেছেন। দু’পঞ্চমাংশেরও বেশি কৃষ্ণাঙ্গ বলেন, তাদের এলাকায় তারা নিরাপত্তার চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। তবে অধিকাংশ শ্বেতাঙ্গ ও হিস্পানিক বলেন, পুলিশের জন্য তারা নিরাপদ বোধ করেন।
কানসাস সিটিতে বসবাসকারিণী ২২ বছর বয়স্কা আয়েশা নুমান বলেন, আমি এমন এক পরিস্থিতিতে বাস করি যেখানে পুলিশ পরিস্থিতিকে ভালো করার পরিবর্তে খারাপ করে রেখেছে। এর অর্থ এ নয় যে তাদের সবাইকে খারাপ বলছি। তারা আমার চারপাশে যা করছে সে ব্যাপারে আমাকে সতর্ক থাকতে হবে।
৭ জুলাই ডালাসে কৃষ্ণাঙ্গদের বিক্ষোভ চলার সময় মিকা জনসন নামের এক সাবেক কৃষ্ণাঙ্গ সেনার গুলিতে ৫ শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার নিহত হন। গত সপ্তাহটি ছিল তিন বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের কারণে উত্তাল।
ব্ল্যাক লাইভস আন্দোলনের লক্ষ্য ও তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে বিরাট মতপার্থক্য রয়েছে। আফ্রিকান-আমেরিকানদের ৭০ শতাংশই এ আন্দোলনের প্রতি সহানভূতিশীল, শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ মাত্র তা সমর্থন করেন। সকল আমেরিকানের মধ্যে ৪১ শতাংশ আন্দোলনের উদ্দেশ্যের সাথে একমত, ২৫ শতাংশ একমত নন এবং ২৯ শতাংশ বলেছেন তাদের কোনো মতামত নেই।
ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনে প্রতি সমর্থন বয়সের সাথে সম্পৃক্ত। ৩০ বছরের চেয়ে কম বয়সী প্রাপ্ত বয়স্কদের ৫০ শতাংশ বলেছেন তারা এ আন্দোলনের সাথে একমত। ২০ শতাংশ একমত নন বলে জানান। যাদের বয়স ৪৫ ও তার বেশী তাদের ৩৬ শতাংশ আন্দোলনের সমর্থক, ২৯ শতাংশ সমর্থন করেন না।
ন্যাশনাল আরবান লীগের সভাপতি মার্ক মোরিয়াল বলেন, ব্ল্যাক লাইভস আন্দোলন তরুণ প্রজন্মকে নাগরিক অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার করেছে। তিনি বলেন, পুলিশ হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বৃহত্তর পরিস্থিতির সাথে যেসব বিষয় জড়িত তা হচ্ছেঃ ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে, আফ্রিকান-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চমাত্রায় বেকারত্ব, মন্দা থেকে মন্থর গতিতে উত্তরণ, ভোটদানের অধিকারের উপর হামলা এবং ভোটারদের দমন।
দেশব্যাপী টাইমস/সিবিএস নিউজ জনমত জরিপ পরিচালিত হয় ৮ থেকে ১২ জুলাই সেলফোন ও টেলিফোন মারফত। ১৬০০ প্রাপ্তবয়স্ক লোকের উপর জরিপ পরিচালিত হয় যার মধ্যে ১৭১ জন কৃষ্ণাঙ্গ ও ১২০৭ জন শ্বেতাঙ্গ জবাবদাতা ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন